নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ– বাবা গ্যাস ওভেন সারানোর মেকানিক। মা গৃহবধূ। গ্যাস ওভেন সারিয়ে কোনওদিন ১০০ বা ২০০ টাকা উপাজর্নেই চলে তিনজনের সংসার। ঘর বলতে অ্যাসবেস্টারের ছাউনি দেওয়া টিনের ঘের দেওয়া এক চিলতে একটা ঘর। দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে এই এক চিলতে ঘরে বসেই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল কিশোরী সরস্বতী রজক। আজ সেই স্বপ্নের অনেকটাই কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন সরস্বতী। ভাঙাচোরা এক চিলতে ঘরে বসে পড়াশোনা করেই আজ দিল্লির এইমসে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ করে নিয়েছেন দুর্গাপুরের এই মেয়ে।
দুর্গাপুরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু নগর কলোনির বাসিন্দা সরস্বতীর পড়াশুনা শুর স্থানীয় শিশু শিক্ষা কেন্দ্র থেকে। পর্যায়ক্রমে সরগভাঙা গার্লস স্কুল, ডিপিএল গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে রানীগঞ্জের টিডিবি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়া। এরপর ২০২২ সালে নিট পরীক্ষায় বসে মেলে এই সাফল্য।
সরস্বতীর কথায় মাধ্যমিকের সময় কোনও টিউশন না থাকায় ছোটমামার কাছে কয়েক মাস পড়াশুনা করেছিলেন। সেই সময়, মামা ভাগ্নির মেধা বুঝতে পেরে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখান। সেই প্রথম ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে জাগে মনে। কিন্তু ইচ্ছে জেদে পরিণত হয় উচ্চ মাধ্যমিকের সময়। সেই সময় সবচেয়ে প্রিয় দিদিমাকে বিনা চিকিৎসায় হারাতে হয়। সেই থেকেই সরস্বতীর মাথায় জেদ চেপে যায় ডাক্তার হওয়ার। স্নাতক স্তরে পড়াশুনার পাশাপাশি শুরু করেন ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি। ২০২১ সালে একবার পরীক্ষাতেও বসেন, ওএমআর শিট সম্পর্কে কোনও জ্ঞান না থাকায় ঠিক মতো সার্কেল করতে না পারায় অনেক নম্বর কাটা যায় ও পিছনে র্যাঙ্ক হয়। রায়পুর মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগও পান। কিন্তু সেখানে ডাক্তির পড়ার জন্য ১২ লক্ষ টাকার খরচ শুনে পিছিয়ে যান গ্যাস ওভেন মেকানিকের মেয়ে। আবার নতুন উদ্যোমে শুরু করেন প্রস্তুতি এবং ২০২২-এ অবশেষে সাফল্য মেলে।
সরস্বতীর এই সাফল্যে রীতিমতো গর্বিত ও উচ্ছ্বসিত তাঁর মা-বাবা সহ আত্মীয় প্রতিবেশীরা। সরস্বতীর এইমসে যাওয়ার খবরে এখন এক চিলতে বাড়িতে ভিড় উপছে পড়ছে। ফুল, মিষ্টি নিয়ে অভিনন্দন জানাতে আসছেন অনেকেই। যদিও সরস্বতীর মায়ের কপালে এখনও চিন্তার ভাঁজ। দিন আনি দিন খাই ভাবে সংসার চালিয়ে কিভাবে যোগাবেন মেয়ের ডাক্তারি পড়ার খরচ? তিনি স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে মেধাবী এই ছাত্রীর পাশে দাঁড়ানোর আবেদন জানিয়েছেন।