স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুরঃ- ‘অপা’র পর তাহলে দুর্গাপুরের ‘অতা’ – অনামিকা-তাপস। পুলিশ যাদেরকে ‘বান্টি বাবলি’ জুটি বলছে।
রাজ্যে সম্প্রতি শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যেই এনফর্সমেন্ট ডাইরেকটোরেট এর হাতে ধরা পড়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একদা মন্ত্রী তথা হেভিওয়েট নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তার সঙ্গেই ধরা পড়েছেন তার সুন্দরী মডেল বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জি। উদ্ধার হয়েছে কয়েক কোটি টাকা নগদ, কয়েক কেজি সোনা ও গোপন নথি। এনফর্সমেন্ট ডাইরেকটোরেটের তদন্তে উঠে এসেছে – এই কোটি কোটি নগদ টাকা নাকি শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য ঘুষ হিসেবে নেওয়া হয়েছিল। গোটা রাজ্য এখন সেই তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। পথে-ঘাটে সব জায়গায় এখন একটাই আলোচনা পার্থ অর্পিতার জুটির এই নক্কারজনক কুকীর্তি।
শুধু পার্থ অর্পিতাই নয়, রাজ্যে পার্থ অর্পিতার মতো আরো অনেক এমন জুটি রয়েছেন যারা সাধারন বেকার যুবকদের চাকরির প্রলোভন দিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা লুঠ করেছেন। এমনই এক ‘বান্টি বাবলির’ হদিশ পাওয়া গেল সম্প্রতি দুর্গাপুরে। তাপস দাস ও অনামিকা মুখার্জি দাস নামের স্বামী-স্ত্রীর জুটি বেশ কয়েকজন যুবককে চাকরির প্রলোভন দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন কয়েক লক্ষ টাকা বলে অভিযোগ। কেউ কেউ বলছেন, এই জুটি সাফ করেছে কোটি টাকারও বেশি।
সম্প্রতি দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের নিউ টাউন শিপ থানা আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অনামিকা- তাপসকে গ্রেপ্তার করা হয় দুর্গাপুরের বিধাননগর সংলগ্ন রাঙ্গামাটি এলাকা থেকে। সূত্র মারফত জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ – অনলাইনে ভুয়ো পোর্টাল খুলে বাঁকুড়ার জেলার ডিভিসি মালিকানাধীনে মেজিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছে স্বামী-স্ত্রীর এই জুটি। মূলতঃ বাঁকুড়া এবং হুগলি জেলার বিশেষতঃ আরামবাগের যুবকদের ওই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতায় ‘বান্টি বাবলি’ স্বামী-স্ত্রীর এই জুটি। মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধীনস্থ ক্যানেলের চতুর্দিকে অস্থায়ীভাবে কাজও দেওয়া হয় যুবকদের। কিছুদিন বেতনও দেওয়া হয় অনামিকা মুখার্জি দাসের একাউন্ট থেকে, বলে তদন্তে নেমে জানতে পারে পুলিশ। জানাগেছে, ঐ যুবকদের কাছে স্থায়ী চাকরি দেওয়ার নাম করে ফের টাকার দাবি করে অভিযুক্তরা। কারোর কাছে তিন লাখ টাকা, আবার কারো কাছে ৪ লাখ টাকা, আবার কারো কাছে পাঁচ লক্ষ টাকা করে নেওয়া হয়, বলে অভিযোগ। দুর্গাপুরের রাঙ্গামাটি সংলগ্ন এলাকায় অফিস খুলেও বসেছিল অভিযুক্ত তাপস দাস এবং অনামিকা মুখার্জি দাস নামক ‘বান্টি বাবলি’ স্বামী-স্ত্রীর এই জুটি। দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হতেই তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তের ভিত্তিতে বিধাননগর থেকে গ্রেপ্তার হয় দুই অভিযুক্ত ‘বান্টি বাবলি’ স্বামী-স্ত্রীর ওই জুটিকে।
পুলিশের হাতে ধরা পড়া মাত্রই পার্থ চট্টোপাধ্যায় কাণ্ডের মতো এখানেও তাপস দাস নিজেকে অসুস্থ ও বুকে ব্যথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে পুলিশকে। বাধ্য হয়ে পুলিশ প্রথমে তাপস দাসকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল, পরে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে চিকিৎসার জন্য। অনামিকা মুখার্জী দাসকে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারক অভিযুক্ত অনামিকা মুখার্জি দাসকে আট দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। অনামিকা মুখার্জি দাসকে পুলিশি হেফাজতে নিয়ে তদন্তের গতি আনতে চাইছে পুলিশ।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বসে পার্শ্ববর্তী জেলা গুলিতেও চাকরির প্রলোভন দিয়ে টাকা আদায় করার ঘটনা এই প্রথম নয়। তবে দুর্গাপুরে এই প্রথম হিন্দি চলচ্চিত্রের বিখ্যাত চরিত্র ‘বান্টি বাবলির’ মত স্বামী স্ত্রীর কান্ড এই প্রথম ফাঁস ও গ্রেপ্তার হল। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে রাজ্যের বেকার যুবক যুবতীরা কি এখন ঘুষ দিয়ে অনৈতিক পথে চাকরি কেনার ‘সহজ’ পথই বেছে নিতে চাইছে? বেকারত্বের জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিজের পরিবারের সর্বস্ব ঘুচিয়ে কয়েক লক্ষ টাকার বিনিময়ে একটি স্থায়ী চাকরির লোভে এইসব প্রতারকদের হাতের কাঠের পুতুল হচ্ছে বেকার যুবক যুবতীরা – এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে শহরময়।