নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ গ্রীষ্মের দাবদাহ কমার নামমাত্র লক্ষণ নেই, বরং ঘূর্নিঝড় ফনী এবং কালবৈশাখীর ঝাপটা সামলে বৈশাখের শেষ এবং জ্যৈষ্ঠের শুরুতে ফের ফুল ফর্মে গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহ। দুর্গাপুর তথা শিল্পশহরে প্রত্যেক বছরই গ্রীষ্মের প্রবল দাবদাহ লক্ষ্য করা গেলেও এবছরের গ্রীষ্মের দপাট অন্যান্য বারের তুলনায় তুলনামূলকভাবে অস্বস্তি বাড়িয়েছে দুর্গাপুরবাসীর। সৌজন্যে শিল্পশহরের জল সংকট। শিল্পশহরের ইতিহাসে যা একেবারেই বিরল। মূলত দামোদর নদীর ওপর নির্ভরশীল দুর্গাপুরের বিস্তীর্ন অঞ্চলের মানুষ গ্রীষ্মের শুরু থেকেই তীব্র জলকষ্টে ভুগছেন, কারণ চাদিফাটা রোদের প্রখর তাপে দামোদর জলশূণ্য। তবে দুর্গাপুরের অন্যান্য এলাকার থেকে এতদিন অনেকটাই ভালো অবস্থায় ছিলেন দুর্গাপুর স্টীল টাউনশিপ এলাকার বাসিন্দারা। কারণ ডিএসপির ছত্রছায়ায় এই গ্রীষ্মের মধ্যে তেমনভাবে জলকষ্ট উপলব্ধি করতে পারেন নি তারা। উপরের লাইনে “ভালো অবস্থায় ছিলেন” বলার কারণ নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন। কারণ এই প্রতিবেদন সম্পূর্ন পড়ার পর দুর্গাপুর স্টীল টাউনশিপের বাসিন্দারা খুব সহজেই এই বক্তব্যের তাৎপর্য উপলব্ধি করতে পারবেন। সম্প্রতি এই স্টীল টাউনশিপের চণ্ডীদাস ঝুপড়ি সংলগ্ন এলাকা দিয়ে গেলেই নজরে পড়বে ডিএসপি কর্তৃপক্ষের তরফে বসানো পানীয় জলের পাইপ লাইন ফেটে সকালে-বিকেলে ফোয়ারার মত জল চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। আর সেই ফোয়ারার জলেই গরম থেকে বাঁচতে গা ভিজিয়ে নিচ্ছে এলাকার খুদেরা। কিন্তু এই পানীয় জলের ফোয়ারা প্রকৃতপক্ষে মনুষ্য সৃষ্ট। কারণ, এই বস্তি এলাকার মানুষজনই তাদের পানীয় জলের চাহিদা পূরণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় বসানো ডিএসপির পানীয় জলের পাইপগুলিকে বেছে বেছে নিশানা করছে। জেখানেই এই পাইপ লাইনে ভাল্ব থাকছে সেখানেই এলাকার মানুষজন অবৈজ্ঞানিকভাবে পাইপ লাইন ফুটো করে নিজেদের জলের চাহিদা পূরণ করছেন, তবে কোথাও কোথাও আবার এই জল দিয়েই হাইব্রিড মাগুর মাছ চাষ করার অভিযোগও উঠেছে। তবে সবথেকে ভয়াবহ বিষয় হল, এই যে জলের পাইপ লাইনগুলিকে ফুটো করে দেওয়া হচ্ছে, এরফলে বস্তি এলাকার মানুষের জলের চাহিদা মিটে গেলেও ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে স্টিল টাউনশিপে এই মুহূর্তে বসবাস করা কয়েক হাজার কোয়ার্টারের বাসিন্দাদের জন্য। কারণ, ফুটো করে দেওয়া এই পাইপ লাইন দিয়েই এলাকার নর্দমার নোংরা জল যেমন ওই পাইপ লাইনে প্রবেশ করছে তেমনি এলাকার গরু, মোষ বা অন্যান্য গবাদি পশুর মল-মূত্র এবং তাদের স্নান করানোর নোংরা ও ভয়াবহ দূষিত জলও ওই ফুটো করা পাইপ লাইন দিয়ে প্রবেশ করছে এবং এরপর ওই জলই সরবরাহ হয়ে যাচ্ছে স্টীল টাউনশিপের বিভিন্ন বাড়িতে বাড়িতে। শুধু চণ্ডীদাস বস্তি এলাকায় নয়, এই তালিকায় রয়েছে RE College ঝুপড়ি, ডেভিড হেয়ার শনি মন্দির, জে সি বোস ঝুপড়ি, হস্টেল এভিনিউ ঝুপড়ি, পাওয়ার হাউস ঝুপড়ি, ট্রাঙ্ক রোড সংলগ্ন ঝুপড়ির মত এলাকাও। এইসমস্ত এলাকাতেই কোথাও না কোথাও পানীয় জলের পাইপ লাইনে ফুটো করে একই পদ্ধতিতে জল ব্যবহার করছে স্থানীয় বস্তি এলাকার মানুষজন। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যে যেকোনো সময় এই ভয়াবহ দূষিত পানীয় জল পান করার ফলে তা মহামারীর আকার নেওয়ার আশঙ্কা তৈরী হয়েছে এবং তা হচ্ছেও। স্টীল টাউনশিপ এলাকার মানুষজন একবাক্যে স্বীকারও করে নিয়েছেন যে গ্রীষ্মের শুরু থেকেই ডায়েরিয়া বা জন্ডিসের মত যে মারণ রোগ এলাকার মানুষের শরীরে ঘাঁটি গেড়েছে তা এই দূষিত পানীয় জল থেকেই। তবে এক্ষেত্রে একদিকে যেমন ডিএসপি কর্তৃপক্ষকে সরাসরি দোষী সাব্যস্ত করা যায়না তেমনি একেবারেই দায় এড়াতেও পারে না। কারণ, ডিএসপি পানীয় জল পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের জন্য উচ্চমানের পিউরিফায়ার ব্যবহার করলেও এলাকার মানুষের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই তা মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় পানীয় জলের পাইপে ফুটো করে দেওয়া হলেও ডিএসপি কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোনও নজরদারি নেই। ফলে এভাবেই দিনের পর দিন শহরের পানীয় জল দূষিত হচ্ছে এবং সেই জলই পান করছে স্টীল টাউনশিপ এলাকার মানুষজন। যার ফল যেকোনো সময় মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। এভাবেই দূষিত জল ব্যবহারের ফলে যেমন প্রাণহানীও হতে পারে তেমনি ডায়েরিয়ার মত রোগ মহামারীরও আকার নিতে পারে। আর এই পরিস্থিতি তৈরী হলে তার মোকাবিলা করার জন্য ডিএসপি কর্তৃপক্ষ তৈরী তো? এই প্রশ্নই এখন মানুষের মুখে মুখে।