মনোজ সিংহ, আসানসোল: ঝড়ের পূর্বাভাস শাসক দলে? দলের জেলা সভাপতিদের বাইপাস করে হঠাৎ করে তৃণমূল কংগ্রেস কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে? একি কোন পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নাকি নিছকই বাজার গরম করতে কয়েকজন বিধায়কের কৌশল, নাকি আবার নির্দিষ্ট কয়েকজন জেলা সভাপতিকে কায়দা করে চাপে রাখার চেষ্টা দলেরই একাংশের।
শনিবার সোস্যাল নেটওয়ার্কে দলের একটি লিস্ট লিক হয়ে যায়। যাতে দেখা গেছে, শাসক দলের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকা সংক্রান্ত আলাদা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে, যা নিয়ে বিস্তর ধন্দ শাসকের জেলার অন্দরে।
বিগত কয়েক মাস যাবত পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সভাপতিকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই শাসকদলের তরফ থেকে বিভিন্ন রকম আফোয়া ছড়িয়েছে যার মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে দলের জেলা সভাপতি বদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন কৌশলে। তবে সূর্য কিন্তু পশ্চিমে নয় নিয়মিত উড়ছে সেই পূর্ব কোণেতেই। যা নিয়ে এই জেলার পশ্চিম অংশ আসানসোলের কিছু কিছু নেতা-নেত্রীর গোঁসা চাপা থাকেনি। তারা বারে বারেই বলে এসেছেন – ‘সভাপতি বদল তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব পশ্চিম বর্ধমানে দলের বিশৃঙ্খলা, উৎশৃংখল অবস্থার জন্য সভাপতির দায়সারা কাজকর্মকেই দায়ী মনে করছেন।’ কেউ কেউ আবার বলে বসছেন, ‘সভাপতি ভাল মানুষ। কিন্তু ওনার অসুস্থ শরীর আর ওনাকে সবসময় ঘিরে বসে থাকা দু চারজন অনুচরের নানান রকম কাজ কারবারের জন্যই যেমন দল অন্তপ্রাণ কর্মী তেমনি আবার দলের বরিষ্ঠ নেতৃত্বের একাংশ বেজায় বিরক্ত।’ এত শত মতামতে সময়ে সময়ে বাজার গরম হলেও, দলের রাজপাট কিন্তু সামনে সামলে যাচ্ছেন সেই বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীই। তার কোন হেরফের হয়নি। শনিবার রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস বাংলার সমস্ত জেলাগুলির জন্য বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি জোর কদমে শুরু করে দিল। তার ফলস্বরূপ জেলায় জেলায় ভোটার তালিকা সংযোজন ও বিয়োজনের কাজে তীক্ষ্ণ নজরদারির জন্য একেক জেলায় একেক জনের নেতৃত্বে নাকি কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। এরকমই একটি তালিকা দিনভর সমাজমাধ্যমে ঘোরাফেরা করেছে। ঐ তালিকা মোতাবেক, প্রায় সব জেলাতেই দলের জেলা সভাপতিদেরকেই এই কাজের সর্বাধিনায়ক করা হলো। কিন্তু পাশের জেলা বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলা সভাপতিদের কাঁধে এই বাড়তি দায়িত্ব চাপানো হয়নি। পশ্চিম বর্ধমানের জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বর্ষিয়ান প্রদেশ স্তরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ভি শিবদাসনকে। শনিবার সন্ধ্যায় নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর শিবদাসান টানা সাড়ে ১৬ মিনিটের একটি ফেসবুক লাইভ করে চাঁচাছোলা ভাষায় রামনবমীর প্রস্তুতির প্রাক্কালে রাজ্য বিজেপিকে আক্রমণ করলেন। এদিন তিনি বললেন, “ওরা লাগাতার সর্বত্র আমাদের এই রাজ্যকে ছোট দেখানোর চেষ্টা করছে। রাজ্যের মানুষকে অপমান করছে, বঞ্চিত করছে। দিল্লিতে বসে থাকা ওদের মহাপ্রভুদের কাছে গিয়ে এখানকার নেতারা হপ্তায় হপ্তায় এ রাজ্যের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র করছে। আর এখানকার সিপিএম ওদের বি টিম হয়ে কাজ করছে। ওদের লজ্জা হওয়া দরকার।”
রাজ্যজুড়ে ভুতুড়ে ভোটার ধরার অভিযানে নেমে তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলা থেকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, জম্বু কাশ্মীর, এমনকি ভিনদেশী ভোটার মূলত: বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকদের প্রমাণ সহ চিহ্নিত করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের এই অভিযানের পর রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব বুঝে যান যে সর্ষের ভেতরেই অনেক ভূত ঢুকে আছে। তাই কি এবার আরও গুছিয়ে কোমর বেঁধে নামতে চাইছে দল?
সেই কারণেই সম্ভবতঃ এবার জেলায় জেলায় পৃথক সেলের মতো করে শুধুমাত্র নির্বাচন সংক্রান্ত ভোটার তালিকা সংযোজন ও সংশোধন, বিয়োজনের কাজটি দেখার জন্য সহযোগী আলাদা টিম তৈরি করতে চাইছে শাসক দল। এই জেলায় সেই কমিটি শিবদাসনের নেতৃত্বে পরিচালনা করবে তৃণমূল কংগ্রেস। শনিবার এ প্রসঙ্গে নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিবদাসান তার আসানসোলের দপ্তরে বসে বলেন, “আমি সকাল সন্ধ্যা দলটাই করি। তাই দলের যখন যে কাজ দেবে তা আমাকে ঠিকভাবে পালন করতেই হবে। আমি আর অন্য কথা কিছুই বুঝিনা। কেন জেলা সভাপতির বাইরে তাকে এমন দায়িত্ব দেওয়া হল তা জানতে চাইলে উনি বলেন, “কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে বেছে নেওয়ার কোন ব্যাপার নেই। এই জেলার মানচিত্রটা আলাদা রকম এখানে দলের কাজের চাপ অন্যরকম। তাই দল যা ঠিক করবে সেটা পালন করাটাই আমাদের ধর্ম।”
এদিকে এ প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী শনিবার রাত্রে বলেন, “দল বড় হয়েছে,। অনেক কাজ এখন। হতেই পারে কোনো সেল তৈরি হবে হয়তো। তবে এ ব্যাপারে এখনো আমার কাছে কোন বার্তা আসেনি।”






