সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী),বহরমপুরঃ- আমরা যারা সংসারে বদ্ধ জীব, তাদেরকে প্রত্যেকটা মুহুর্ত লড়াই করতে হয় জীবনে অনেক শোক তাপ আসে, এই শোক তাপ থেকে মুক্তি পেতে গেলে কী করা প্রয়োজন? শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন সংসারে থাকতে গেলে ভগবানকে আশ্রয় করে থাকো তাহলে দুঃখ শোক কম পাবে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন,খুঁটি ধরে ঘোরা। এর মানে কি তাই যারা ভগবানকে আশ্রয় করে তাদের জীবনের শোক দুঃখ তাপ মৃত্যু বলে কিছু আসে না? না, যারা ভক্ত হয় তাদের জীবনেও শোক আসে, কষ্ট আসে, তবে ভগবান কে আশ্রয় করে থাকলে ব্যথা যন্ত্রণার বোধ কমে যায়। মন তখন অসীমে পরিব্যপ্ত হতে শিখে যায়। এই বিষয়টি খুব কঠিন লাগছে কিন্তু একটি ঘটনার সাহায্যে বুঝিয়ে বললে বুঝতে সহজ হবে।
স্বামী লোকেশ্বরানন্দ মহারাজ একটি গল্পের মাধ্যমে বিষয়টি খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন, “আমি দু-জন ডাক্তারকে জানতাম ৷ দু-জনই বড় ডাক্তার ৷ প্রথম জনের একটাই ছেলে ৷ তার বিয়ে দেবেন — তোড়জোড় চলছে ৷ তার প্র্যাকটিসের জন্য চেম্বারও ঠিকঠাক করে রেখেছেন ৷ তা, সেই ছেলে হঠাৎ মারা গেলে সবাই সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন ৷ ডাক্তার কিন্তু তখন ঠাকুর ঘরে বসে আছেন ৷ পরে বেরিয়ে এসে বললেন — আপনারা সান্ত্বনা দিতে এসেছেন, কিন্তু যাঁর জিনিস তিনিই নিয়েছেন, এতে আর দুঃখ করার কী আছে ?
দ্বিতীয় ডাক্তারের দু-তিনটি ছেলে ৷ একটি ছেলে মারা গিয়েছে ৷ তা, আমার সঙ্গে প্রথম আলাপের দিনেই তিনি বলছেন — বলুন তো, আমাকে আর কতদিন বেঁচে থাকতে হবে ? আর বাঁচার সাধ নেই ৷ জীবনে বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছে ৷
দেখুন, প্রথমজন নিয়মিত পূজা-অর্চনা করতেন, ঈশ্বরে তাঁর অনুরাগ ছিল ৷ তাই ভেতর থেকে শক্তি পেয়েছেন ৷ দ্বিতীয় জনের তা ছিল না ৷ তাই শোকে ভেঙ্গে পড়েছেন ৷
শ্রীরামকৃষ্ণ তাই বলছেন — সংসারে আছ, থাকো। কিন্তু খুঁটি ধরে থাকো ৷ তাহলে অত ব্যথা পাবে না ৷ ঈশ্বরই সেই খুঁটি ”