eaibanglai
Homeএই বাংলায়আজ ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস,ফাঁসির আগে করেছিলেন বিষ্ময়কর প্রশ্ন

আজ ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস,ফাঁসির আগে করেছিলেন বিষ্ময়কর প্রশ্ন

এইবাংলায় ওয়েব ডেস্কঃ– হাসতে হাসতে ফাঁসিতে চড়েছিলেন। কিশোর বয়সে দেশের জন্য আত্মবলিদান করেছিলেন। তিনিই দেশের সর্বকনিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী। ফাঁসির সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর, ৭ মাস ১১ দিন। আজ সেই ১১ আগস্ট, সেই মহান বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর আত্মবলিদান দিবস। কিশোর ক্ষুদিরামের এই আত্মবলিদান সেই সময় পরাধীন ভারতে দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।

১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর পশ্চিম বঙ্গের মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষুদিরাম বসু। তাঁর পিতা ত্রৈলকানাথ বসু ছিলেন শহরে আয় এজেন্ট। তাঁর মা লক্ষীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর ক্ষুদিরাম চতুর্থ সন্তান। লক্ষীপ্রিয়াদেবীর পর পর দুই সদ্যোজাত পুত্র সন্তানের মৃত্যু হয়। তাই ক্ষুদিরামের মৃত্যুর আশঙ্কায় লক্ষীপ্রিয়াদেবী তাঁর পুত্রকে তার বড় বোনের কাছে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে ক্রয়কৃত শিশুটির নাম পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম রাখা হয়। অল্প বয়সেই পিতা মাতার মৃত্যুর পর ক্ষুদিরাম তার বড় বোনের কাছে থেকেই মানুষ হন। তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল এবং মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে শিক্ষালাভ করেন তিনি। নবম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর স্কুল ছেড়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দেন কিশোর ক্ষুদিরাম। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কথিত আছে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ার পর এক বছরের মধ্যে ক্ষুদিরাম বোমা প্রস্তুত ও নিক্ষেপ করতে শিখেছিল। ক্ষুদিরামের বয়স যখন ১৬ বছর,তখন ব্রিটিশবিরোধী পুস্তিকা বিতরণের জন্য ইংরেজ পুলিশের হাতে আটক হন ও থানার কাছে বোমা ছোঁড়েন। বিখ্যাত অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন ক্ষুদিরাম। আরেক বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকিকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষুদিরাম বসু ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল মুজাফ্ফরপুরে ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন তাঁরা। কিন্তু হিসেবের গড়মিলে সেই প্রয়াস ব্যর্থ হয়। কারণ যে গাড়িটি লক্ষ্য করে তাঁরা বোমা ছোঁড়েন তাতে ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড ছিলেন না, ছিলেন দুই ব্রিটিশ মহিলা মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা। দুই মহিলারই মৃত্যু হয়। এরপরেই প্রফুল্ল চাকি গ্রেফতার হওয়ার আগেই আত্মহত্যা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন ক্ষুদিরাম বসু। বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয় এবং তিনি হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯০৮ সালের ১১ আগষ্ট ভোর ৬টায় মুজঃফরপুর জেলে ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১০ আগস্ট আইনজীবী সতীশ চন্দ্র চক্রবর্তীকে ক্ষুদিরাম বলেছিলেন, “রাজপুত নারীরা যেমন নির্ভয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়া জওহরব্রত পালন করিত, তিনিও তেমন নির্ভয়ে দেশের জন্য প্রাণ দেবেন।” ১১ই আগস্ট ক্ষুদিরাম তাঁর ফাঁসির আগে চতুর্ভুজার প্রসাদ খেয়ে বধ্যভূমিতে যেতে চেয়েছিলেন। আর ফাঁসির আগে ক্ষুদিরামের শেষ ইচ্ছা ছিল বোমা তৈরির বিদ্যা ভারতের অন্যান্য যুবকদের শিখিয়ে যাওয়া। তবে ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে গলায় ফাঁসির দড়ি পরে অদ্ভুদ এক প্রশ্ন করেন কিশোর ক্ষুদিরাম। ফাঁসির দড়িতে মোম দেওয়া হয় কেন?এটাই ছিল বীর শহিদের জীবনের শেষ কথা। জল্লাদ বিস্ময়ে কিছু বলতে পারেননি। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ জেলার থেকে উপস্থিত সকলে।

তাঁর ফাঁসির খবরে কলকাতার অমৃতবাজার পত্রিকায় (১২ অগাষ্ট১৯০৮) লেখা হয় “মুজঃফরপুর ১১ই আগষ্ট, অদ্য ভোর ছয় ঘটিকার সময় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হইয়া গিয়াছে। ক্ষুদিরাম দৃঢ় -পদক্ষেপে প্রফুল্ল চিত্তে ফাঁসির মঞ্চের দিকে অগ্রসর হয়। এমনকি যখন তাহার মাথার উপর টুপিটা টানিয়া দেওয়া হইল, তখনো সে হাসিতেছিল।”

তাঁর ফাঁসির সাজা ঘোষণার পর বাঁকুড়ার কবি পিতাম্বর দাস গান রচনা করেছিলেন ‘একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি, হাসি হাসি পরবো ফাঁসি দেখবে জগৎবাসী’। এই গান স্বদেশী আন্দোলনকারীদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। আজও এই গান শহীদ কিশোর ক্ষুদিরাম বসুর সঙ্গে অমর হয়ে রয়েছে দেশবাসীর মনে প্রাণে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments