eaibanglai
Homeএই বাংলায়গোঁসাই বাগানে অনুষ্ঠিত হলো ভাদু উৎসব

গোঁসাই বাগানে অনুষ্ঠিত হলো ভাদু উৎসব

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, দুর্গাপুরঃ- লোক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে তৈরি শিল্প হলো লোকশিল্প। শিল্পের উন্নত ধারা থেকে বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষের তৈরি শিল্পকে লোকশিল্প বলা হয়। আলংকারিক নয় ব্যবহারিক উপযোগিতা অর্থাৎ আনন্দ পরিবেশন করাই এর মূল লক্ষ্য। তাইতো এখানে সাধারণত জনপ্রিয় ঐতিহ্যের দিকে নজর দেওয়া হয়। একটা সময় বিশেষ বিশেষ ঋতুতে ভাদুগান, টুসু, বোলান প্রভৃতি লোকশিল্প বাংলার মানুষকে উদ্বেলিত করত। সন্ধ্যে হলেই পাড়ায় পাড়ায় শুরু হয়ে যেত রিহার্সাল। ভাদ্র মাসের শুরুতে তারা ভাদু নিয়ে বেরিয়ে পড়ত। চৈত্র মাসে শিবের গাজনের সময় হতো বোলান গান। কিন্তু আজ সব স্মৃতি। কোথায় যেন সব হারিয়ে গেল। তার মাঝে কোথাও কোথাও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য চলে মরিয়া চেষ্টা।

গত ২৭ ও ২৮ শে আগষ্ট এই দু’দিন ধরে ভাদু উৎসবের সাক্ষী থাকল দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের পাশাপাশি দুই গ্রাম গোগলা, মাদারবুনি গ্রামের বাসিন্দারা। সৌজন্যে ইসিএলের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক সোমনাথ দাস চান্দল্য।

মোটামুটি তার উদ্যোগে গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে গোগলার গোঁসাই বাগানে হচ্ছে ভাদু উৎসব। প্রসঙ্গত গ্রামের যাবতীয় অনুষ্ঠান এই গোঁসাই বাগানের মনোরম পরিবেশে আয়োজিত হয়ে থাকে। প্রথম দিন অর্থাৎ ২৭ শে আগষ্ট মোটামুটি জায়গাটা অনুষ্ঠানের উপযুক্ত করে নেওয়া হয়। পরের দিন সকাল থেকে শুরু হয় ভাদু উৎসব। তৈরি করা হয় অস্থায়ী মন্দির, ভাদুর প্রতিমা। গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতে হয় পুজো। এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান।

দাস বাবুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সিউড়ি, জয়দেব ধাম, গৌরবাজার, কাঞ্চনপুর প্রভৃতি জায়গা থেকে বিশিষ্ট শিল্পীরা উপস্থিত হন। গোগলা, মাদারবুনি গ্রামের শিশু শিল্পীরা তো ছিলই।

ভাদুগানের তালে তালে গ্রামের মেয়ে রিয়া, অর্চনা, প্রিয়া, মিতা, শিল্পীদের নাচ যেমন দর্শকদের মুগ্ধ করে তেমনি অতীতের মত এবারও অনাথবন্ধু ঘোষ, রূপা ও তার টিম সহ অন্যান্য টিমের সদস্যরা দর্শকদের মুগ্ধ করে। মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হয় বাউলগান। কার্যত সেটি প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। দুদিনই গ্রামবাসীদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যায়।

কলকাতার বাসিন্দা সোমনাথ বাবু কর্মসূত্রে তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে গোগলা গ্রামে আছেন। স্বাভাবিক ভাবেই গ্রামবাসীদের সুখদুঃখের সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছেন। অবসরের পরেও মাসে পনেরো দিন এখানেই থাকেন। মূলত তার উদ্যোগেই এই উৎসব। সেই সোমনাথ বাবু বললেন – চেষ্টা করি লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। তার আশা অদূর ভবিষ্যতে আবার লোকশিল্প বাংলার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়বে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments