eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরের ব্যাংক লুঠ রেলকর্মীর,সাদাকালো জামা, জিন্স, চশমাচোখে

দুর্গাপুরের ব্যাংক লুঠ রেলকর্মীর,সাদাকালো জামা, জিন্স, চশমাচোখে

নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: এক রেল কর্মীকে কৌশলে ব্যবহার করে জাল সইয়ে চেক ভাঙ্গিয়ে সিটিসেন্টারের ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনার আঞ্জাম দিয়েছে জামতাড়া গ্যাং?

একটি সিসিটিভি ফুটেজ, একটি আধার কার্ডের ফটোকপি আর একটি সেলফোন নম্বরের টাওয়ার লোকেশনের সূত্রে তদন্তকারী সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চের আধিকারিকেরা বৃহস্পতিবার এমন দাবি করে জানিয়েছেন, “ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ স্টাফদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ নিশ্চিৎ ভাবেই রয়েছে দুষ্কৃতী গ্যাংয়ের। নাহলে, হঠাৎ করে বাইরে থেকে উড়ে এসে একজন এতো তথ্য, এতো সাহস, আস্কারা পেলো কি করে?”

দুঃসাহস তো নিশ্চয়ই, কিন্তু আস্কারা? এক তদন্তকারী অধিকারিক বলেন, “একটা লোক ব্যাংকে এলো, অন্যজনের ভুয়ো অথরাইজেশন নিয়ে চেকবই তুললো। সেই বইয়ের পাতা উল্টিয়ে ওদের সামনেই বেয়ারার চেক ইচ্ছেমতন সই করে ১.৫ লাখ টাকার অঙ্ক লিখে জমা করলো, আর টাকা তুলে উধাও হয়েগেলো? এমন হয় নাকি?” সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে, বারে বারে চেষ্টা করেও সই না মেলায় বছর ৩৫’র ওই যুবক দুষ্কৃতী কমলেশ মারান্ডি ব্যাংক থেকে তার হাতে দেওয়া অন্যের চেক বইটির পরপর ৪ টি পাতা ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে। ব্যাংকের ভেতরেই অফিসারের সামনে বইয়ের পাঁচ নম্বর একটি পাতায় সে স্বাগতার নামে সইও করলো, আর তাকে টাকাও দিয়ে দেওয়া হলো নির্দ্বিধায়। আস্কারা ছাড়া এটা কি করে সম্ভব?” কমলেশের পরনে ছিল সাদাকালো চেক জামা, কালো জিন্সের প্যান্ট আর চোখে চশমা। তার সাথে ব্যাংক কর্মীদের আর জামতাড়া গ্যাংয়ের যোগসূত্র খুঁজছে পুলিশ।

তাছাড়া, মঙ্গলবার স্বাগতা সিটিসেন্টারের ইউনাইটেড ব্যাংকের (এখন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক) ব্রাঞ্চে যে চেকবই নিতে এসেছিলেন, সেই চেক ব্যাংকের হেফাজতে থাকা অবস্থাতে কি করে ওই গৃহবধূর সই ওই পাতায় হয়ে গেল? আবার তিনি পৌঁছবার আগেই তড়িঘড়ি কেনইবা ওতো মোটা অংকের টাকা তাকে ফোনে কনফার্ম না করে কমলেশের হাতে তুলে দেওয়া হলো? টাকা নেওয়ার সময় ওই কমলেশ স্বাগতার নামে করা সইটি কোনমতে কাছাকাছি মেলাতে পারল, আর চেকের উল্টোপিঠে হিন্দিতে নিজের নামকাওয়াস্তে একটি সই করলো, প্রমাণস্বরূপ নিজের আধারকার্ডের একটি ফটোকপি জমা দিয়ে দ্রুত টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলো।নগদ দেড় লাখ টাকা অন্যের একাউন্ট থেকে তুলতে গেলে সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে ব্যাংক ওই আধারের প্রতিলিপি জমা নিয়েছিল। ওই প্রতিলিপিতেই অভিযুক্ত কমলেশের একটি সেলফোন নম্বর পায় ব্যাংক। ওই নম্বরের সুত্র ধরেই কমলেশ যে একজন রেলকর্মী তা জানতে পারে সাইবার ক্রাইম বিভাগ। এদিকে, ব্যাংকের সিটিসেন্টার ব্রাঞ্চের চিফ ম্যানেজার সুনীল সাহু এদিন বলেন, “আমরাও থানায় পৃথকভাবে একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আমরা পুলিশকে তদন্তে সবরকম সহায়তা করে আসছি।”

বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় সাইবার ক্রাইম বিভাগের আধিকারিকেরা স্বাগতাকে আলাদা করে তার বয়ান নথিভুক্ত করার জন্য আসানসোলে তলব করেন। শুক্রবার স্থানীয় দুর্গাপুর থানায় পৃথকভাবে একটি জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে, বলে একটি সূত্র জানায়। স্বাগতা এদিন বলেন, “এই অপরাধীকে ধরার জন্যে পুলিশ যতবার বলবে, যেখানে বলবে অভিযোগ করতে ছুটে যাবো। শুধু কমলেশকে ধরলেই কি সব শেষ? ব্যাংকের যেসব লোকেরা সেদিন আমাকে অকথ্য ভাষায় নোংরা কথা বলল, চোর সাজাতে চাইলো, ওদের নিশ্চই এই লুটপাটের সাথে যোগ আছে। ওরা ওখানেই আমাকে তাড়িয়ে দিয়ে সব কেন ধামাচাপা দিতে চাইছিল?” সাইবার ক্রাইম বিভাগের এসিপি বিশ্বজিৎ নস্কর বলেন, “তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে। আমরা বেশ কিছু নথি পেয়েছি। কিছু প্রাথমিক জেরাও হয়েছে। আরো কয়েকজনকে ডাক পাঠানো হবে।” যে অবাঙালি মহিলা অফিসার সেদিন স্বাগতাকে বেশি অপমান করেন, সেই অধিকারীক ঘটনার পরদিনই কেন ব্যাংকে অনুপস্থিত রইলেন, তার খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments