নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ ডেভিড হেয়ারের ১০ নং স্ট্রীটের মাথায় গ্যারেজে গাড়ির মধ্যে থেকে এক মাঝবয়সী মহিলা ও এক তরুণের মৃতদেহ উদ্ধার হল বুধবার মধ্যরাতে। ঘটনাটি ঘটেছে দুর্গাপুরের ইস্পাত নগরীর বি-জোনের ডেভিড হেয়ার রোড এলাকায়। জানা গেছে, ১০/৩৬, ডেভিড হেয়ারের নিবাসী কৌশিক গোস্বামী (২৫) ও ডেভিড হেয়ারের ৪নং স্ট্রীটের বাসিন্দা কাবেরী ভট্টাচার্যের(৪২) মৃতদেহ গ্যারেজে থাকা সুইফট ডিজায়ার গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার হয়েছে। জানা গেছে কৌশিক গোস্বামীর পিতা কানু গোস্বামী ফুসফুসজনিত শারীরিক অসুস্থতার কারণে বছর দুয়েক আগে ইস্পাত কারখানা থেকে অবসর নেন এবং তার জায়গায় তার একমাত্র পুত্র কৌশিক গোস্বামীকে আট মাস আগে ইস্পাত কারখানায় কাজে নিয়োগ করেন। এও জানা যায় বছর দেড়েক আগে কৌশিকের মা সকাল বেলায় পুজো করার সময় ব্রেন স্ট্রোকে মারা যান। কৌশিকের বন্ধুদের বয়ান অনুযায়ী জানা গেছে, এই দিন বিকেল সাতটা নাগাদ কৌশিক তার মোটর বাইকটি ডেভিড ইউনাইটেড ক্লাব সংলগ্ন একটি দোকানে দাঁড় করিয়ে বন্ধুদের বলে তিনি একটি বিশেষ মিটিংয়ে বাইরে যাচ্ছেন। তারপর থেকে প্রায় রাত বারোটা অবধি তার কোনও খবর না পেয়ে তার বন্ধুবান্ধবরা অনবরত তার মোবাইল ফোনে কল করতে থাকলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায় নি। এমত অবস্থায় তার বন্ধুবান্ধবেরা এলাকার এক স্থানীয় নেতাকে ফোন করে সমস্ত কথা জানান এবং আসতে অনুরোধ করেন। সেই নেতা ডেভিডে এসে জানতে পারেন প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে নিখোঁজ কৌশিক। মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুরের বুকে একটি অপহরণের ঘটনা হয়ে যাওয়ায় তারা ঠিক করেন অবিলম্বে পুলিশের কাছে গিয়ে একটি নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের করবেন। সেইমতো তারা যখন ডেভিড হেয়ারের মূল রাস্তা ধরে থানার উদ্দেশ্য যাচ্ছিলেন তখন তারা দেখতে পান মূল রাস্তার ধারে কৌশিকদের গাড়ির গ্যারেজের ভেতর থেকে চালু গাড়ির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সন্দেহের বশে তারা দরজায় ধাক্কা দেওয়া থেকে শুরু করে কৌশিকের নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করেন। কিন্তু গ্যারেজটি এমনভাবে তৈরী যে বাইরে থেকে কোনও ফাকফোকর নেই। গ্যারেজের দরজা ভাঙার চেষ্টা করলে তারা দেখেন গ্যারেজের দরজাটি আগুনের মতো গরম হয়ে গিয়েছে। তাই তারা গ্যারেজের একটি দেওয়াল ভাঙার উদ্যোগ নেন এবং ভেঙেও ফেলেন। দেওয়াল ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই ভেতর থেকে গন গন করে বেরিয়ে আসতে থাকে কালো ধোঁয়া। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভাঙা গ্যারেজের অংশ দিয়ে ভেতরে লোক ঢুকিয়ে খোলা হয় গ্যারেজের মূল দরজা। তখন দেখা যায়, সুইফট ডিজায়ার গাড়ির ভেতরে পেছনের সিটে অর্ধনগ্ন অবস্থায় কাবেরী ও কৌশিকের নিথর দেহ। দেহগুলি এতটাই ঝলসে গিয়েছিল যে তার থেকে সহজেই আন্দাজ করা যায় গ্যারেজের ভেতরে থাকা তাপমাত্রার প্রবলতা। পুলিশ তৎক্ষনাত দেহ দুটিকে উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। এই বীভৎস ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ডেভিড হেয়ার এলাকায়। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, ওই দুজনেই বন্ধ গ্যারেজের ভেতরে গাড়িতে এসি চালু অবস্থায় অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত ছিল। আচমকায় কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে গাড়ির এসি কাজ করা বন্ধ করে দিলে দুজনেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। অন্যদিকে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চলন্ত অবস্থায় থাকায় অনবরত গাড়ি থেকে নির্গত বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ওই বন্ধ গ্যারেজে জমতে শুরু করলে দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে বলে অনুমান পুলিশের। গ্যারেজের ভেতরের তাপমাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে দেহ দুটি প্রায় ঝলসে গিয়েছে। তবে এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা পুলিশের অনুমান মানতে নারাজ। তাদের যুক্তি, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তারা গ্যারেজ ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেছিলেন গাড়ির পেছনের দরজা দুটি খোলাই ছিল। ফলে দম বন্ধ হয়ে কাবেরী ও কৌশিকের মৃত্যু হয়েছে এই তত্ত্ব মানতে নারাজ তারা। স্বভাবতই প্রতিবেশীদের এহেন যুক্তি ঘনীভূত করেছে রহস্যের। একদিকে ছেলের বয়সী যুবকের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের ঘটনা আর অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের সন্দেহপূর্ণ বয়ান ক্রমে রহস্য বাড়াচ্ছে ঘটনাকে কেন্দ্র করে। নাম প্রকাশে অনিছুক এক এলাকাবাসী জানান, ওই মাঝবয়সী ভদ্রমহিলার পরিবার ও তিনি নিজেও এই ধরণের অবৈধ সম্পর্কে এর আগেও বহুবার জড়িয়ে ছিলেন। তিনি এও জানান, তার প্রতিবেশীরা এই পরিবারটিকে একপ্রকার এড়িয়েই চলত তাদের এইসমস্ত অসামাজিক কাজকর্মের কারণেই। দুর্গাপুর পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পরই আসল রহস্যের উন্মোচন হবে বলে জানানো হয়েছে পুলিশের তরফে।