eaibanglai
Homeএই বাংলায়মায়ের স্বপ্নাদেশে সপ্তমীতেই সিঁদুর খেলে

মায়ের স্বপ্নাদেশে সপ্তমীতেই সিঁদুর খেলে

নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– সাধারণত বিজয়া দশমীর দিন বাড়ির পুজো থেকে সর্বজনীন সব জায়গায় সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা। কিন্তু দুর্গাপুরের রায়বাড়ির দুর্গাপুজোয় সপ্তমীর দিনই বাড়ির মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। কথিত আছে মা দুর্গা এই সিঁদুর খেলার স্বপ্নাদেশ দেন। সেই থেকে মা দূর্গার ঘরে আসার আনন্দে এই সিঁদুর খেলার রীতি শুরু হয়। যা চলে আসছে আজও।

দুর্গাপুরের রায়বাড়ির দুর্গাপুজোয় সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যের এক অপরুপ মেলবন্ধন। আনুমানিক ৩০০ বছরেরও অধিক পুরোনো এই পুজো। ডাঃ বিন্দুগিরি রায় সর্বপ্রথম রায়বাড়িতে মা দুর্গার পুজো শুরু করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরই পূর্বপুরুষদের পরম্পরা অনুযায়ী নিয়ম ও নিষ্ঠার সাথেই রায়বাড়ির দুর্গাদালানে পূজিত হয়ে আসছেন মা দুর্গা। এই রায় বাড়ির পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। দুর্গাপুরের বর্তমানে যেখানে ইস্পাত কারখানা গড়ে উঠেছে তৎকালীন সময়ে দুর্গাপুরের সেই জগুরবাঁধে ছিল রায় পরিবারের বসবাস সেখানেই বছর বছর পূজিতা হতেন মা। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা নির্মাণের সময় পুনর্বাসনহেতু রায়বাড়ি গোপালমাঠে চলে আসে। তারপর থেকে এখানেই পূজিত হয়ে আসছেন মা দুর্গা। ক্রমে টিনের চালা দেওয়া মায়ের মন্দির রায় বংশের সদস্যদের প্রচেষ্টায় দালান বাড়িতে রূপান্তরিত হয়। বর্তমানে এই দুর্গা দালানেই পূজিত হন মা।

মা দুর্গা এখানে বৈষ্ণব মতে পূজিত হন। ষষ্ঠীর দিন বোধনের পরে সপ্তমীর দিন রায়পুকুরে নবপত্রিকা স্নানের মধ্যে দিয়ে মায়ের পুজো শুরু হয়। সপ্তমী ও নবমীতে মাকে অন্নভোগ দেওয়া হয়। কাঁসার থালায় গোবিন্দভোগ চালের ভাত, লেবু, ৫ রকমের ভাজা, শুক্ত, শাকভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস ভোগ নিবেদন করা হয় এবং অষ্টমীর দিন লুচি নিবেদন করা হয়। পশুবলি নিষিদ্ধ হওয়ায় অষ্টমীর দিন এখানে বিশালাকার মন্ডা বলি দেওয়া হয়। এই রীতি চলে আসছে ৭ প্রজন্ম ধরে। রায় পরিবারের সদস্য আনন্দ রায়ের ভ্রাতুষ্পুত্র ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তথা রায় পরিবারের দুর্গাপুজো কমিটির সভাপতি তরুণ রায় জানান, আগে রায় বাড়িতে
সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও দশমী এই চারদিনই পংক্তিভোজের আয়োজন করা হতো। কিন্তু করোনা কালীন পরিস্থিতিতে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনি তাঁর নিজ বাসভবনে পুনরায় এই পংক্তিভোজ চালু করেন। সেখানে পংক্তিভোজের পাশাপাশি বস্ত্র বিতরণও করা হয়।

রায়বাড়ির এই ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে প্রতি বছর প্রচুর সংখ্যক ভক্ত সমাগম হয়। দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা এসে মায়ের মহাপ্রসাদ গ্রহণ করেন। পুজোর কটাদিন রায় পরিবারের পাশাপাশি এলাকার সকলেই আনন্দে মেতে উঠেন। এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য রায় পরিবারের মা দুর্গার পুজোর সাথেই জগুরবাঁধের বাগদী পরিবারের মা কমলারও পুজো হয়। এবং দশমীর পর দিন রায় বাড়ির মা দুর্গা ও বাগদী পরিবারের মা কমলার প্রতিমাকে একই সাথে বিসর্জিত করা হয়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments