নিজস্ব সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ– ভগবান বুদ্ধের স্মৃতি ছড়িয়ে আছে বর্ধমানের পথে প্রান্তরে। সম্রাট অশোক বুদ্ধের দেহবস্তু সংগ্রহ করে তা ছড়িয়ে দিতে চুরাশি হাজার স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন এশিয় মহাদেশে। বৌদ্ধধর্মের মহাযান শাখা থেকে কালচক্রযান, সহজযানের মতো শাখাগুলি বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রসারলাভ করেছিল। তার সাক্ষ্য বহন করে ‘চর্যাপদ’-এর মতো সাহিত্য নিদর্শন এবং বাংলার বৌদ্ধস্তূপগুলির ধ্বংসাবশেষ। তারই মধ্যে অন্যতম পশ্চিম বর্ধমানের বুদবুদের গলসি ১ নম্বর ব্লকের চাকতেঁতুল গ্রাম পঞ্চায়েতের ভরতপুরের বৌদ্ধস্তূপটি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে এটি অষ্টম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল। ইট দিয়ে তৈরি এই স্তূপের আশেপাশ থেকে মৃৎপাত্রের অংশও মিলেছে। এই এলাকায় যথাযথ খনন কাজ চালালে প্রাক-তুর্কি বিজয় পর্বের বর্ধমানের বৌদ্ধ সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন অধ্যায় যোগ হবে বলেই মনে করেন ঐতিহাসিকরা। ১০৭১ সালে এই স্তূপের নির্দর্শন মেলে। তখন বুদ্ধদেবের মূর্তি সহ বেশ কিছু সামগ্রী উদ্ধার হয়। পুরাতত্ত্ব বিভাগের পক্ষ থেকে
গোটা এলাকা অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু পরে খনন কার্য বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সকারের উদ্যোগে ফের শুরু হয়েছে বৌদ্ধ স্তূপের খনন কার্য। জানুয়ারি মাস থেকে শুরু হয়েছে এই খনন কাজ। তাতে প্রাচীন কিছু মাটির সামগ্রীও উদ্ধার হয়েছে।
শুক্রবার এই খননকাজ পরিদর্শন করেন বর্ধমান দুর্গাপুরের সাংসদ সুরেন্দ্র সিং আহলুওয়ালিয়া। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা সার্কেলের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের সুপারিনটেনডেন্ট রাজেন্দ্র যাদব এবং অন্যান্য আধিকারিকরাও। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এদিন সাংসদ বলেন, “দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপে প্রত্নতাত্ত্বিক দফতর উল্লিখিত প্রকল্পের আওতায় খনন কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার চায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে থাকা ঐতিহ্যকে বের করে আনা হোক যাতে মানুষ তাদের ঐতিহ্য সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে। ” পাশাপাশি এই কার্যে সব রকম সহযোগীতার আশ্বাসও দেন তিনি।
প্রসঙ্গত,বহুদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দারা রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের কাছে এই স্তূপের খনন কাজ চালিয়ে দামোদর পারের প্রাচীন ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আবেদন জানিয়ে আসছে।