eaibanglai
Homeএই বাংলায়পুজোর মুখে ধাক্কা হেঁসেলেঃ চালকের জেদে ২.৫০ কোটি 'ফাইন' করল দুর্গাপুরের বটলিং...

পুজোর মুখে ধাক্কা হেঁসেলেঃ চালকের জেদে ২.৫০ কোটি ‘ফাইন’ করল দুর্গাপুরের বটলিং প্লান্ট

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের সাথে করা ত্রিপাক্ষিক চুক্তির দরুন পূজোর মুখে এবার চরম ফাঁপরে পড়লেন ট্রাক মালিকেরা। ড্রাইভারদের গাজোয়ারিতে এবার গাড়ি পিছু ৮ লাখ টাকা করে গুনাগার গুনতে হচ্ছে সেফ আইএনটিটিইউসির নেতৃত্বের অপদার্থতা আর গাফিলতির জেরেই। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মোতাবেক এইরকম মোট ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হবে ৩৩ টি লরিকে। পাশাপাশি আচমকা এমন পরিস্থিতিতে পড়ে গভীর সমস্যার আশঙ্কা করছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষও।

কিন্তু, সমস্যাটা আসলে কি?
বাড়ি বাড়ি রান্নার জ্বালানি গ্যাস সরবরাহের জন্য দুর্গাপুরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের এলপিজি বটলিং প্লান্ট। পাইপ লাইনের মাধ্যমে আসা তরল পেট্রোলিয়াম গ্যাস ওই প্লান্টেই ধাতব সিলিন্ডারে উচ্চ চাপের মাধ্যমে ভরা হয়। তারপর হাজার হাজার ভর্তি হওয়া এমন সিলিন্ডার প্রায় ২৫০ টি লরিতে বোঝাই করে দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাগুলির পাশাপাশি ঝাড়খণ্ডের পূর্বাঞ্চলের জেলা গুলির ডিলারদের কাছে পাঠানো হয়। এই পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয় বেসরকারি সংস্থার মালিকাধীন গাড়ি/লরি । ওই সব লরির ড্রাইভারদের চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ করে বেসরকারি ওই পরিবহন সংস্থাগুলি। সমস্যাটার জট এখানেই। যেসব লরি এ কাজে ব্যবহৃত হয় সেগুলির ড্রাইভারদের হরেক সময় হরেক দাবি দাবায় জেরবার ট্রান্সপোর্টাররা গত বছর শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি আর লরি ড্রাইভারদের সাথে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করে। যে চুক্তির মেয়াদ বৈধ ২০২৭ সাল অবধি। সর্বসম্মত ভাবে সিদ্ধান্তের পর ওই চুক্তিতে বলা হয়- প্রত্যেকটি লরি সিলিন্ডারের পরিবহনের দরুন ৩.৬৫ কিলোমিটার পিছু এক লিটার করে ডিজেলের দাম পাবে। কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ বেঁকে বসে লরি ড্রাইভাররা। তাদের দাবি ওই চুক্তি মানতে গিয়ে তাদের বিস্তর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই ওই চুক্তিটি মাঝপথেই বাতিল করে আলাদা একটি চুক্তি করতে হবে। তাদের নয়া শর্ত ৩.৬৫ কিলোমিটার পিছু নয় তেলের দাম দিতে হবে ৩.৫০ কিলোমিটার পিছু। অর্থাৎ দিতে হবে বাড়তি টাকা। আর এই নিয়েই বচসা লরি মালিকদের সাথে। সেই বচসার জেরে অনড় ট্রান্সপোর্টারদের ‘সিধে’ করতে ড্রাইভারেরা তাই গত ৫ই সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়ান অয়েল বটলিং প্ল্যান্টের ভেতরে লরি ঢুকিয়ে রেখে চলে আসে। সেই থেকে গত ২৪ দিন যাবত ৩৩ টি লরি বেআইনি ভাবে ঠাই দাঁড়িয়ে বটলিং প্লান্টের ভেতরে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ভেতরে বিনা অনুমতিতে এভাবে যানবাহন রাখা দণ্ডনীয়। পাশাপাশি ওই লরি গুলিতে বোঝায় হয়ে থাকা সিলিন্ডার গুলিও পরিসেবার কাজে লাগাতে পারছেনা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ। ইন্ডিয়ান অয়েল বটলিং প্ল্যান্টের মহাপ্রবন্ধক রাকেশ কুমার গতকাল মোট ৩১ টি ট্রান্সপোর্টারের তালিকা ধরে একটি নির্দেশ জারি করেছেন। ওই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, “যত দ্রুত সম্ভব ওই ৩১ টি ট্রাকে বোঝায় হয়ে থাকা সিলিন্ডার গুলি কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিন। নায় তো কর্তৃপক্ষ শীগ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে”। একটি সূত্র জানায়, ১০ চাকার ওই ৩১ টি লরিতে মোট ১৭ হাজার ৫০ টি সিলিন্ডার বন্দি হয়ে রয়েছে। পুজোর সময় এমনিতে রান্নার গ্যাসের চাহিদা বাড়ে। তার যোগান দিতে তৎপর কর্তৃপক্ষ এখন প্যান্টের ভেতরেই বেআইনি ভাবে আটকে থাকা সিলিন্ডার গুলিকে ফেরত পেতে মরিয়া। জানা গেছে আগামী সোমবারের মধ্যে হাতে সিলিন্ডার না পেলে লরি পিছু ৮ লক্ষ টাকা করে জরিমানা করবে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষ।

একদিকে কর্তৃপক্ষের এমন চরম হুঁশিয়ারি আর অন্যদিকে ড্রাইভারদের চুক্তি ভঙ্গ করে ‘অন্যায়’ আবদার। এর মাঝে পড়ে নাজাহাল দশা ট্রান্সপটারদের। আর এইরকম অবস্থায় কার্যত উদাসীন ভূমিকা শাসক তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের। দলেরই একটি সূত্র মারফত জানা যায়, এমন অচলাবস্থার নেপথ্যে কারিগর নাকি প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। এতদিন তিনি বটলিং প্লান্টের ইউনিয়নটি দেখভাল করতেন। কিন্তু সংগঠনের জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটকের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তাকে নাকি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই পদ থেকে। দলের একাংশ জানায়, উনি ড্রাইভারদের উসকে দিয়ে নাকি প্লান্টের ভেতরে এই অচল অবস্থা সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বনাথ অবশ্য সরাসরি এমন গুরুতর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ফালতু কথা এসব। আমি অনেক দিনই হল আর বটলিং প্লান্টের ইউনিয়নে নেই। এসব আসানসোল থেকে দেখা হয়।”

এদিকে শ্রমিক সংগঠনের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি দীপঙ্কর লাহা রবিবার বলেন, “সমস্যা যে ওখানে চলছে জানি। সমস্ত ঘটনার কথা রাজ্যের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে। আশা রাখি দুয়েক দিনের মধ্যে সমাধান হবে।” ট্রান্সপোর্টারদের ওপর ৮ লাখ টাকা করে জরিমানার বিষয়ে তিনি বললেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা খুব জলদি কথা বলব কর্তৃপক্ষের সাথে। এদিকে নাভিশ্বাস দশা ট্রান্সপোর্টারদের। দুই ট্রান্সপোর্টার প্রজেশ চট্টোপাধ্যায এবং তপন সাহা এদিন বলেন, “নিজেদের সই করা চুক্তি ওরা এভাবে ভেঙ্গে লরিগুলো প্লান্টের ভেতরে ফেলে পালিয়ে এসে, ওরা ইন্ডিয়ান অয়েলকে আর আমাদের সকলকেই চরম বিপাকে ফেলে দিল।” লরি ড্রাইভার সুমিত লাই বলেন, “এই চুক্তি আমাদের সর্বশ্রান্ত করে দিচ্ছে। রোজ পেটে গামছা বেঁধে লোকের রান্নাঘরের জন্য সিলিন্ডার বয়ে বয়ে আমরা মরবো কি?” তাহলে, এই চুক্তি ? তাদের দাবি, “ওটা যখন সই করি তখন আর এখন এর বিস্তর ফারাক।” পুজোর মুখে বাঙালির হেঁসেলে কি তবে আসতে চলেছে জোরালো ধাক্কা? এ বিষয়ে দুর্গাপুর মহকুমা শাসক ডাক্তার সৌরভ চ্যাটার্জী জানান, “প্রশাসন বিষয়টির উপর গুরুত্ব দিয়ে নজর রেখেছে। প্রয়োজনে উচিত সময়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হবে।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments