eaibanglai
Homeএই বাংলায়ডিএসপির উচ্ছেদ অভিযানে এবার কি বোমার ভয়ে জব্দ অফিসারেরা ?

ডিএসপির উচ্ছেদ অভিযানে এবার কি বোমার ভয়ে জব্দ অফিসারেরা ?

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: ‘ফের উচ্ছেদ অভিযানে এলে বোমা পড়বে আধিকারিকদের ঘরে ঘরে’ – এই চরম হুশিয়ারির পর কি এবার ব্যাক গিয়ার দেবে ডিএসপি ? এমনিতেই গত শনিবার বৃষ্টি মাথায় উচ্ছেদে গিয়ে মারধর খেয়ে অর্ধেক মনোবল ভেঙে যেতে বসেছে কর্তৃপক্ষের একাংশের।

গত শনিবার উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে এখানকার চণ্ডীদাস বাজার এলাকায় ঢোকার মুখে শক্ত প্রতিরোধের মুখে পড়ে দুর্গাপুর ইস্পাতের নগর প্রশাসন। এর আগে, উচ্ছেদের সময় অশোক এভিনিউ এলাকায় এক দোকানদারের মৃত্যুর দরুন বেজায় বেকায়দায় পড়ে একদফা মুচলেকাও দিতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেদিন নবান্ন সভাগৃহ থেকে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সমস্ত বেদখল সরকারি জমি পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে অভিযানের আদেশ জারি করেন, ঠিক সেই সময়েই কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা কর্তৃপক্ষ কার্যত ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে একটানা লাগাতার ইস্পাত নগরীর ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে গজিয়ে ওঠা সমস্ত অবৈধ দোকানঘর ও বাড়ি ভাঙার কাজ তৎপরতার সাথে শুরু করে দেয়। প্রায় একমাস যাবত দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের বুলডোজারের মুখে পড়ে ধুলিস্যাৎ হয়েছে কয়েকশো দোকানঘর ও বাড়ি। পুজোর মুখেই কর্মহীন, গৃহহীন হয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু,গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার উচ্ছেদ অভিযানের একটি দল বুলডোজার চালিয়ে শরৎচন্দ্র এভিনিউয়ের ক্রসিংয়ে চন্ডীদাস বাজার মুখী বেশ কয়েকটি দোকানঘর ভাঙ্গার পরে পরেই হঠাৎই ধৈর্য্য হারায় দখলদারেরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই, ক্ষিপ্ত জনতার হাতে বেধড়ক প্রহৃত হলেন দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। স্থানীয় বাসিন্দা ও রাস্তার ধারে দোকানদাররা সম্মিলিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে উচ্ছেদ অভিযানকারী ইস্পাত কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের ওপর। বুলডোজারের ওপর থেকে টেনে হিঁচড়ে নামানো হয় বুলডোজারের চালক সহ ইস্পাত কর্তৃপক্ষের আধিকারিকদের। ক্ষিপ্ত জনতা রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করেন নগর প্রশাসনের আধিকারিক, কর্মীদের।

এঘটনায় খবর ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। এরপরেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসে স্থানীয় সমাজসেবী লক্ষণ ঘোষাল ও তৃণমুল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা বান্টি সিং এর মতো কিছু মানুষ। ক্ষিপ্ত জনতাকে কোনমতে শান্ত করে, আপাতত পুজোর এক মাস সময় চেয়ে নিয়ে এদিনের মতো উচ্ছেদ অভিযানের ইতি হয়।

এদিকে ডিএসপি কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানের সময় সঙ্গে থাকা সিআইএসএফ বাহিনী এদিন একপ্রকার পালিয়ে প্রাণ বাঁচায়, যা দেখে আরো হতাশায় ডুবে যান উচ্ছেদকারী কর্মী, আধিকারিকেরা। তখনই, তৎপর হয়ে পরিস্থিতি সমল দেয় স্থানীয় দুর্গাপুর থানার পুলিশ। বুলডোজারের ধাক্কায় গুঁড়িয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন দোকানদার এদিন ক্ষোভের সাথে জানান, “পুজোর মুখে সর্বস্বান্ত হয়ে এখন তারা কর্মহীন হলেন। কি ভাবে এই উৎসবের মুখে তারা তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে দিন কাটাবেন ?”

এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন উত্তেজিত, ক্ষিপ্ত দোকানদার সরাসরি প্রকাশ্যে হুশিয়ারি দিলেন – “উচ্ছেদ অভিযানকারী দলের যে সকল আধিকারিকরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবার তাদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করা হবে।” তারা রাখঢাক না করেই বলতে থাকেন, “প্রয়োজনে তাদের বাড়িতে বোমা মারবো। দেখি ওরা কি করে দুর্গাপুরে শান্তিতে পরিবার নিয়ে থাকে ?”

কারো কারো দাবি, “আমাদের সর্বশ্রান্ত করে ওরা ফুর্তিতে পূজো করবেন, সেটি হচ্ছেনা। ওদের শান্তির ঘুম এবার কেড়ে নেবো আমরা। অনেক সহ্য করেছি, আর নয়।”

দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর বি-জোন এলাকার সমস্ত দোকানদারদের মধ্যে নাকি একটি ঐক্যমত তৈরি হয়েছে এমনই যে এবার থেকে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের টাউন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিভাগের যে সকল আধিকারিকরা উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের পরিবার ও পরিজনদের এবার থেকে সামাজিকভাবে বয়কট করা হবে। এলাকার কোন দোকানদারই আর ওই সব আধিকারিকদেরকে তাদের মালপত্র বিক্রি করবেন না বলে শোনা যাচ্ছে। তাদের হুমকি, “শুধু তাই নয় ওইসব আধিকারিকদের ছেলে-মেয়েদেরকে যে সকল স্কুলের পুলকারগুলি নিয়ে যাওয়া আসা করে তারাও এবার থেকে তাদের ছেলেমেয়েদের আর স্কুলে নিয়ে যাবে না।” নাম প্রকাশে অনৈচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই যে সকল আধিকারিকরা উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের ইস্পাত নগরীর ভেতরে থাকা কোয়ার্টারের ঠিকানা জোগাড় করে ফেলেছি। অবিলম্বে আমরা তাদের বাড়িতে গিয়ে সতর্ক করে আসবো। অনুরোধ করবো উচ্ছেদ অভিযান থেকে সরে দাঁড়াতে। মুখের কথায় কাজ না হলে, লাগাতার বোমা চলবে। তাতে যদি জেল হয়, ফাঁসি হয়, সেও ভি মঞ্জুর।” তাদের কথায়, “এবার আমরা ডিএসপির ওই আধিকারিকদের পরিষ্কারভাবেই বুঝিয়ে দেব – কারুর পেটে লাথি মারলে তাদের কি ভয়ংকর পরিনতি হতে পারে, সেটা করে দেখাবো!” এদিকে, এলাকার স্থানীয় মানুষজনেরাও ডিএসপির এই উচ্ছেদ অভিযানকে মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “সবই বুঝতে পারছি। আসলে, মোদির বন্ধু আদানীর গ্যাস লাইন পাতার জন্য এত মানুষের পেটে লাথি মারার যে যাতাকল দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে এবার তার প্রতিরোধের সময় এসেছে। এলাকার সমস্ত নেতৃত্ব মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে তাই জনতা আর কারও কোন কথা না শুনে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। কারণ এই রাস্তার ধারের দোকানগুলির জন্যই বাড়ির মহিলারা নিরাপদে বাজার হাট থেকে নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরতে পারেন। কারণ তারা জানেন পাড়ারই কোন না কোন ছেলের রাস্তার ধারে দোকান রয়েছে। সুরক্ষিত মনোভাব নিয়ে মহিলারা এতদিন রাস্তায় পথ চলছিলেন।”

এদিকে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ অভিযানকারী দলের একাধিক আধিকারিক গত শনিবারের ঘটনায় স্পষ্ট বুঝতে পেরেছেন, এবার তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় জনমত তৈরি হয়েছে। তাদের ওপর হামলাও হতে পারে। সুরক্ষিত নয় তাদের বাসস্থানও।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments