নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: আদানি গোষ্ঠীর হাতে জমি তুলে দিতে ডিএসপি’র বিনা নোটিশে তড়িঘড়ি উচ্ছেদ অভিযানের দরুন ইস্পাতনগরীর এ জোনে মঙ্গলবার মৃত্যু হল এক চা বিক্রেতার। যা নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়ল তরতর করে।
উত্তেজনার মূল কারণ – দুর্গাপুর ইস্পাত কতৃপক্ষের এই উচ্ছেদ নাকি পুরোপুরি অবৈধ। মৃত হকার সমীর চক্রবর্তী (৪৭)র পরিবারের তরফে এদিন সন্ধ্যায় দুর্গাপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ার করে দাবি করা হয়েছে – সমীরের মৃত্যুর জন্য ডিএসপি কতৃপক্ষই দায়ী। কারণ, মৃতের স্ত্রী অনিমা চক্রবর্তীর দাবি, “পঁচিশ বছরের বেশী সময় যাবৎ ওই ছোট্ট দোকানটিই আমাদের পরিবারের বেঁচে থাকার একমাত্র ঠিকানা। জমির মালিক নিশ্চয়ই ডিএসপি, কিন্ত দখলদার হঠানোর যে ন্যূনতম আইনি প্রক্রিয়া থাকা দরকার ওরা তার কিছুই করেনি। হঠাৎ এসে বলছে ভেঙে দেবে।” শহরের প্রান্তিক ধোবিঘাট এলাকার বাসিন্দা অনিমার অভিযোগ, “ওরা প্রক্রিয়া মেনে যদি আসতো আমরা জিনিসপত্র সরিয়ে নেবার সময় পেতাম। ওরা তা করলোনা। যমদূতের মতো আচমকা এসে আমার গরীব স্বামীর প্রাণটা কেড়ে নিলো।”
অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের নামে গত পাঁচদিন ধরে ইস্পাতনগরীর কিছু কিছু জায়গায় খাপছাড়া অভিযান চালাচ্ছে ইস্পাত কতৃপক্ষের নগর প্রশাসন। বিভিন্ন রাজনৈতি দল ও ইস্পাতের প্রায় প্রতিটি শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই এই উচ্ছেদের অগোছালো ধরন দেখে এর নেপথ্যের আসল উদ্দেশ্য নিয়েই প্রশ্ন তুলে অভিযোগ করা হয়েছে, যে, এটি আসলে নিখরচায় কেন্দ্র ঘনিষ্ঠ আদানি গোষ্ঠীর গ্যাস পাইপলাইন পাতার সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিএসপির লোকবল, মেসিনপত্র বেআইনি ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, কারোর সাথে কোনো আলাপ আলোচনা ছাড়াই। বেশিরভাগ জায়গায় হয় ২০ ফুট, নয় ৩০ ফুট দখলদার হঠিয়ে, দোকান ভেঙে দশে দশ পেতে চাইছে ডিএসপি।
মঙ্গলবার এরকম উটকো উচ্ছেদের আতঙ্কে শহরের অশোক এভিনিউ এলাকায় নিজের চা দোকানের মালপত্র সরাতে গিয়েই ইট চাপা পড়ে মারা যান হকার সমীর। তারপরই দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান তৃণমুল কংগ্রেসের নেতা কর্মীরাও। সিপিএম থেকে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া পঙ্কজ রায় সরকার এদিন দাবি করেন, “উচ্ছেদ অভিযান করার আগে দখলদারকে নোটিশ দিয়ে জিনিসপত্র সরিয়ে নেবার সময় দিতে হয়। শুনানি করতে হয়। ডিএসপি কর্তৃপক্ষ এসবের কোনোটাই না করে সরাসরি বুলডোজারের পথে হাঁটতে চাওয়ায় এই গরীব মানুষটির এভাবে মৃত্যু হলো। এর দায় ডিএসপিকে নিতেই হবে।” হকারের মৃত্যুর পর তার দেহ নিয়ে তার পরিবারের সাথে অন্যান্য হকারেরা সরাসরি অরবিন্দ এভিনিউয়ের দুর্গাপুর থানায় ডিএসপির বিরূদ্ধে বিচার চাইতে দলে দলে হাজির হয়। সেখানে অল্প পরেই পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা পার্টি অফিস থেকে পৌঁছে যান স্থানীয় তৃণমুল কংগ্রেস নেতৃত্বও। পঙ্কজ বলেন, “আমাদের পার্টির জেলা সভাপতি এই মর্মান্তিক মৃত্যুর দরুন মৃত হকারের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে নগদ ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষনা করেছেন।” তার সংযোজন, “আমরা দলের পক্ষে ওই হকারের মৃত্যুর দায় ডিএসপিকেই নিতে হবে বলে দাবি জানানোর পাশাপাশি হকারের পোষ্যদের চাকরির জোরালো দাবি তুলেছি।” পুলিশের পক্ষ থেকে এদিন সন্ধ্যায় ডিএসপি কতৃপক্ষের সাথে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে আলোচনা করা হলেও, ইস্পাত কতৃপক্ষের তরফে এখনো চাকরির কোনো প্রতিশ্রুতিই দেওয়া হয়নি। তবে, সমীরের মৃত্যুতে অভিযানের প্রশ্নে কিঞ্চিৎ জড়োসড়ো এক আধিকারিক এদিন সন্ধ্যায় বলেন, “এখন কয়েকটাদিন একটু ধীরে চলাই ভালো বলে বরিষ্ঠ আধিকারিকেরা মনে করছেন।”