eaibanglai
Homeএই বাংলায়দুর্গাপুরের নাট্য গোষ্ঠীর নাটক প্রশংসা কুড়াচ্ছে গুণগ্রাহীদের

দুর্গাপুরের নাট্য গোষ্ঠীর নাটক প্রশংসা কুড়াচ্ছে গুণগ্রাহীদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুরঃ– সম্প্রতি দুর্গাপুরের একটি নাট্য গোষ্ঠীর মঞ্চস্থ নাটক রীতিমতো হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে। গুণী জনের ভূষসী প্রশংসা কুড়িয়েছে ‘সম্ভাবনা’র ‘সংক্রান্তি’ নাটকটি। বুদ্ধদেব বসুর লেখা নাটকটির বিষয়বস্তু কুরুক্ষত্র যুদ্ধের শেষ দিন, অর্থাং অষ্টাদশ দিবসের ঘটনাবলী। যার শেষ ভীমের সঙ্গে গদাযুদ্ধে দুর্যোধনের পরাজয় ও মৃত্যু। নাটকটিতে চরিত্র বলতে মাত্র তিনজন। সঞ্জয়,ধৃতরাষ্ট্র ওগান্ধারী। সঞ্জয়ের ভূমিকায় শ্রীকান্ত সিংহ, ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকায় দেবীপ্রসাদ পান্ডা, গান্ধারীর ভূমিকায় জয়তী হাজরার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। নির্দেশক সোমনাথ হাজরা সাধারণ সৈনিকদের বিষয়ে সঞ্জয়ের বর্ণনাকে দর্শকের কাছে ভিন্ন মাত্রায় উপস্থাপন করার জন্য নিজেকে একটুক্ষণের জন্য ব্যবহার করেছেন। এছাড়াও দুর্যোধনের প্রতীক হিসেবে মৌনাভিনয়ের মাধ্যমে হাসিবর রহমানকে অল্পক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

এক অন্ধকার সময়ের প্রতীক হিসেবে প্রত্যেক অভিনেতা অভিনেত্রী কালো পোশাক পরিধান করেন। তবে পোশাকের সাথে নানা রঙের উত্তরীয়কে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। যেমন ধৃতরাষ্ট্রের গায়ে গৈরিক উত্তরীয়, সঞ্জয়ের হলুদ উত্তরীয় ও গান্ধারীর সাদা উত্তরীয় । সমগ্র নাটকটিতে একটিই সুর দর্শকের কানে পৌঁছায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। অন্য কোনো যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহার করা হয়নি একটি দুন্দুভি ছাড়া। যেটি যুদ্ধের আবহ রচনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। নাটকে মঞ্চশয্যা বলতে ধৃতরাষ্ট্রের সিংহাসন হিসেবে একটি কালো কাঠের বাক্স আর দ্বৈপায়ণ হ্রদের প্রতীক হিসেবে একটি বড় মাটির পাত্রে ফুলের পাঁপড়ি ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। আর আলো বলতে দুটি হ্যালোজেন। যে দুটি মঞ্চের দুপাশে ব্যবহার করা হয়েছে।

এই নাটকের অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় গান্ধারীর চোখে কোনও আবরণ নেই। সম্প্রতি আমরা চোখ থাকলেও অনেক ঘটনাই না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাওয়ার অভ্যাস করে নিয়েছি। তাই গান্ধারীর চোখে আবরণের প্রয়োজন কোথায় ? এই প্রশ্নটাই বোধ হয় ছুঁড়ে দিয়েছেন নাট্যকার। গান্ধারী যখন ধৃতরাষ্ট্রকে বলেন, তুমি জন্মান্ধ নও , তুমি প্রজ্ঞান্ধ, তখন কোথাও যেন সাম্প্রতিক সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্রের সঙ্গে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে সমগ্র নাটকটিতে গান্ধারীর ধৃতরাষ্ট্রের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নগুলো দর্শককে ভাবনার রসদ যোগায়।

এই নাটক মঞ্চস্থের ক্ষেত্রে নির্দেশক একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। খুব বেশি হলে তিরিশ জনের বেশি দর্শকের সামনে নাটকটি মঞ্চস্থ করবেন না। তাঁর মতে একসাথে তিনশো দর্শকের সামনে নাটকটি মঞ্চস্থ করার চেয়ে তিরিশ তিরিশ করে দশ বার নাটকটি মঞ্চস্থ করে উঠলেই দর্শকদের মধ্যে নিজের নিজের মত করে ভাবনার রসদ যোগান দিতে পারে নাটকটি। তবে এক্ষেত্রে অভিনেতাদের ও দলের পরিশ্রম হবে অনেক বেশি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজন হিসেবে সেই ভার বহন করতে রাজী তাঁরা।

পোশাক, মঞ্চসজ্জা , আলো, মাইক প্রভৃতির আড়ম্বর ছাড়াই নাটকের অসাধারণ উপস্থাপনা দর্শককে শেষ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনায় স্থির ভাবে বসিয়ে রাখে। যার জন্য নির্দেশক সোমনাথ হাজরা আর ‘সম্ভাবনা’ নাট্যগোষ্ঠীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন শিল্পাঞ্চলের বুদ্বিজীবী মানুষ।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments