সঙ্গীতা চৌধুরী:- ‘মিঠুন চক্রবর্তী অসুস্থতার পরেও অভিনয় করলেন শাস্ত্রীতে!’-আপনি একজন অভিনেতা হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে বিষয়টা দেখেছেন, আপনার অভিজ্ঞতা যদি একটু বলেন।
কোলাজ সেনগুপ্ত:- যেদিন উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, সেদিন আমাদের ময়দানে শ্যুট ছিল। সকাল থেকে কাজ করছি, দুপুরে হঠাৎ দুঃসংবাদটি এলো। উনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বভাবতই, সেদিন শ্যুট বন্ধ হয়। কিছুদিন বিরতিও থাকে। আবার দিন কয়েক পরে কাজ শুরু হলে, ওনার সঙ্গেই প্রথম সিন ছিল। সেদিনও উনি কলটাইমের আগে এসে পৌঁছেছিলেন। সারাক্ষণ শ্যুট করেছেন যেন দ্বিগুণ জীবনীশক্তি নিয়ে ফিরে এসেছেন। আমাদের ওনার থেকে প্রফেশনালজিমের সংজ্ঞা শেখা উচিত। ওনাকে দেখে বুঝতে পারছিলাম, উনি মাঝে মাঝে শট দিতে দিতে ক্লান্ত বোধ করছিলেন। কিন্তু সেই ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে, আবার মন দিচ্ছিলেন কাজে। আমি একদম ওনার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলাম, তাই মন দিয়ে উনার বডি ল্যাঙ্গোয়েজ দেখছিলাম। অসুস্থতার পরেও, একটি ৫/৬ পাতার দৃশ্য… উনি মিনিট কুড়ির মধ্যে কমপ্লিট দিয়েছিলেন। শট দিচ্ছেন, স্ক্রিপ্ট পড়ছেন, আবার শট দিচ্ছেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল, উনি নিজেই বোধহয় স্ক্রিপ্টটা লিখেছেন, তাই সমস্ত সংলাপ ওনার কন্ঠস্থ। মিঠুন চক্রবর্তী যা বলবেন সেটাই ডায়লগ! তাই বলে কিন্তু উল্টোপাল্টা বলছিলেন না। যেমন যেমন আছে তেমন তেমনই বলছিলেন। আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম! মিঠুন চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়িয়ে ওনাকে স্ক্রিপ্ট পড়তে দেখব, এই কথা আমি একমাস আগেও ভাবিনি। বিষয়টা হজম করতেই সময় লাগছিল। নেহাত একটানা চরিত্রটা ধরে রেখে অভিনয়টা করছিলাম তাই, না হলে পা কাঁপতো। মিন্টু বলেই পা কাঁপেনি, কোলাজ হলে অবধারিতভাবে কেঁপে যেত।
সঙ্গীতা চৌধুরী:- শাস্ত্রীর কোন চরিত্রটা আপনি করতে চাইবেন যদি চরিত্র অদল বদল করা হয় সেক্ষেত্রে?
কোলাজ সেনগুপ্ত:- আমাকে যদি সুযোগ দেওয়া হয়, আমি আমার চরিত্রটাই আরও বৃহত্তর পরিসরে করতে চাইব। মিন্টুর প্রস্তুতি নেওয়ার ক্ষেত্রে আমি অনেকটা সময় দিয়েছি। শাস্ত্রীর সব কটি চরিত্রের মধ্যে, ওই চরিত্রটাই আমার সব চাইতে কাছের। একসঙ্গে বসবাস করেছে। সুতরাং, তাকে আমি খুব ভালো করে চিনি। এমন যদি হত, এই সিনেমাটা আবার তৈরি হবে, এবং এইবার ছবিটার সময়সীমা ৬ ঘন্টা, তাহলে আমি চাইব মিন্টুর বড় হয়ে ওঠা, দলমতে জড়িয়ে পড়া, ধর্মান্ধতা, মোটা মাথা তৈরি হওয়ার পিছনের গল্পটা দেখানো হোক। তার সঙ্গে রমেনদার (রজতাভ দত্ত) আলাপ কবে, কোথায়, কীভাবে এই চরিত্রটার ক্রাইসিস কী কী, কীভাবে সে বড় হয়েছে, এসব দেখানো হোক। এই উত্তরগুলো সব আমি জানি। প্রত্যেকটি গল্প আমার ডায়রিতে লেখা আছে। মিন্টুর বড় হয়ে ওঠা লেখা আছে। এটা আমার একটা অভ্যাস। যে কোনও চরিত্রের ক্ষেত্রেই প্রচুর লেখাপড়া করি। তারপরে সেখান থেকে ছেঁকে নিয়ে, প্রয়োজনীয়টুকু ক্যামেরার সামনে দিই। তাছাড়া আমি মনে করি অভিনেতার কাজ হল ফিলট্রেশন। চরিত্র ছোট বড় হয় না, অভিনেতা ছোট বড় হয়। এমন কোনও চরিত্র নেই যার কিচ্ছু করার থাকে না। তাহলে সেই চরিত্রটি সিনেমাতে থাকতই না।