নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ– শুক্রবার দুর্গাপুরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ‘বিজ্ঞান, দর্শন ও শিক্ষা ব্যবস্থা’ শীর্ষক এক আলোচনাচক্রে যোগ দিয়ে বর্তমান সময়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণপ্রাপ্ত বিশিষ্ট বাঙালি বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ। পাঠ্যসূচি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেন, কেউ বিজ্ঞান পড়তে চায় না। পয়সা নেই তো। মার্কেটিং, ইলেকট্রনিক্স পড়তে চায়। বিজ্ঞানের ভিতরেও যে একটা অপূর্ব ছন্দ ও সৌন্দর্য আছে, এটা যদি মানুষ বুঝতে পারে, তবে মানুষ শান্তিতে মরবে। পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কটাক্ষ করে বলেন, এখন ছাত্রছাত্রীদের আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, কী করে ঝটপট একটা ডিগ্রি হাসিল করে টাকা রোজগার করা যাবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত ‘বিশ্বপরিচয়’ বইটি প্রাথমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলেও এদিন দাবি করেন বিশিষ্ট এই বাঙালি বিজ্ঞানী। বর্তমান সময়ের এই শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে শিক্ষরদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, বর্তমান শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা ও আবেগ নেই, তাই পড়ুয়ারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একসময় প্রধানমন্ত্রীর বিশিষ্ট বিজ্ঞান উপদেষ্টা পদে থাকা বিকাশবাবু শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, এখন বিজ্ঞান নিয়ে ভাবাই ছেড়ে দিয়েছি।
এদিনের অনুষ্ঠানে দুর্গাপুরের বহু বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের সামনে কবিগুরুর ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ গানটি বাজিয়ে তিনি বলেন, এই গানেই বলা আছে ভুবন দোলে কথাটি। ভুবন যে দোলে তা নিয়েই গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন মহাকাশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক রজার পেনরোজ। তিনি জানান, পৃথিবী তো বটেই সমস্ত গ্রহ, গ্রহাণু, নক্ষত্রপুঞ্জও নিজের অক্ষে দুলছে। এটা একটা দোদুল্যমান কম্পন। আর এই কম্পন থেমে গেলেই সমস্ত কিছুকে গিলে খাবে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল। এদিনের অনুষ্ঠান থেকে উপস্থিত ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান চেতনার ব্যাখ্যা দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ভাল করে পড়া বোঝার পরামর্শও দেন তিনি।