নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় “ফনী”। এর মধ্যে আবহাওয়া দপ্তরের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে গত চার দশকে যতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে তার মধ্যে সবথেকে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিধ্বস্ত ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল ঝড় ও বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ওড়িশায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। ওড়িশা-অন্ধ্রপ্রদেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি। প্রবল বৃষ্টিতে স্বাভাবিক জনজীবন সম্পূর্ণ ভাবে বিপর্যস্ত। তবে এখানেই শেষ নয়, শুক্রবার বিকেল থেকে এই প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনী উড়িষ্যা উপকূল হয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। পূর্বাভাস অনুযায়ী তখনও ফনীর গতিবেগ খুব একটা কম থাকবে না। উড়িষ্যা উপকূলে আছড়ে পড়ার পর এই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কিছুটা শক্তিক্ষয় হলেও এই অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় তার প্রবল শক্তি নিয়েই গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল এবং আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস যদি সত্যি হয় এবং শেষমুহূর্তে ঘূর্নিঝড়ের গত্রিবেগে বড়সড় রদবদল না হয় তাহলে শুক্রবার রাত থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ফনীর দাপট লক্ষ্য করা যাবে। পূর্বাভাস অনুযায়ী দুই মেদিনীপুর, নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া সহ বিভিন্ন জেলায় চূড়ান্ত সর্তকতা জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে, নবান্নে চালু করা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। গত দু’দিনে ঘূর্ণিঝড় ফনীর আশঙ্কাবার্তা পাওয়ার পর থেকেই কলকাতার বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপনী বোর্ড থেকে শুরু করে সমস্ত বড় বড় হোর্ডিং খুলে ফেলা হয়েছে। প্রবল ঝড়ে বড় বড় গাছ এবং বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য সিইএসসি এর তরফ এ আগাম সর্তকতা নেওয়া হয়েছে কলকাতা শহরজুড়ে। পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব শুরু হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন বিদ্যুৎ বণ্টনকারী সংস্থাগুলিকে। তার জেরে সকাল থেকেই দফায় দফায় বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে ডিপিএল ও ডিভিসির তরফে। ইতিমধ্যেই দুর্যোগের আশঙ্কায় পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সুন্দরবনের মতো বিভিন্ন নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ এবং গবাদি পশু সকলকেই নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তাসত্ত্বেও আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না সুন্দরবন এলাকার মানুষের। কারণ এমনিতেই দীর্ঘদিনের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সুন্দরবনের নদী বাঁধগুলি বিপর্যস্ত, তার ওপরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃষ্টির জেরে নদীর জল ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এরকম পরিস্থিতিতে যে কোন সময় নদী বাঁধগুলি ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন সুন্দরবন এলাকার বাসিন্দারা। এইমুহূর্তে উড়িষ্যা উপকূলে তান্ডব চালালেও পশ্চিমবঙ্গে তার প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে। কোনও কোনও জেলায় বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। কলকাতাতেও ঝড়-বৃষ্টি চলছে পুরোদমে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের জন্য কলকাতায় পুলিশের বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত চালু থাকবে এই কন্ট্রোল রুম। যেকোনো জরুরি অবস্থায় ফোন করুন ( ০৩৩-২২১৪৩০২৪/ ২২১৪-৩২৩০/২২১৪-১৩১০)। জানাতে পারেন ১০০ ডায়াল করেও। বিশেষ হেল্পলাইন-৯৪৩২৬১০৪৪৪। কলকাতার পাশাপাশি বাঁকুড়া জেলার হেল্পলাইন হল – ১৮০০১২৩৭৮৯৮, পুলিশের নং – ৭৭৯৭১১১০০৬০ / ১০০।