নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: শাসক, পুলিশকে ‘শুয়োরের …’ বলে বিতর্কে জড়ালেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি। যা নিয়ে ছি ছি রব উঠলো শাসক থেকে বিরোধী শিবিরেও।
বৃহষ্পতিবার শহরের গান্ধিমোড় হয়ে জাতীয় সড়কের সার্ভিস রোড ধরে একটি প্রতিবাদ মিছিল ছিল সিপিএমের। গতকাল এখানকার সিটিসেন্টারে সিপিএমের পাকাপোক্ত দলীয় কার্যালয়ে বোমাবাজির প্রতিবাদেই ছিল এই মিছিল। ওই মিছিলে গৌরাঙ্গর সাথে হাঁটেন প্রাক্তন মন্ত্রী বংশগোপাল চৌধুরী, ডি ওয়াই এফ আই রাজ্য নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি সহ যুব ও দলীয় ক্যাডার, সমর্থকেরা। মিছিলের লক্ষ্য ছিল দুর্গাপুর নগর নিগম ভবন। পুলিশ ওই মিছিল সার্ভিস রোড থেকে শহরে ঢোকার মুখেই আটকে দেয়। ওদিকে, মিছিলটি গান্ধিমোড় ধরে সেন্ট্রাল লাইব্রেরির পাশ দিয়ে ক্ষুদিরাম সরণী বরাবর আসার পরিকল্পনা থাকলেও, আগেই রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে পথ বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ধাক্কাধাক্কি করা হয় প্রাক্তন মন্ত্রী বংশগোপালকেও।
সার্ভিস রোডে বিশাল পুলিশের বাহিনী মিছিল আটকে দিতেই ফোঁস করে ওঠে সিপিএম নেতৃত্ব। সেখানেই তারা ঘাঁটি গেড়ে পথ অবরোধ করলে, বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এসময়ই, মাইক হাতে নিয়ে সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি চোখ বড়ো বড়ো করে রেগে রাজ্যের শাসক তৃণমুল কংগ্রেস এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে কার্যত বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে বলতে শুরু করেন, “মুখ্যমন্ত্রী ফোঁস করার কথা বলছেন। ফোঁস করলেই ডান্ডা দিয়ে মাথা ভেঙে দিন। শুয়োরের বাচ্চাদের বিরুদ্ধে সর্বত্র টেটা তৈরি রাখুন। দেখেছেন তো শুয়োর কি ভাবে মারা হয়?” তারপরই দলীয় ক্যাডারদের, বিশেষতঃ যুবদের উত্তেজিত করতে তিনি বলেন, “হয় শুয়োর মারুন, নয় নিজে মরুন।” গৌরাঙ্গ নিজেও একজন প্রাক্তন বিধায়ক। ২০১১’য় রাজ্যে পালাবদলের সময় যে গুটিকয় সিপিএম প্রার্থী বিধায়ক হতে পেরেছিলেন, গৌরাঙ্গ তাদেরই একজন। বিধানসভায় অসভ্যতামির দায়ে একবার মার্শাল দিয়ে তাকে সদন থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলাও হয়। সেই গৌরাঙ্গই নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছে পরাজিত হন। নরেন্দ্রনাথ এখন শাসক টিএমসি’র জেলা সভাপতি। গৌরাঙ্গর কুকথার জবাবে তিনি বলেন, “ফসিল হয়ে যাওয়া একটা দল এখন কাদম্বরীর মতো মরিয়া প্রমাণ করতে চাইছে যে ওরা এতদিন মরেনি। বিজেপির কাছে গোটা দলটাই তো লিজ দিয়ে বসে আছে। ওই গৌরাঙ্গরা আদৌ তাদের দলের কাছেই প্রাসংগিক নয়। এখন হতাশায় কুকথা বলে দলটাকে মানুষের কাছে আরো অবাঞ্ছিত করে তুলছে।”
এদিকে, গতকালের বোমাবাজির ঘটনায় পুলিস নয় জন টিএমসি সমর্থককে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ এবং তৃণমূল কংগ্রেস এখনো হন্যে হয়ে কারণ খুঁজছে, কেনো এবং কার জন্য বিজেপির বন্ধের দিন সিপিএমের দলীয় অফিসে বোমা পড়ল! পাশাপাশি, দল এটাও খুঁজছে – তৃণমূলের লোকেরাই হঠাৎ কেনো রাজ্য সরকারের আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যানকে তাড়া করে আক্রমণ করতে গেলো, এবং চেয়ারম্যান কার্যত পালিয়ে বাঁচলেন টিএমসির মারকুটে লোকেদের হাত থেকেই? একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান নাকি ফোনে রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ চক্রবর্তীকে শাসক দলের নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই অভিযোগ জানিয়েছেন।