জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দুর্গাপুরঃ- এমনিতেই পাঠক কমছে, তারপর আবার কিশোরদের জন্য গোয়েন্দা কাহিনী! বড্ড ঝুঁকির কাজ। তাও নিজের লেখা সৃষ্টিকে পাঠকের সামনে আনার জন্য দুর্গাপুজোর আনন্দ মুখরিত পরিবেশকে বেছে নিলেন প্রবীণ সাহিত্যিক শিবদাস রুদ্র। শতাধিক কবি, সাহিত্যিক ও কাব্যপ্রেমী মানুষের উপস্থিতিতে সপ্তমীর দিন পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের একটি পুজো মণ্ডপ থেকে তিনি কাব্যরসিক পাঠকের হাতে তুলে দিলেন রহস্য, রোমাঞ্চে ভরপুর কিশোর গোয়েন্দা কাহিনী ‘টিনি ভোম্বল’। এটি প্রবীণ লেখকের সপ্তম কাব্যগ্রন্থ।
তখন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শ্রীনিবাস শাস্ত্রী মান্থা, বিশিষ্ট সমাজসেবী অমিতাভ বন্দোপাধ্যায় ও সমাজসেবী তথা কবি অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী, সাহিত্যিক সৌম্যশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়, নৃত্যশিল্পী নিলাশ্রী ভট্টাচার্য্য, বাচিক শিল্পী তথা শিক্ষক হৃদয় সাঁই, কবি তথা ‘আন্তরিক’ সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদিকা অন্তরা সিংহরায় সহ এলাকার অনেক কাব্যরসিক ব্যক্তিত্ব।
কাব্য ও সাংস্কৃতিক জগতের বিশিষ্টদের উপস্থিতিতে সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। কবিতা পাঠ, সঙ্গীত ও নৃত্যে মুখরিত হয়ে ওঠে সমগ্র পরিবেশ। সঙ্গে ছিল সাহিত্য সংক্রান্ত আলোচনা। প্রবীণ কবি-সাহিত্যিকরা তাদের অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার উজার করে দেন। সব মিলিয়ে পুজোর সময় এক মননশীল উচ্চ মার্গের অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকার সুযোগ পান কাব্যপ্রেমী মানুষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিরা শিবদাস বাবুকে ৮০ তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
প্রসঙ্গত,শিবদাস বাবু শৈশবে সাহিত্যচর্চা শুরু করলেও পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে সেটা দীর্ঘায়িত হয়নি। অবসরের পর ৭৪ বছর বয়সে তার কলম বেশি ক্ষুরধার হয়ে ওঠে। ইতিহাসের মর্যাদা নুন্যতম ক্ষুণ্ন না করে সাহিত্যের প্রয়োজনে ও পাঠকের মনে কাব্যরস সৃষ্টির জন্য কিছুটা কল্পনা মিশিয়ে সৃষ্ট ‘বনাঞ্চল রাজকাহিনী’ কাব্যরসিক পাঠকের কাব্যপিপাসা মিটিয়ে চলেছে। কাব্যে ও ইতিহাসে উপেক্ষিতা নারীদের নিয়ে রচিত ত্রিশটি কবিতা সমৃদ্ধ ‘ওগো মোর প্রিয় নারী’ পাঠ করার সময় পাঠকের মন ভারাক্রান্ত হবেই। ৮০ বছর বয়সেও নবীন প্রতিভাদের জীবন্ত প্রেরণা শিবদাস রুদ্র আজও ‘রুদ্র’ শিবের মত সচল।
উপস্থিত কবি, সাহিত্যিক ও কাব্যপ্রেমী মানুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শিবদাস বাবু বললেন– বাংলা সাহিত্যের প্রকৃত বিকাশ ঘটাতে হলে নবীন প্রতিভাদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের পথপ্রদর্শক হতে হবে প্রবীণদের। সমালোচনার পরিবর্তে দরকার উৎসাহ। শুধু তাই নয় বই পড়ার জন্য নিজ নিজ সন্তানদের উৎসাহ দিতে হবে। কারণ বইয়ের বিকল্প নাই।