নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ কংক্রিট, সবুজ, শিল্প, কারখানা সবকিছু কে নিয়ে ডঃ বিধান চন্দ্র রায় এর হাত ধরে গড়ে উঠেছিল সুন্দর এই দুর্গাপুর শহর । বিশ্বের দরবারে স্টিল সিটি হিসেবে আজও এক ডাকে সবাই চেনে আমাদের এই শিল্প শহর দুর্গাপুর কে । দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট । সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই স্টিল প্লান্ট শুধু গড়ে ওঠেনি ধীরে ধীরে ছোট্ট সেই চারা গাছ আজ বিশাল এক মহীরুহের রূপ নিয়েছে । দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় এবং উদ্যোগে দিনের পর দিন সেজে উঠেছে স্টিল সিটি দূর্গাপুর । সেরকম ভাবেই দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট কর্তৃপক্ষের বদান্যতায় দুর্গাপুরে গড়ে ওঠে কুমার মঙ্গলম পার্ক। পরিকল্পনা ছিল স্টিল প্লান্ট এ কর্মরত কর্মীদের অবসর সময় এবং তাদের পরিবার ও সন্তানদের মনোরঞ্জনের জন্য এক বিশাল উদ্যান গড়ে তোলা। বাস্তবে হয়েছিল তাই। ডিএসপি কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কথা মাথায় রেখে আশির দশকে গড়ে ওঠে দুর্গাপুরের কুমার মঙ্গলম পার্ক । সবুজে ঘেরা বিশাল এই পার্কের ভেতরে ছোটদের জন্য নানান খেলাধুলার ব্যবস্থা , জলাশয়, বসার জায়গা গড়ে তোলা হয়েছিল । কিন্তু বর্তমানে এই কুমারমঙ্গলম পার্ক আর শুধুমাত্র ডিএসপি কর্মীদের জন্যই সীমাবদ্ধ নেই । কারণ বাণিজ্যিকরণ এর কথা মাথায় রেখে বেশ কয়েক বছর আগেই কুমার মঙ্গলম পার্ক বাণিজ্যের জন্য ডিএসপি কর্তৃপক্ষের তরফে হস্তান্তর করা হয় । আর সেই থেকেই শুরু কুমার মঙ্গলম পার্কের নতুন ভাবে পথ চলা । বিশাল জায়গা জুড়ে বিস্তারিত এই পার্ক বর্তমানে এক ব্যক্তিগত সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন। পার্কের বাণিজ্যিকরণ এর প্রথম দিকে পার্কের উন্নতির দিকে নজর দেওয়া হলেও প্রাচীন এই পার্কের বর্তমান পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয় । যার প্রধান কারণ ডিএসপি কর্তৃপক্ষ এবং পার্কের বর্তমান মালিকানাধীন কর্তৃপক্ষের দীর্ঘ টানাপোড়েন। ডিএসপি কতৃপক্ষের দীর্ঘদিনের অভিযোগ পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের কথা মত দিনের পর দিন পার্ক চালিয়ে গেলেও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল এবং জলের টাকা ছাড়াও লিজের নির্ধারিত বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। বছরের পর বছর পার্ক কর্তৃপক্ষ টাকা না দেওয়ায় একদিকে যেমন ডিএসপি আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তেমনি লাভবান হচ্ছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। ডিএসপির দাবি প্রত্যেকদিন পার্কে ঘুরতে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মাথাপিছু পার্ক কর্তৃপক্ষ কুড়ি টাকা করে আদায় করছেন। প্রত্যেক মাসে কুমার মঙ্গলম পার্ক থেকে পার্ক কর্তৃপক্ষ কয়েক লক্ষ টাকা রোজগার করলেও ডিএসপি বকেয়া প্রায় কয়েক কোটি টাকা কোনভাবেই মেটাচ্ছে না কতৃপক্ষ। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কুমার মঙ্গলম পার্কের বিদ্যুতের লাইন এবং জল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে ডিএসপি । আর এর ফলেই ঐতিহ্যবাহী এই পার্কের ভেতরে এক সময় যেখানে বোটিং, ওয়াটার স্পোর্টসের মত বিভিন্ন মনোরঞ্জন ব্যস্ত থাকতেন দুর্গাপুরবাসী, বর্তমানে সেই পার্কের বিশাল জলাশয়ের জল শুকিয়ে চৌচির হয়ে গিয়েছে। একদিকে তীব্র গরমে নাজেহাল দুর্গাপুর, অন্যদিকে ডিএসপির জল বন্ধ করে দেওয়ায় ওই পার্কে জল সরবরাহের মাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তীব্র জলের সংকট ভুগছে দুর্গাপুরের ঐতিহ্য কুমার মঙ্গল পার্ক। এও শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই পার্ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি পথে হটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। ফলে আপাতত আশির দশকের এই পার্কের ভবিষ্যৎ অথৈ জলে। এই কুমার মঙ্গলম পার্কে নিয়ে গত কয়েক বছরে দুর্গাপুর বাসের মনে ক্রমে ক্ষোভ জমা হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ, এক সময় ছিল যখন এই পার্কে স্টীল টাউনশিপ এর সমস্ত ছোট, বড়, শিশু এবং বয়স্ক লোকেরা নিজেদের অবসর সময় কাটাতে আসতেন। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার হাতে এই পার্কের হস্তান্তর হওয়ার পর থেকেই পার্কের পরিবেশ পরিবর্তিত হতে শুরু করে। বর্তমানে শহর বাসের অভিযোগ, কুমার মঙ্গলম পার্কে বর্তমানে পরিবার নিয়ে যাওয়ার জো নেই। যার অন্যতম কারণ বর্তমানে এই পার্কের বেশিরভাগটাই যুবক যুবতীদের বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের বিনোদনের জায়গা হয়ে উঠেছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন পার্কের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন যুবক যুবতীদের প্রেম আলাপ এর দায়ে পরিবার নিয়ে ঘোড়া দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। কিন্তু পার্ক কর্তৃপক্ষ তাদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় এই সমস্ত কম বয়সী যুবক যুবতীদের পার্কের অভ্যান্তরে খুল্লামখুল্লা প্রেম আলাপের অবাধ অধিকার দিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে বাড়ির শিশুদের নিয়ে পার্কে সময় কাটানো দুর্গাপুর বাসীর কাছে স্বপ্নই থেকে গেছে। একদিকে কুমার মঙ্গলম পার্ক থেকে সাধারণ মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আর অন্যদিকে ডিএসপি কতৃপক্ষ এবং বর্তমান পার্ক কর্তৃপক্ষের আইনি জটিলতার মাঝে পড়ে আশির দশকের দুর্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী কুমার মঙ্গলম পার্কের ভবিষ্যৎ আজ সংকটের মুখে।