নিউজ ডেস্ক, এই বাংলায়ঃ ‘ড্রাগের নেশা সর্বনাশা’-উক্ত এই প্রতিবেদন পড়েই যেকেউ বুঝে নিতে পারবেন কিসের উপর এই প্রতিবেদন। আধুনিক সমাজে নেশা আর নতুন কী? এরকম ভেবে অনেকেই এই প্রতিবেদন না পড়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই পারেন। বর্তমান আধুনিক যুগের এই যুব সমাজ সিগারেট, বিড়ি, গুটকার নেশার প্রতি আসক্তি আজ থেকে নয় বহুবছরের। কিন্তু একটু লক্ষ্য করলেই দেখবেন সময়ের সাথে সাথে আমাদের খাওয়া-দাওয়া, চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি যুব সমাজের নেশার সামগ্রীতেও ঘটে গেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন। আজকের যুবসমাজের নেশার সীমানা আর সিগারেট বা বিড়িতে সীমাবদ্ধ নেই, তা কয়েক ধাপ পেরিয়ে জেন ওয়াই এখন গাঁজা, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, হুক্কা এবং সবথেকে ভয়াবহ নেশা ড্রাগস ও চরসের প্রতি আসক্ত। যে নেশার ভয়বহতা সম্পর্কে আজও বহু মানুষের ধারনা পর্যন্ত নেই। অবাক লাগলেও আজ এই ভয়াবহ নেশার কবলে আমাদের শিল্পশহরও। গত কয়েকদিন আগেই গাঁজার নেশাকে কেন্দ্র করে দুর্গাপুরের নিশানবস্তি এলাকায় যে ধুন্ধুমারের ঘটনা তা প্রত্যক্ষ করেছে শিল্পশহর তথা গোটা রাজ্য। কিন্তু শুধু গাঁজা ব্যবসায় নয়, বর্তমানে শিল্পশহরের বুকে একাধিক জায়গায় গাঁজা ছাড়াও, চরস, ব্রাউন সুগার থেকে শুরু করে এন-১০-র মতো নানান মারণ ড্রাগসের রমরমা কারবার চলছে। যার উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে গতকয়েকদিনের ভয়াবহ ঘটনার কেন্দ্র নিশানবস্তি এলাকা, প্রান্তিকা বস্তি, কাদারোড বস্তি, মুচিপাড়া, স্টেশনবাজার, মেন গেট ওভারব্রিজের নিচের বাজার এবং সর্বোপরি সিটিসেন্টারের গান্ধীমোড় সংলগ্ন মায়াবাজারগামী রাস্তার পাশে হনুমান মন্দির লাগোয়া এলাকা এখন ড্রাগস বিক্রির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় স্থানের আড়ালে বর্তমান যুব সমাজকে ধীরে ধীরে পঙ্গু করে দিচ্ছে এই মাদক কারবারিরা। দিনের যেকোনও সময় গেলেই পেয়ে যাবেন মাদক দ্রব্য। পুরিয়া বা কলম প্রতি বিভিন্ন মাদকের দাম বিভিন্ন রকম। ৭০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০, ৫০০, ১০০০ টাকারও ড্রাগস খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে স্কুল, কলেজের পড়ুয়াদের হাতে। আর গাঁজা পুড়িয়া প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এখানে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় কি করে এই মারণ মাদক দ্রব্যের ব্যবসা দিনের পর দিন করে চলেছে কারবারিরা। উত্তর খুবই স্বাভাবিক। মাসিক মোটা টাকা মাসোহারার বিনিময়েই এই মাদকদ্রব্যের কারবার করার ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এর আগেও এই বাংলায় ওয়েব পোর্টালে শিল্পশহরের বিভিন্ন জায়গায় হুক্কা বারের আড়ালে গাঁজা এবং ড্রাগস কেনাবেচার কারবারের এক প্রতিবেদন আমরা প্রকাশ করেছিলাম। সেখানেও জানানো হয়েছিল কিভাবে নিজেদের অজান্তেই বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে স্ট্যাটাস মেইন্টেন করতে গিয়ে কিভাবে নিজের অজান্তে কিভাবে একটু একটু করে মারণ নেশার কবলে পড়ছে আজকের এই জেন ওয়াই। আর এ এক এমন মারণ নেশা যেখানে প্রবেশ করা যায় খুব সহজেই কিন্তু এর পরিনতি হয় মৃত্যু নয়তো মানসিক ভারসাম্যহীনতা। শিল্পশহরে কোথা থেকে আসছে এই মারণ ড্রাগস? নিকটবর্তী কলকাতা থেকে বিভিন্নভাবে চোরাই পথে মূলত মহিলা ক্যারিয়ারদের মাধ্যমে খুব সহজেই রাজ্যের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুরেও প্রবেশ করছে মাদক দ্রব্য। মহিলা ক্যারিয়ারদের ব্যবহারের প্রধান কারণ হল পুলিশ বা গোয়েন্দাদের নজর এড়িয়ে সহজেই এই মহিলা ক্যারিয়াররা শরীরের গোপন স্থানে মাদক দ্রব্য লুকিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। তবে রাজ্য তথা জেলা জুড়ে মাদকদ্রব্যের ক্রমশ জাল বিস্তার মোটেও সমাজ বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ভালো খবর নয়। কারণ এই মাদকের প্রতি একবার আসক্ত হয়ে পড়লে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার আর কোনও রাস্তা নেই। পাশাপাশি এই মাদক সেবনকে কেন্দ্র করেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপ ক্রমেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। যা শহরের নিরাপত্তাকেও ফেলে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে।