সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (তারকেশ্বর): নবরাত্রিতে দেবীর নয়টি রূপের প্রকাশ ও আরাধনা হয় কিন্তু দেবী দশভূজা!কেন এমনটা হয় একবারও ভেবে দেখেছেন কী? এই প্রসঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম জ্যোতিষ গবেষক, জ্যোতিষ শিক্ষক শ্রী দেব অয়নের সাথে। তিনি এই প্রসঙ্গে বলেন যে, দেবীর নয়টি হাত নয়টি রূপের প্রতীক। দেবীর এই নয় রূপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,যখন দেবতাদের বাসভূমিতেই ঘোর কলিকাল, তখনই প্রয়োজন হয়ে ছিলো আদ্যাশক্তি জগন্মাতা মহামায়ার। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে যে দেবীপক্ষের সূচনা হয় তার ৯দিন দেবীর নবরূপের আরাধনা করা হয়। কী সেই রূপগুলি? প্রথমাতে দেবী শৈলপূত্রী। শৈল অর্থে পর্বত শিখর আর পূত্রী হলো কন্যা। প্রসঙ্গত দেবী শৈলরাজ হিমালয়ের গৃহে জন্ম লাভ করেন।
দ্বিতীয়াতে দেবী ব্রহ্মচারীনি।যিনি জন্ম ইস্তক শক্তির একনিষ্ঠ সাধক।পার্থিব সব বিলাস পরিত্যাগ করে যিনি কঠোর ব্রহ্মচর্য পালন করে চলেছেন পরম পুরুষ দেবাদিদেব মহাদেবের কৃপা লাভের আশায়।
তৃতীয়াতে দেবী চন্দ্রঘণ্টা।যিনি শিবের ললাট স্থিত চন্দ্র কে ধারণ করেছেন। অপরদিকে যার হস্তের ঘণ্টা যা কিনা দেবরাজ ইন্দ্র প্রদত্ত ঐরাবতের সম্পদ দিকে দিকে অশুভ শক্তিকে বিনাশের ঘণ্টা ধ্বনি দেয়।
চতুর্থীতে দেবী কুষ্মান্ডা।কু হলো পৃথিবী এবং উষ্ণ হল তাপ।এখানে তাপ অর্থে ত্রিতাপ যা দেব দানব সবাইকে জ্বালা দেয়।দেবী এই ত্রিতাপ কে নিজের ধারণ করে সবার মুক্তি ঘটান।
পঞ্চমীতে দেবী স্কন্দমাতা যিনি তারকাসুরকে বধ করেন।স্কন্দ হলো দেব সেনাপতি কার্তিক যিনি দেবীর পুত্র ও বটে। মহাবলী তারকাসুর যখন শিশু কার্তিককে বধ করতে উদ্যত হন তখন দেবী তার আদিরূপ ধারণ করে তাকে হত্যা করেন।
ষষ্ঠীতে দেবী কাত্যায়নী।দেবতাকুল স্বর্গরাজ্য হারিয়ে ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে আশ্রয় নেন।তখনই তারা দেবীর সৃষ্টি সংকল্প করেন বলেই দেবীর এই নাম। দেবী বালাসুর বধকারিনী।
সপ্তমীতে দেবী কালরাত্রি।কাল অর্থে সময়।দেবীর তেজ তার দীপ্তি সর্ব কালকে ছাপিয়ে তার প্রাবলের বিস্তার ঘটায়।দেবী শুম্ভ নিশুম্ভের নাশকারী। এইভাবে একের পর এক অশুভের বিনাশ ঘটিয়ে অষ্টমীতে দেবী মহাগৌরী।যিনি স্বর্গ মর্ত্য পাতাল ত্রিলোকে পূজিতা হন।
নবমীতে দেবী সিদ্ধিদাত্রী।যিনি কঠোরতম সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছেন।যার পূজা করলে সকল কার্যে সিদ্ধিলাভ হয়।পর্বে পর্বে যিনি শক্তির অধিকারী তিনিই পার্বতী।
এখন প্রশ্ন হলো দেবীর ১০টি হাতের প্রতিটি হাত একটি করে শক্তির প্রতীক হলে ১০ম হাতটি কিসের প্রতীক, কেনই বা দেবী নবভূজা না হয়ে দশভূজা? এই প্রসঙ্গে জ্যোতিষ শ্রীদেব অয়ন বলেন, “৯ অর্থে নবগ্রহ।অপরদিকে ৯ সংখ্যা সবচেয়ে শক্তিশালী গ্রহ মঙ্গলের প্রতীক।১০ সংখ্যার ‘০’ হল অনন্ত ব্রহ্ম যা সীমাহীন। আর ১ হল শক্তি যার নিত্যতা অবিনশ্বর।তাকে নতুন রূপে সৃষ্টি বা ধ্বংস কিছুই করা যায়না।১ সংখ্যা সূর্যের প্রতীক।যার শক্তিরূপী আলোতে গ্রহরাজি চলমান তথা প্রাণরসে স্পন্দিত।৯ পেরিয়ে ১০ অর্থাৎ সাধনায় শক্তি সঞ্চয় করেই তবে বিপুল শক্তির আধার নিজের অভ্যন্তরে লাভ পরিভাষায় “ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তি রুপেন সংস্থিতা…….”