eaibanglai
Homeএই বাংলায়শিল্পাঞ্চলের হাসপাতাল গুলিতেও আর জি কর কাণ্ডের ছায়া ? পর্বঃ- ১

শিল্পাঞ্চলের হাসপাতাল গুলিতেও আর জি কর কাণ্ডের ছায়া ? পর্বঃ- ১

মনোজ সিংহ,দুর্গাপুর: শিল্পাঞ্চলের কসাইখানা থেকে সুস্বাদু নারী মাংস নাকি পৌঁছায় খোদ মহানগরের স্বাস্থ্য দপ্তরের অলিন্দে, এমনকি কিছু স্বাস্থ্যকর্তাদের মনপসন্দ গোপন আস্থানায়।

আর জি কর হাসপাতাল কাণ্ডে উত্তাল বাংলায় সিবিআই তদন্তের মাঝে চাঞ্চল্যকর এমনই অভিযোগ উঠে আসছে শিল্পাঞ্চলের বেশ কিছু হাসপাতাল সম্পর্কে।

ওই সব বেসরকারি হাসপাতালের কিছু বিধাননগরে তো কিছু আবার সিটি সেন্টারের খাসতালুকে বলে জানা যাচ্ছে। জনসমক্ষে এরা চিকিৎসা পরিষেবার কেন্দ্র হলেও এদের অন্দরমহলে যে গভীর অন্ধকার, সেখানে গুমড়ে মরে অগুন্তী নার্স,আয়ার হাহাকার, শুকিয়ে যায় অশ্রু তার খোঁজ পায় না কেউ।

আসানসোল, দুর্গাপুর, রানীগঞ্জের প্রায় ডজন খানেক হাসপাতাল, নার্সিংহোমে যৌন শোষণের ঘটনার কথা প্রায়শ্ই শোনা যায়। তবে চাকরি বাঁচাতে পেটের টানে, অভাবে, আবার ক্ষেত্র বিশেষে প্রভাবশালী মালিকপক্ষের হুমকির ভয়ে এইসব শোষিত মেয়েরা মুখবুঝে আত্মসমর্পণ করে মেনে নেয় সব ন্যাক্কারজনক অন্যায় আবদারের চাহিদা। তবে এর দরুন কারু-কারু আবার কপালও খুলে যায় রাতারাতি। গতর খাটিয়ে নিজের নিজের ঘর দুয়ারের চাকচিক্য যেমন তাদের বাড়ে, তেমনি বাড়ে তাদের শরীরের জেল্লা আর পোশাক আশাকের বহর। ওদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে ওইসব হাসপাতালের ব্যাংক ব্যালেন্স, স্বাস্থ্য মহলে তাদের প্রভাব বা মসৃণ হয় ওপর তলায় তাদের যাতায়াতের ঢালাও সুযোগ।

“এমন যদি অবস্থা তো এরকম মেয়েরা কোনদিন থানায় বা পুলিশ অফিসে এসে তাদের অভিযোগ কখনো জানায় না কেন?” – প্রশ্ন শিল্পাঞ্চলের পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তার। তার মতে, “সরকার তো মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন বন্ধের জন্য কড়া আইন এনেছে, তারপরও মহিলারা এত চুপচাপ থাকলে আমরা কি আর করতে পারি?”

কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় ধর্ষিত চিকিৎসক সম্ভবত অপরাধীদের চিহ্নিত করে ফেলাই সরকারি পরিকাঠামোর মধ্যেই তাকে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়। যেখানে আবার নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘন্টায় মতায়েন থাকে পুলিশ, অথচ সেখানেই এই মর্মান্তিক ঘটনা। তাই এই শিউরে ওঠা ঘটনার পর শিল্পাঞ্চলে বেসরকারি হাসপাতালে যৌন শোষণের শিকার নার্স, আয়াদের কি আর সে হিম্মত হবে পুলিশের দরজায় কড়া নাড়ার ? কারণ এইসব হাসপাতালের মালিক পক্ষের নাকি দারুন দহরম মহরম প্রশাসনের খুবই উঁচু তলায়। এইরকম হাসপাতালের মালিক পক্ষের বেশ কয়েকজনকে আর জি কর কাণ্ডে প্রতিবাদের নামে ন্যাকামি করে নাকি মহকুমা শাসকের দপ্তরে ডেপুটেশন দেওয়ার নাম করে খোদ মহকুমা শাসকের পাশে দাঁড়িয়ে মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে বড় বড় কথা বলতেও দেখা গেছে সম্প্রতি বলে অভিযোগ।

সিটি সেন্টারের গমগমে বাজার পাড়ায় জাঁকিয়ে বসা একটি বেসরকারি হাসপাতাল শহরবাসীর কাছে এখন কসাইখানা বলেই চিহ্নিত। কারণ সম্প্রতি চিকিৎসার নামে একটি কিশোরকে হত্যা করে মুছলেখা দিয়ে ওই কিশোরের জীবনের দাম গোড়ায় ৫০ লক্ষ টাকা ধার্য করে দিয়েছিল ওই হাসপাতালের মালিকপক্ষ। কিশোর হত্যার নগদ মূল্য পরে দামাদামি করে শেষে ১০ লক্ষ টাকায় রফা করে বিষয়টি ধামাচাপা দেয় ওই কসাইখানার কর্মকর্তারা। এবার সেই কসাইখানার মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক থেকে শুরু করে তিন মালিকের ভেতর দুজনের বিরুদ্ধে সেখানে কর্মরত নার্সদের ওপর নির্বিচারে যৌন শোষণের চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে। দিনের পর দিন বাছাই করা নার্সদের নীরবে অশ্রুপাত করে সেখানে ওই কার্যনির্বাহী আধিকারিকের শয্যাসঙ্গী হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। নির্যাতিতা নার্সদের একাংশের অভিযোগ, “শরীর না দিলে চাকরিটাই থাকবে না। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় মেনে নিলেও বেশিরভাগ নার্সই শত বাধা দিয়েও শেষে মেনে নিতে বাধ্য হয়। আর যে সকল নার্সরা ওই হাসপাতালের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের অন্যায় আবদার মেনে নিতে অস্বীকার করেন তাদেরকে চাকরি ছাড়তেও বাধ্য হতে হয়।” আরো অভিযোগ, ওই বেসরকারী হাসপাতালেরই দুই কর্মী অয়ন ও শিবু নাকি ওই মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিকের এজেন্ট হিসেবে হাসপাতালের সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী নার্স ও আয়াদের তার চেম্বারে পৌঁছে যেতে বাধ্য করে। নার্সদের আরো ভয়ংকর অভিযোগ, “উনি চেম্বারে ডেকে আগে শরীরের আপত্তিকর গোপন জায়গায় হাত দিয়ে পরখ করে বেছে নেন।” আপত্তি করলেই নাকি চাকরি খাওয়ার হুমকির সাথে সাথে চুরির অপরাধের দুর্নামও তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, বলে অভিযোগ। “তিনি বারবার এই রকম করে অরাজিদের পথে আনেন নিজের চাহিদা মেটাতে,” নির্যাতিতাদের দাবি। এমনকি বেশ কিছুদিন আগে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজও এমন স্পর্শের দৃশ্য নাকি দেখা গেছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনার পরেই নাকি হাসপাতলে এ বিষয় নিয়ে একটি বড় গন্ডগোলও হয়েছিল বলে জানা গেছে ।

এরকম যখন তার চরিত্র, তাহলে সে কথা হাসপাতালের মালিকদের কানে কেন তোলেন না নির্যাতিতা নার্সরা ? এই প্রশ্ন শুনে দুজন নার্স বললেন, “বিড়ালকে মাছভাগ করতে দেওয়াটা যা এখানকার মালিকদের কাছে কমপ্লেন করাও তা। শুধু ওই আধিকারিককে শরীর দিলেই চলবে না, শকুনের মতন ওত পেতে বসে থাকা দুজন ধোপদুরস্ত মালিক আবার আরো বেশি সেয়ানা।” কিরকম ? তারাও কি নার্সদের ব্যবহার করে নিজেদের লালসা মেটাতে ? এই প্রশ্ন শুনে ঐ নার্সরা সমস্বরে বলে ওঠেন, “না না। ওরা লালসা মিটাই না। ওরা তাদের ব্যবসা বাড়ায় আমাদের শরীর ওপরতলার লোককে ভাড়া খাটিয়ে। ” ওই দুই নার্স এর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক – তাদের আঙুল যাদের দিকে তাদের একজন নাকি সিটি সেন্টার ছাড়াও বিধাননগরের আরেকটি বিতর্কিত হাসপাতাল চালান। যদিও বিধাননগরের ওই হাসপাতালটির বৈধতা ও অন্যান্য অনেক কাজের বিরুদ্ধেও বহু অভিযোগ রয়েছে। ঐ দুজনের আরেকজন নাকি ঝকঝকে জামাকাপড় গায়ে বড় বড় ঠিকাদারির পাশাপশি সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল, জমি বাড়ির দালালির কাজ করেন বিভিন্ন এলাকায়।

কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, তারা এইসব নার্সদের নিয়ে কিভাবে ব্যবসা বাড়িয়ে যাচ্ছেন ? সুত্র মারফত জানা যায়, বাছাই করা নার্সদের নিয়ে তারা নাকি কলকাতার স্বাস্থ্য দপ্তরের বড় বড় কর্তা, আমলা এবং দুর্গাপুরের বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতা, অফিসারদের খুশি করেন। ফলে, একের পর এক ঠিকাদারি বরাততো বটেই, তরতর করে শ্রীবৃদ্ধি হয় তাদের কসাইখানারও। তাই তাদের বিরুদ্ধে শত বার দুর্নীতির তীব্র অভিযোগ সময়ে ধামাচাপা পড়ে যায়। এদের সাথে কলকাতার সদ্য প্রাক্তন এক স্বাস্থ্যকর্তার নাকি দারুণ দোস্তি। এই দোস্তি নাকি আরো জব্বর হয়েছে তাদের নিজের হাসপাতালের সুন্দরী নার্সকে ঐ কর্তার গোপন আস্থানাই পৌঁছে দিয়েই, বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। শহরের প্রভাবশালী অনেকেই এদের কাজকারবার জানলেও স্রেফ বিশেষ বিশেষ উপধোওকনের দরুনই চোখ কান বুজে তারা পাশ কাটিয়ে চলে যান বলে অভিযোগ। তাই বিনা বাধায় রমরমিয়ে কসাইখানায় জবাই হয় একশ্রেণীর নার্স, আয়ারা। পকেট গরম হয় দালাল,হাসপাতাল মালিকদের।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments