নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ- বিশ্বের দরবারের নিজের দেশ তথা ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করে নজর কাড়লেন দর্গাপুরের ঘরের ছেলে সোনা। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করলেন শিল্প শহরের এই ছেলে।
প্রসঙ্গত ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। যেখানে দেশ জুড়ে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ , প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি বিদেশের মাটিতেও পালিত হচ্ছে এই কর্মসূচি। ভারতের বন্ধু দেশ রাশিয়া ও কেন্দ্রীয় সরকারের যৌথ উদ্যোগে সেদেশে এক বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল গত আগস্টে। যেখানে আট দিন ধরে চলা ‘ইন্ডিয়া ডে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতের সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। আর এই অনুষ্ঠানের জন্য পুরো দেশ থেকে ২৬ জনের একটি টিম তৈরি করা হয়েছি। সেখানে শো ডিরেক্টর হিসেবে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল বিশিষ্ট মেকআপ আর্টিস্ট তথা শো ডিরেক্টর শিল্পশহর দুর্গাপুরের সোনাকে। যেখানে শো ডিরেকশনের পাশাপাশি নিজেও পারফর্ম করেছিলেন সোনা। সেই কথা বলতে গিয়ে ছোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে তাঁর। যেখানে ‘বন্দে মাতরম্’ গানে নৃত্য পরিবেশন করে সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন তিনি।
এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ‘সাইনিং ইন্ডিয়া’ নামে একটি বই প্রকাশ করা হয় ভারতীয় দূতাবাসের তরফে। যেখানে ভারতের শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি বিশিষ্ট ভারতীয়দের তুলে ধরা হয়েছে। আর সেই তালিকায় দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের পাশাপাশি উঠে এসেছে দুর্গাপুরের সোনার কথাও।
তবে এই সফলতা একদিনে আসেনি বলে জানালেন সোনা। এই সাফল্যের আড়ালে রয়েছে দুর্গাপুরের সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের এক ছেলের লড়াইয়ের কথা। ৯০-এর দশকে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা যখন ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিংকেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার হওয়ার একমাত্র পথ বলে মনে করতেন তখন তাঁদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মেকআপ আর্টিস্ট হওয়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেই সহজ ছিল না এক কিশোরের পক্ষে। এরপর কলকাতায় মেক-আপ বিষয়ক কোর্স করে টলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের দক্ষতার মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছেন। কাজ করেছেন টলিউলডের তাবর তাবর তারকা থেকে খ্যাতনামা অভিনেতা অভিনেত্রীদের সঙ্গে। কে নেই সেই তালিকায়! ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যয়া, মিঠুন চক্রবর্তী, মাধবী মুখোপাধ্যায়, সাবিত্রী চ্যাটার্জী, অপরাজিত আঢ্য,পরমব্রত চ্যাটার্জী, সব্যসাচী চক্রবর্তী সহ একাধিক জনপ্রিয় নাম। সোনার চোখ চক চক করে ওঠে যখন তিনি জানান তাঁর কাজ শুরুর দিনগুলির কথা। যখন তিনি বিপাশা বসু, কোয়েনা মিত্র, সেলিনা জেটলি এবং রিমি সেনেদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এঁরা সকলেই যখন একে একে মুম্বাইয়ে পাড়ি দেন কেরিয়ারের জন্য, তখন বাংলাতে থেকেই কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তবে সোনার মতে, এই দুই শহরের দূরত্ব তাঁদের বন্ধুত্বতের সম্পর্কের মধ্যে কোনও ফাটল তৈরি করতে পারেনি। প্রায় দু’দশক ধরে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে স্বমহিমায় কাজ করার পাশাপাশি, মিস ইন্ডিয়া কনটেস্টের মতো জনপ্রিয় প্রজেক্টে কাজ করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ‘প্রাইম মিডিয়া কমিউনিকেশন’ নামক সংস্থায় শো ডিরেক্টর হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। যারা দেশ ও দেশের বাইরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান অর্গানাইজ করে, যেমন মিস ইন্ডিয়া, মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্সের মতো বিভিন্ন প্রেস্টিজিয়াস পেজ থ্রি অনুষ্ঠান, কর্পোরেট প্রোগ্রাম ইত্যাদি। এছড়াও পার্লামেন্টের বিভিন্ন ইনহাউস অনুষ্ঠানও অর্গানাইজ করে থাকে সংস্থাটি।
অসংখ্য পুরষ্কার এবং প্রশংসা অর্জন করলেও, সোনার জীবন শুধুমাত্র মেকআপ আটিস্ট হিসাবে সীমাবদ্ধ থাকেনি। তিনি তাঁর বিউটি ক্লিনিকে শয়ে শয়ে উচ্চাকাঙ্খী যুবক যুবতীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন। কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন নারী ক্ষমতায়ন প্রকল্পে । তবে এত সফলতার মধ্যেও তাঁর হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে স্থান করে নিয়েছে এই রাশিয়া সফর। যেখানে তিনি একজন গর্বিত ভারতীয় হিসাবে নিজের দেশকে বিদেশের মাটিতে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন।