সংবাদদাতা, সারেঙ্গা, বাঁকুড়া:- স্নানের সময় কংসাবতী নদীতে ভেসে যাওয়া নাতিকে উদ্ধার করতে গিয়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা গেলেন দাদু। ঘটনাটি বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ব্লকের চিলতোড় গ্রামের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে মামার বাড়ি চিলতোড়ে বেড়াতে এসে মামা-দাদু দীনবন্ধু মহাপাত্রের (৭৫) সাথে ২৬ শে মার্চ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কংসাবতী নদীতে স্নান করতে যায় সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র নাতি সৌম্যদীপ। নাতি নদীর জলে নামলেও দাদু বসে ছিলেন নদীর তীরে। অসাবধানতার জন্য নাতি নদীর স্রোতের টানে ভেসে যায়। নাতিকে ভেসে যেতে দেখে বৃদ্ধ দাদু নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে উদ্ধার করে এবং নাতিকে কাঁধে তুলে নিয়ে আসার সময় ঘটে যায় অঘটন। পিএইচই-র পাইপ লাইনে পা আটকে যায় দাদুর। নাতি পড়ে যায় নদীর জলে। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা দু’জনকেই উদ্ধার করার চেষ্টা করে।
এদিকে ঘটনার খবর গিয়ে পৌঁছে যায় রাইপুর সবুজ বাজারে। উদ্ধারকার্যে এগিয়ে আসেন অন্যান্যরা। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাইপুর থানার সিভিক ভলান্টিয়ার বৈদ্যনাথ রজক নদীর জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যায় রাইপুরের বাসিন্দা গোপাল দুলে ও শচীন দুলে। উদ্ধার কাজে তদারকি করেন সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ অজিত দাস ধীবর, সুরজিৎ মহাপাত্র, চিন্ময় মহাপাত্র সহ অনেকেই। দীর্ঘক্ষণ জলের স্রোতের সাথে লড়াই করে নাতিকে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে আসা হলেও দাদুকে বাঁচানো যায়নি। পাইপ লাইনে আটকে তিনি মারা যান।
শিশুটিকে উদ্ধার করে রাইপুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয়রা দীনবন্ধু বাবুর দেহটি উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে রাইপুর ও সারেঙ্গা থানার পুলিশ এসে হাজির হয়। মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে সৌম্যদীপের মা ঝুমা দেবী সেই সময় তার মেয়েকে নিয়ে রাইপুরে একটি অঙ্কন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরীক্ষায় ব্যস্ত ছিলেন। ঘটনার খবর পেয়ে তিনি ছুটে আসেন দুর্ঘটনাস্থলে। সন্তান উদ্ধার হলেও বাবার মৃত্যুর ঘটনায় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।