সূচনা গাঙ্গুলী,দমদমঃ- বাঙালি তথা বিশ্বের সমস্ত ক্রিকেট প্রেমী মানুষের কাছে ‘দাদা’ একজনই। তিনি হলেন সবার প্রিয় সৌরভ গাঙ্গুলী। তার জন্যই আবেগে ভেসেছে বাঙালি। অবসরের দীর্ঘদিন পরেও তার জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। তিনি নিজেই হয়ে উঠেছেন একটা জীবন্ত প্রতিষ্ঠান। তাকে কেন্দ্র করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ফ্যান ক্লাব বা গ্রুপ।
এইরকম একটি গ্রুপ হলো ‘সৌরভ গাঙ্গুলী, বস অফ ইন্ডিয়া।’ বাঁকুড়ার মনোজ মিশ্রের হাত ধরে রাজু, সিঞ্জিনী, মৈনাক, মুনমুন, সোমা, সুমন, শুভঙ্কর, প্রসেনজিৎ, অপর্ণার মত দশ জন ‘দাদা’ ভক্ত পাগল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই গ্রুপটি তৈরি করে। ‘দাদা’-র নাম ব্যবহার করে নিছক সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জন নয়, মূল লক্ষ্য নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে অসহায় দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
এবার তারা পাশে এসে দাঁড়ালো দমদম ক্যান্টনমেন্টের পথিকৃৎ সাহার পাঠশালাতে। ২০১৪ সালের একার উদ্যোগে পথিকৃৎ এলাকার মাত্র তিন জন অসহায় শিশুকে নিয়ে এই পাঠশালা তৈরি করেন। লক্ষ্য ছিল তাদের শিক্ষা দেওয়া, স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা। বর্তমানে সেখানে ৩০ জন শিশু পড়াশোনা করছে।
প্রসঙ্গত পথিকৃৎ একটি বহুজাতিক সংস্হার ‘ফুড ডেলিভারি বয়’। কার্যত পথ শিশুদের নিয়ে সে এই পাঠশালাটি গড়ে তোলে। কিন্তু খালি পেটে তো আর শেখার আগ্রহ থাকেনা। তাই কাস্টমাররা অর্ডার দেওয়ার পর যেগুলো ক্যানসেল করে সেই বেঁচে যাওয়া খাবার সে শিশুদের মুখে তুলে দেয়। বর্তমানে অনেকেই তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পাঠশালায় শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে। আরও পাঁচটি পাঠশালা গড়ে উঠেছে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায়।
যাইহোক পূর্ব নির্ধারিত ১১ ই ডিসেম্বর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই গ্রুপের সদস্যরা পথিকৃৎের পাঠশালায় এসে উপস্থিত হয়। যেহেতু আগে থেকেই ঠিক করা ছিল তাই পথিকৃৎ ও তার আদরের পাঠশালার শিশুরা তাদের সাদর অভর্থ্যনা জানায়। এরপর গ্রুপের সদস্যরা পথিকৃৎের উপস্থিতিতে তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা কিছু খাবার এবং খাতা, পেন সহ পড়াশোনার সামগ্রী শিশুদের হাতে তুলে দেয়। তারা তো এগুলি পেয়ে খুব খুশি। খুশি পথিকৃৎও।
পাঠশালার শিশুদের জন্য এইসব সামগ্রী পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে ওঠে পথিকৃৎ। আবেগ রুদ্ধ কণ্ঠে সে বলে – দূর থেকে এসে যেভাবে ইনারা আমার শিশুদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাতে আমি উনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আশাকরি ভবিষ্যতেও উনারা আমার পাশে থাকবেন।
গ্রুপের অন্যতম সদস্য সোমা দাস বললেন – আমরা কয়েকজন দাদার ভক্ত মিলেই এই গ্রুপটি গড়ে তুলেছি। আমাদের গ্রুপের সদস্যরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। আমাদের লক্ষ্য সীমিত সামর্থ্য নিয়ে যতটা সম্ভব অসহায় মানুষের পাশে থাকা। আশাকরি আগামী দিনে সহৃদয় মানুষেরা আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। একইসঙ্গে তিনি পথিকৃৎের পাশে থাকার জন্য সহৃদয় মানুষের কাছে আবেদন করেন।
যার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার জন্য এই গ্রুপটি গড়ে উঠেছে গত ২ ডিসেম্বর ছিল বাঁকুড়া নিবাসী মনোজ মিশ্রের জন্মদিন। তাকে কাছে পেয়ে গ্রুপের সদস্যরা পথিকৃৎের পাঠশালাতেই মহাসমারোহে তার জন্মদিনটি পালন করে নেয়।