eaibanglai
Homeএই বাংলায়আড্ডাঃ ভূতের রাজার বরপুত্র/১ দালালরাজ, জমি-বাড়ী...

আড্ডাঃ ভূতের রাজার বরপুত্র/১ দালালরাজ, জমি-বাড়ী লুঠের স্বর্গরাজ্য এডিডিএ

বিশেষ প্রতিনিধি, দুর্গাপুরঃ একেই সম্ভবত বলে – ‘রক্ষকই ভক্ষক।’ সরকার যার ওপর অগাধ বিশ্বাসে সম্পত্তি রক্ষা, দেখভাল আর লুঠপাট বন্ধের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্তে আছে, সে বা তার ডালপালারা মিলে ‘চুপিসারে’, সরকারি তকমা ব্যবহার করে, দিনে দুপুরে যাকে বলে পুকুর চুরির উঠে পড়ে লেগেছে। শুধু “চুরি-চামারি” করেই নয়, বর্তমান পশ্চিমবাংলার ‘কাটমানি’, ‘দিদি কে বলো’র মতো রাজ্য-রাজনীতি সরগরম করা ইস্যুকে যাকে বলে ডজ করে, বুক ফুলিয়ে ‘আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)’র বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মী, আধিকারিকের একাংশের কাজ কারবার দেখে মনে হতেই পারে – সত্যি করেই মগের মুলুক চলছে এখানে।
চাপরাশিই হোক বা বড়বাবু, বড় বড় সাহেব – বর্তমানই হোক বা প্রাক্তন, হরিরলুঠের আড্ডায় যে যা খুশি করতে পারে, আর পাঁচটা সাধারণ লোকের তা দেখে চোখ ছানাবড়া হতেই পারে, ‘আড্ডা’র কর্তারা শুধু চোখ বুজে নয়, রীতিমতো চোখ খুলে সব দেখছেন আর অভিযোগ এমনটাই – যে তারা জমি-বাড়ী “লুঠের” প্রমাণ হাতে পেলেই – কিভাবে ওই দূর্নীতিকে আইন-সিদ্ধ করা যায়-তা নিয়ে বিস্তর ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ আবার একথাও বলেছেন-‘মধু’র নাকি অনেক গুণ-ওপর থেকে নিচে অব্দি গড়ায়, গড়গড় করে। তাই মিষ্টিমুখে চাপরাশি টু কর্তা, এ সবই মেনে নেন। তাই, রক্ষণ নয় ‘ভক্ষণ’ কিভাবে ঠিকঠাক করা যাবে, ‘আড্ডা’র ওপর তলা থেকে নিচু তলা, আটঘাট বেঁধে সে কাজটিই নাকি সেরে ফেলেন দারুনভাবে। বিশেষতঃ সংস্থার ভূমিদপ্তর আর পরিকল্পনা দপ্তর নাকি এসবে দারুণ দড়। এখানে প্রায় চল্লিশ বছর আগে কেনা জমিও হাতবদল হতে পারে অনায়াসে, বিনাবাধায়। আবার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রামের জমিতে শ্যামের অট্টালিকা মাথা তুলতে পারে আয়েশ করে। যাদের এসব রোখার কাজ, তারা তস্করদের ঘরে ডেকে, চুরিকে কিভাবে আইনসিদ্ধ করা যায়, তার ‘সঠিক’ পথ বাতলে দেন। আর এইসব কাজ যে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, তাকে সড়গড় করার জন্য, ‘আড্ডা’য় হরবখত, দিনভর ভিড়িঙ্গি, সিটিসেন্টার, বিধাননগরের একশ্রেণির জমিবাড়ির দালাল ঘুরঘুর করে বেড়ায় পোষ্যজীবের মতো – এ টেবিল টু সে টেবিল। বাইরে থেকে ‘আড্ডা’য় কাজে আসা লোকেদের ধারনা হয় – এরাও বুঝি এডিডিএর কর্মচারী। এইসব জীবেরাই নাকি সংস্থার একশ্রেণীর আধিকারিক, কর্মীর নিশিকুটুম্ব। যোগাযোগ, চোখের ঈশারা, ফাইল লোপাট হয়ে যাওয়া, ফের খুঁজে পাওয়া এসবই প্রসেস আর তারপর হয় আসল রুটি সেঁকা। এই রুটি সেঁকার কারবারিদের মধ্যে নাম ডজন ডজন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখে যতই দালালরাজ খতম, কাটমানি ফেরত, ‘দিদি কে বলো’-র দাওয়াই দিন না কেন, দাদাদের আশীর্বাদে আড্ডার সর্ষের ভেতর যে ভূত চড়ে বেড়াচ্ছে – তাদের শোধরাবে কে? সাদাভূত, কালোভূত, টাকমাথা ভূত, চশমা পরা ভূত – স্টকে আছে হরেকরকম। “যাকে বলে ভূত-প্রেতের বাবা সব, বুঝলেন কিনা! এক সে এক মাহীর, দিন কে রাত করার দন্ডমুন্ডের কর্তা এই আড্ডার বাবুমশাইরা,” বললেন সমাজকর্মী দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন রাজ্য সরকারি সংস্থায় চাকরি করেছেন। ছায়াছবির জগতেও যাতায়াত তার। প্রায় একই কথা অন্য এক সমাজকর্মী পরিমল অবস্তির। তবে, তিনি বললেন, “আড্ডায় লুঠের প্রবণতা সেই বাম আমল থেকেই। মমতা ব্যানার্জীর জমানায়, মানুষ আশা করেছিল এবার সব শোধরাবে। কিন্তু না। অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। আসলে, যে কোনও নৌকা ঠিক দিশায় নিয়ে যেতে গেলে দরকার সঠিক মাঝি নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর, এডিডিএতে যার যার ওপর ভরসা করেছেন, অপদার্থ সেইসব মাঝিরাই এর হাল খারাপ করে দিয়েছে। এখন কেঁদে কি হবে?” পরিমলবাবু গোঁড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভক্ত। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর সিটিসেন্টার এলাকায় গুচ্ছ গুচ্ছ গোলযোগের নথি তৃণমূল, প্রশাসন-সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন দফায় দফায়। এখন তার গলায় ক্ষোভ, হতাশা। আর এক লড়াকু সমাজকর্মী ভূদেব সামন্ত। সবকিছু দেখে শুনে ইদানিং মুখে কুলুপ এঁটেছেন। মুখে কুলুপ আরেকজনেরও। তিনি সংস্থার চেয়ারম্যান-তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিনের সেই তাপস এখন ‘আড্ডা’র বড়লাট। একটা উন্নাসিক গরীমায় সর্বদা আপ্লুত থাকতে পছন্দ তার। ভালমানুষটির মতো গুটিগুটি দিন কাটাচ্ছেন। সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান, যিনি তার ডেপুটি, সেই কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত তাপসের ‘সুখীপায়রা’ সেজে থাকায় বিরক্ত। ঝাঁঝের সাথে বলেই বসলেন, “ধুর! বরবাদ হয়ে গেল এডিডিএ। কোনো কাজ হয়না। একটা সামান্য কাজের জন্যও বছরভর ঘুরে বেড়াতে হয়। আমাদের মতো লোকেরা যদি হয়রানি হয়, সাধারণ মানুষের তবে কি অবস্থা বুঝুন।” যিনি ভাইস চেয়ারম্যান এ তাঁর আক্ষেপ। হুমকিও দিয়ে রেখেছেন, “দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব” আর তাপস? না। উনি কথা বলেননা। সিপিএমের নেতা দুর্গাপুরের প্রাক্তন মেয়র রথীন রায় সম্ভবতঃ ওর রোল মডেল। সাংবাদিক দেখলে, ‘সব ব্যাটাকে ছেড়ে বেঁড়ে ব্যাটাকে ধর’। আসল প্রসঙ্গে কিছুতেই আসতে চাননা। কেঁচো খুঁড়তে কি যেন বের হয় বলে……… (চলবে)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments