eaibanglai
Homeদক্ষিণ বাংলাপ্রমাণ লোপাট করতেই কী দীপঙ্করের দেহ ফেলা হয়েছিল মানকর স্টেশনে ? উঠছে...

প্রমাণ লোপাট করতেই কী দীপঙ্করের দেহ ফেলা হয়েছিল মানকর স্টেশনে ? উঠছে প্রশ্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি, পানাগড়ঃ এই বাংলায় নিউজ পোর্টালের খবরের জের। দুর্গাপুরের মানকর স্টেশনের ফুটব্রিজের নিচে নর্দমা থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের পরিচয় মিললো এক সপ্তাহ পরে। সেইসঙ্গে খুলে দিয়ে গেল দুর্গাপুরের বুকে বেসরকারি কারখানাগুলির মালিকদের মনুষ্যত্বহীনতার কালো মুখোশও। ঘটনার সুত্রপাত ৭ই নভেম্বর। দুর্গাপুরের মানকর স্টেশনের ফুটব্রিজের নিচে নর্দমার মধ্যে এক অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের নগ্ন দেহ পড়ে থাকতে দেখেন নিত্যযাত্রীরা। সঙ্গে সঙ্গে তারা রেল পুলিশে খবর দিলে দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই দেহ উদ্ধারের খবর গত ৭ই নভেম্বর প্রকাশিত হয় আমাদেরই ওয়েব পোর্টাল এই বাংলায়।

এই ঘটনার পর ১২ই নভেম্বর সোশ্যাল সাইটে অজ্ঞাতপরিচয় যুবকের দেহ উদ্ধারের খবর পড়ার পর এক ব্যক্তি টেলিফোন মারফৎ আমাদের ওয়েব পোর্টালের চিফ এডিটরকে ফোন করে দেহ উদ্ধারের ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। তিনি জানান, তার এক নিকট আত্মীয় দীপঙ্কর দেবনাথ দুর্গাপুরের গ্রাফাইট কারখানায় স্থায়ী শ্রমিকের কাজ করত। কিন্তু গত ৬ই নভেম্বর ডিউটি যাওয়ার পর থেকে সে আর বাড়ি ফেরেনি। সেইমতো এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালের চিফ এডিটর তাঁকে এই খবর সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত করার পাশাপাশি বুদবুদ থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা জানান। দীপঙ্করের পরিবারের সদস্যরা বুদবুদ থানা ও পানাগড় জিআরপিতে যোগাযোগ করেন। মৃত দীপঙ্করের বাড়ির সদস্যরা বুদবুদ ও পানাগড় থানার পর গিয়ে পৌঁছান বর্ধমান জিআরপি থানাতে এবং তখনই তারা জানতে পারেন যে মৃতদেহটি তাদেরই পরিবারের সদস্য দীপঙ্কর দেবনাথের। দুর্গাপুরের সগড়ভাঙ্গার শশাঙ্কপল্লী এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন দীপঙ্কর। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গ্রাফাইট কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি।

তার দাদার বয়ান অনুযায়ী, গত ৬ই নভেম্বর ওই কারখানায় দুপুরে ডিউটিতে যোগ দিয়েছিল দীপঙ্কর। বাইক চালিয়ে কারখানায় ঢোকার সেই ছবি কারখানার বাইরে সিসিটিভি ফুটেজ থেকেও উদ্ধার হয়েছে। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ দীপঙ্কর একবার শুধু চা খাওয়ার জন্য বাইরে বেরিয়েছিল। তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায় নি। যদিও কারখানার ভেতর থেকেই তার বাইক ও ডিউটির জুতো উদ্ধার করেছে পুলিশ। এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাদের বক্তব্য, কি এমন দরকার পড়লো দীপঙ্করের, যে সেই রাতে তাকে খালি পায়ে বাইক রেখেই কারখানার বাইরে বেরিয়ে যেতে হল? যদিও দীপঙ্করের কারখানা থেকে বেরনোর কোনও ফুটেজ সিসিটিভি থেকে পাওয়া যায় নি। তাহলে কী করে কারখানা থেকে রাতারাতি জলজ্যান্ত একটা মানুষের দেহ মানকর স্টেশনে পৌছালো? নাকি কারখানার ভেতরেই কোনও দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পরে তার দেহ লোপাট করতেই তার পরিচয় গোপন করতে তাকে নগ্ন করে কারখানা থেকে এতদূরে মানকর স্টেশনের নর্দমায় ফেলে আসা হল।

এলাকাবাসীদের বক্তব্য, যেকোনো কারখানায় ডিউটি চলাকালীন দুর্ঘটনা কিংবা কোনও কারণবশত শ্রমিকের মৃত্যু হলে কারখানার কর্তপক্ষের তরফে তার পরিবারকে ১৫ লক্ষ টাকা নগদ ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরিতে নিযুক্ত করতে হয়। তাদের আরও দাবি, নিশ্চয়ই ৬ই নভেম্বর রাতে কাজ চলাকালীন দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল দীপঙ্কর। সম্ভবত এরপরেই কারখানা কর্তপক্ষ দীপঙ্করের দেহ কোনও ছোট গাড়িতে তুলে কারখানা থেকে দূরে মানকর স্টেশনে ফেলে দিয়ে আসে বলে অভিযোগ। তাদের এই যুক্তিকে আরও জোড়ালো ও পোক্ত করতে তারা দাবি করেন, উক্ত ঘটনার রাতের ভিডিও ফুটেজ খতিয়ে দেখে যেসব গাড়ি ওইদিন রাতে কারখানা থেকে বাইরে বেরিয়েছে তাদের চালক ও গাড়ির যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ঘটনার সত্যতা পরিষ্কার হয়ে যাবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত দীপঙ্করের পায়ে ও মাথার পেছনে গভীর ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে (মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার সময়কার ভিডিও ফুটেজ দেওয়া রইল)। দীপঙ্করের দাদার বয়ান থেকে জানা গেছে, আগামী ২৪শে নভেম্বর বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার। তাই এই কারখানার কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজের ব্যবসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দীপঙ্কর। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। আক্ষেপ যাচ্ছে না পরিবারের। এরমধ্যেই পরিবারের সদস্যরা দীপঙ্করের মৃতদেহ এখনই সৎকার করতে অস্বীকার করেন। তাদের বক্তব্য, যতক্ষণ না ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মৃতদেহ সৎকার করবেন না।

তাদের পরিবারের সদস্যরা এও অভিযোগ করেন, বর্ধমান জিআরপি থানায় এই মর্মে লিখিত দিতে গেলে থানার আধিকারিক তা নিতে অস্বীকার করেন ও বলেন আপনারা নিজের এলাকার থানায় গিয়ে এই অভিযোগপত্র জমা দিন। এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যরা একযোগে এই ঘটনার উচ্চপর্যায়ে তদন্ত ও ঘটনার সত্যতা প্রকাশের জন্য নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের কাছে। চ্যানেল এই বাংলায় ওয়েব পোর্টাল বরাবরের মতো এবারেও তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছে ও ভবিষ্যতেও হাজার বাধা-বিপত্তির মধ্যেও সাধারণ পশ্চিমবঙ্গবাসীর পাশে থাকার যে অঙ্গীকার নিয়েছিল তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments