সঙ্গীতা চ্যাটার্জী (চৌধুরী)ঃ- বহুদিন আগে পুরীতে একজন পান্ডা ছিলেন তার নাম অর্জুন মিশ্র। তার প্রতিদিনকার কাজ ছিল সম্পূর্ণ গীতা পাঠ করা, তাই তিনি প্রত্যহ গীতা পাঠ করতেন। এই কারণে সবাই তাকে গীতা পান্ডা বলেও ডাকতেন। অর্জুন পান্ডা মূলত ভিক্ষাবৃত্তি করেই তার জীবন নির্বাহ করতেন। কিন্তু একবার পুরীতে টানা ৭ দিন ধরে বৃষ্টিপাত হওয়ার জন্য তিনি ভিক্ষা করতে বাড়ির বাইরে বেরোতে পারেন না। সাত দিন বাড়ির বাইরে বের হতে না পারলেও এবং ভিক্ষা করতে না পারলেও তিনি দুঃখিত হওয়ার পরিবর্তে আনন্দিত হন, এই ভেবে যে আজ সারাদিন বাড়িতে বসে গীতা পাঠ করতে পারবেন।
কিন্তু তার স্ত্রী এই কান্ড দেখে তার কাছে এসে বললেন যে, তুমি যদি সারাদিন গীতা পাঠ করো আর বাইরে গিয়ে ভিক্ষে না করো তাহলে আমাদের সংসার কী ভাবে চলবে? আমাদের ঘরে তিনটি সন্তান সবাই অভুক্ত রয়ে আছে আর তুমি গীতা নিয়ে বসে আছো। এই কথা শুনে গীতা পান্ডা চিন্তিত হওয়ার পরিবর্তে শান্ত হয়ে বললেন, শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় ভগবান নিজে বলেছেন যে, তিনি ভক্তের সকল ভার গ্রহণ করেন। আমরা যদি সম্পূর্ণভাবে একমাত্র তার ওপর নির্ভরশীল হই তাহলে তিনি নিশ্চিত আমাদের সকল ভার গ্রহণ করবেন।
এই বলে গীতা পান্ডা তার স্ত্রীকে গীতার নবম অধ্যায়ের ২২ নম্বর শ্লোক টা দেখাতে গেলেন কিন্তু এই ব্যবহারে তার স্ত্রী তার ওপর রেগে গিয়ে হাত থেকে গীতা টা নিয়ে ওই শ্লোকের ওপর তিনটে লাইন কেটে দিলেন, রেগে গিয়ে গীতা পান্ডা স্ত্রী তাকে বললেন, আমরা যদি কোন কাজই না করি তাহলে কি ভগবান ঘরে এসে আমাদের খাবার এনে দেবে?- এরপর পেটে ক্ষুধা নিয়েই গীতা পান্ডার সন্তানেরা ঘুমিয়ে পড়লেন কিছুক্ষণ পর গীতা পান্ডা ও ঘুমিয়ে পড়ল।কিন্তু সেই গভীর রাত্রে গীতা পান্ডার বাড়িতে দরজার শব্দ পড়ল, দরজা খুলে গীতা পান্ডার স্ত্রী দেখলেন দুটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,একজনের গাঁয়ের বর্ণ কালো আর একজনের পরিষ্কার। সেই ছেলে দুটি গীতা পান্ডা স্ত্রীকে বললেন, গীতা পান্ডার এক বন্ধু কিছু খাবার সামগ্রী তাদের উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন, তারা যেন তা গ্রহণ করে। গীতা পান্ডার বন্ধু এত খাবার পাঠিয়ে ছিলেন যে, সেই খাবারে সমস্ত ঘরটা ভর্তি হয়ে গিয়েছিলো, এই সময় গীতা পান্ডার স্ত্রী ছেলে দুটিকে বলেন তোমরাও আমাদের সাথে প্রসাদ খেয়ে যাও। কালো বর্ণের ছেলেটি তখন বলল হ্যাঁ আমাদেরও প্রসাদ খাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল কিন্তু আমার জিভ কেটে দেওয়া হয়েছে তাই ইচ্ছে থাকলেও আমি খেতে পারব না- এই কথা বলে ছেলে দুটি সেখান থেকে চলে গেল।
এরপর গীতা পান্ডা স্ত্রী তার স্বামীকে ঘুম থেকে উঠিয়ে সব কথা বললে গীতা পান্ডা বলেন ওই কালো বর্ণের ছেলেটি স্বয়ং জগন্নাথ আর ওই পরিষ্কার বর্ণের ছেলেটি হলেন বলরাম আর যেহেতু গীতা পান্ডার স্ত্রী গীতার শ্লোকের ওপর দাগ কেটেছেন তাই শ্রীকৃষ্ণের জিভা কেটে গিয়েছে কারণ ভগবত গীতা হল শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী, নিজের ভুল বুঝতে পেরে গীতা পান্ডা ও তার স্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথ মন্দিরে গেলেন ক্ষমা চাইতে এবং সেখানে গিয়ে তারা দেখলেন জগন্নাথ দেবের অধরে তিনটে দাগ পড়ে আছে।
অর্থাৎ যদি কেউ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল হন তাহলে ভগবান স্বয়ং তার ভার গ্রহণ করেন। কথাতেই আছে রাখে কৃষ্ণ তো মারে কে? আর মারে কৃষ্ণ তো রাখে কে?-তাই জীবনের অহেতুক সময় নষ্ট করা কাজগুলি বাদ দিয়ে কখনো কখনো গীতা পাঠ করুন আর ভক্তিভরে বলুন জয় গীতা। জয় শ্রী কৃষ্ণ।