নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর: নিরাপত্তা রক্ষী সরবরাহকারী সংস্থার মালিক তিনি, তাই সম্ভবত গায়েগতরে জোর আর কোমরের জোর – দুটোই সমানতালে বাড়াবাড়ি রকমের বেশি, তাই কি দিনেদুপুরে, সকলের চোখের সামনেই বুকবাজিয়ে সরকারি রাস্তা জবরদখল করে টগবগিয়ে হাঁকাচ্ছেন তার সাধের পেল্লাই প্রাসাদ আর ‘আমুদে’ চোখে তা দেখে চোখ-মুন্দে শীতের রোদ পোহাচ্ছেন স্থানীয় নগর নিগম এবং আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা?
নেতা, নেতার ফেউ, আমলা, আমলার পোঁ-ধরাদের সাথে মাখামাখি করলে এ জমানায় নাকি সঅবই সম্ভব। এর নজির গত কয়েক মাসে বড্ড বেশি করে চোখে পড়ছে শহর দুর্গাপুরের পশ্ সিটিসেন্টার এলাকায়। কথায় কথায় ‘মেয়রের কাছের লোক’ বা ‘চেয়ারম্যানের কোলের ছেলে’রা যখন যেমন তখন তেমন করে লুঠে সাবাড় করছেন সরকারি জমি সম্পত্তি, পথঘাট, পুকুর ডোবা, ডাঙ্গা ডহর। সবাই সবই দেখে, বলেনা-করেনা প্রায় কিচ্ছুটি।
তাই, দিনে দিনে প্রশ্রয় পেয়ে সিটিসেন্টারের বুকে আগাছারাই এখন ঘোরকলির ‘পাপের জঙ্গল’। এখানে তাই ‘জোর যার মুলুক তার’। আধিকারিকদের শীত ঘুমে থাকার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর মওকাপরস্ত ব্যবসায়ী, মাস্তান, মাফিয়া, দলবদলু নেতা ও দালালদের চক্র একচেটিয়া ভাবে সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ নির্মাণের নজির গড়ছে রোজদিনই।
এমনই একটি ঘটনার কথা এদিন জানা গেল সিটিসেন্টারের অভিজাত বেঙ্গল অম্বুজার এলাকার ১৯ নম্বর স্ট্রিটে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ দ্বারা নির্ধারিত ফুটপাত ও রাস্তার কমন স্পেস অবৈধভাবে দখল করে এক বিশাল অট্টালিকা নির্মাণ করে চলেছেন এক সিকিউরিটি গার্ড সাপ্লাই সংস্থার মালিক। এলাকার বাসিন্দাদের আরো অভিযোগ আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ দ্বারা রাস্তার নামাঙ্কিত ফলকটিক উপড়ে ফেলে দিয়ে তার জায়গাটিও দখল করে নেওয়া হয়েছে ঐ অট্টালিকা নির্মাণের স্বার্থে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ‘দুর্গাপুর নগর নিগম, বেঙ্গল হাউসিং অ্যাসোসিয়েশনে’র তরফে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ ও একাধিক স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদের কাছে অভিযোগ করেও কোন সূরা পাননি। নাম প্রকাশে অনচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, যিনি এই অট্টালিকাটি নির্মাণ করছেন তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং তার সাথে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ ও নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর একাধিক সদস্যের সাথে গাঁট ছড়া থাকার ফলে কেউ কোনভাবে তাকে বাধা দিচ্ছেন না।
অবৈধ দখলের অভিযোগ জমা পড়ার পর সেই নির্মীয়মান বাড়িটির সামনে গেলে দেখা যায় – সরকারি রাস্তার ফলক উপড়ে ফেলা হয়েছে তো বটেই, ওই ফলকটিকে অগোছালো অবস্থায় বাড়িরই দেওয়ালের গায়ে লাগিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে। যে ‘অট্টালিকা’র বিরুদ্ধে এই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের সেই অট্টালিকার নির্মাণকার্য চলছে জোর কদমেই। উপস্থিত এক নির্মাণ কর্মীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বাড়িটি লক্ষ্মী নারায়ন মন্ডল নামে স্থানীয় ফরিদপুর গ্রামের এক বাসিন্দার, যিনি নাকি ‘সিক্রেট আই’ নামক একটি বেসরকারি নিরাপত্তা রক্ষী সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার। তার নির্দেশ মতোই রাস্তার ওই জায়গা পর্যন্ত দেওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে বলে ঐ নির্মান কর্মী জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে এই অবৈধ দখলদারি প্রসঙ্গে মন্ডল জানান, “আমি সমস্ত রকম সরকারি নিয়ম মেনেই ওই বাড়িটি কিনে পুনরায় সুসজ্জিত ভাবে নির্মাণ করেছি। সরকারি যে ফলকটি উপড়ে ফেলার কথা বলা হচ্ছিল সেটি রাস্তার ধারে পড়েছিল ভাঙাচোরা অবস্থায়।” তিনি বলেন, “সেটিকে নিয়ে এসে সযত্নে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ও তার ওপর সমস্ত স্ট্রিট নম্বর গুলি সুসজ্জিত ভাবে পুনরায় লিখে সেটি পাঁচিলের গায়ে ঠেস দিয়ে রেখেছি।” কেন তিনি ফুটপাত দখল করলেন? – এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি কোন ফুটপাতই দখল করিনি। যতটা আমার জায়গা আমি ততটাতেই বাড়ির পাঁচিল দিয়েছি।” স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে লক্ষী নারায়ণ মন্ডল কিছুদিন আগে এই বাড়িটি কিনেছিলেন এবং এখন তা পুনর্নির্মাণ করছেন। দুর্গাপুর নগর নিগমের প্রশাসক মন্ডলীর একজন ও আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের দুই দুর্নীতিকগ্রস্ত নেতা ও আধিকারিকের যোগসাজশে তিনি নাকি এই ‘অবৈধ’ কাজটি করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের এক অধিকারী কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান তাদের কাছে এখনো কোনোভাবে কোন অভিযোগ আসেনি। প্রশ্ন হল আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কোন নজরদারি কি নেই তার নিজের জায়গার রক্ষণাবেক্ষণের ওপর। কি করে একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী কোনো অনুমতি ছাড়াই একটি ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত সহ ফলকটিও দখল করে নিলেন ? এ বিষয়ে দুর্গাপুর নগর নিগমের প্ল্যানিং সেকশনের আধিকারিক সুজয় বন্দোপাধ্যায় কে প্রশ্ন করা হলে তিনিও প্রায় একই সুরেই কথা বলেন, “কোথাও কোন অভিযোগ আমাদের কাছে করা হয়নি।”
অন্যদিকে একটি সূত্র মারফত জানা গেছে এদিন সন্ধ্যায় হঠাৎই আসানসোল দূর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের একটি আধিকারিকদের দল ঘটনাস্থলটি প্রায় আধঘন্টা ধরে পরিদর্শন করেছেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে একটি রিপোর্টও তৈরি করেছেন। তা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই জমা পড়ার কথা সংস্থার চেয়ারম্যান তাপস বন্দোপাধ্যায়ের কাছে।
এখন অপেক্ষা, কি ব্যবস্থা নেন চেয়ারম্যান ?