নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- চারচাকা গাড়িতে প্রাণ নিলো কোকওভেন থানার এক পুলিশ কনস্টেবলের। নাম রাজীব বরু, বয়স ৩৮ বছর। মৃত কনস্টেবলের বাড়ি বাঁকুড়ার হরিরামপুরে ঘোষ পাড়ায়। স্থানীয নডিহা এলাকায় বাড়ি সোমনাথ থান্ডার নামে আরো এক সিভিক ভলেন্টিয়ার গুরুতর আহত অবস্থায় দুর্গাপুরের বিধাননগরে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। কোকওভেন থানার পুলিশের বক্তব্য, পুলিশের নাকা চেকিং এর সময ২৬ নভেম্বর (শনিবার ) রাত পৌনে ১২ টা নাগাদ কোকওভেন থানা এলাকা সুকুমার নগর সংলগ্ন, দুর্গাপুর ব্যারেজের আগে পচা ক্যানেল কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
ওই নাকা চেকিংয়ে পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বরু এবং দুইজন সিভিক ভলেন্টিয়ার কর্তব্যরত ছিলেন। তখন প্রচন্ড গতিসম্পন্ন একটি চারচাকা গাড়ি এসে পুলিশ কর্মী এবং দুই সিভিককে ধাক্কা মারে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় পুলিশ কনস্টেবল রাজিব বরু এবং সিভিক ভলেন্টিয়ার সোমনাথ থান্ডার সহ তিনজনকেই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বরুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার সোমনাথ থান্ডার-কে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্য একজন সিভিক অল্পবিস্তর আহত হয়। তাই তাকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
এমন ঘটনায় কোকওভেন থানা এলাকা সহ আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, একটি চারচাকা গাড়ি কেনও শুধু শুধু পুলিশের তিনজনের উপর সরাসরি ধাক্কা মারবে ? স্থানীয় মানুষ এবং পথ চলতি মানুষের বক্তব্য, পুলিশ যেভাবে নাকা চেকিংয়ের নামে মালবাহী গাড়িগুলিকে লাইন দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে টাকা তোলে তা অনেক ড্রাইভার মেনে নিতে পারেনা। ফলে, প্রায় সময় পুলিশের সঙ্গে গাড়ির ড্রাইভারদের বাদানুবাদের সৃষ্টি হয়। সেই বাদানুবাদের ফলে এমন ঘটনা ঘটেছে কিনা সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
দুর্গাপুর কোকওভেন থানা এলাকায় বাঁকুড়া মোড়, শ্যামপুর মোড় এবং পচা ক্যানেলের কাছে সুকুমার নগর মোড়ে সেই সকাল থেকে পর পর তিনটি পুলিশ গাড়ি সবসময় দাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে সন্ধ্যা নামার পর থেকে নাকা চেকিংয়ের নামে পুলিশ-গাড়ি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে একাধিক পুলিশকর্মী রাস্তায় নেমে মাল-বোঝায় ছোটাহাতি গাড়ি, ট্রাক, ডাম্পার থেকে শুরু করে একের পর এক গাড়ি থেকে হাত বাড়িয়ে পুলিশের টাকা তোলার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এই ‘তোলা’ তোলার সময় রাস্তা ব্যারিকেড করে শত শত গাড়িকে রাস্তার উপর দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ঘন্টার পর ঘন্টা বলে অভিযোগ। যেসব মালবাহী গাড়ির ড্রাইভার ‘তোলা’ দিতে অস্বীকার করে, তাকে ধমকে চমকে আইনের ভয় দেখানো হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এমন ঘটনায় ওইদিন রাতে ঘটেছে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিনের ঘটনায় মৃত কনস্টেবলের ভাই বিক্রম বরু বলেন, “ওইদিন একটি গাড়িকে আটক করায় ওদের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। পরে ওই নির্দিষ্ট গাড়িটি ফিরে এসে ওদের উপর ধাক্কা মারে।”
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, ঘাতক গাড়িটির সম্পর্কে পুলিশ এখনো কিছু বলতে পারছেন না, বা চিহ্নিত করা যায়নি বলে জানা গেছে । দুর্গাপুর কোকওভেন থানার ওসি সঞ্জীব দে’কে ফোন করে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি পরে জানাবেন বলে ফোন কেটে দেন তিনি ।