পানাগড়ে দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের জনশুনানিতে ডাক না পেয়ে ক্ষুব্ধ আক্রান্ত গ্রামবাসীরা, হতাশায় জনপ্রতিনিধিরা
দেব লাহা, দুর্গাপুর:- দুর্গন্ধে অতিষ্ট। তার ওপর কারখানার বর্জ্য জলে ওষ্ঠাগত প্রান। অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি। দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের কর্তাদের গ্রামে পরিদর্শনে আসা দুর অস্ত, জন শুনানিতেও ডাকা হল না আক্রান্ত গ্রামবাসীদের। এমনকি ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়নি বলে অভিযোগ। আর তাতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ল আক্রান্ত গ্রামবাসীরা। হতাশায় ডাক না পাওয়া জনপ্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য, পানাগড় শিল্পতালুকে রয়েছে বেসরকারী মদ তৈরীর কারখানা। বছর ছয়েক ধরে ওই কারখানা উৎপাদন শুরু হয়েছে। উৎপাদন শুরু হতে মাত্রারিক্ত দুষনে জেরবার আশপাশের কোটা, চন্ডীপুর, নতুনগ্রাম, মাড়ো সহ ১০ টির বেশী গ্রামের বাসিন্দারা। কারখানার মদ তৈরীর সময় পচা দুর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকাবাসীরা। তবে বেশী আক্রান্ত মাড়ো গ্রামের বাসিন্দারা। কারখানার বর্জ্য জল মিশছে পার্শবর্তী খড়ি নদী ও এমসি-৩ সেচ ক্যানেলে। আর ওই সেচ ক্যানেল মাধ্যমে মাড়ো গ্রামের একাধিক পুকুরে মিশছে। শুধু তাই নয় আশপাশের চাষজমিতে ওই নোংরা জল পড়ে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। দু- বছর আগে গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে দুষিত জল ছাড়া বন্ধ হয়েছিল। বছর ঘুরতেই আবারও কারখানার বর্জ্য নোংরা জল ছাড়া শুরু হয়েছে। তাও আবার সেচ ক্যানেলে। আর ওই সেচ ক্যানেল থেকে খড়ি নদীতে দুষিত জল মিশছে। একই সঙ্গে দুষিত হচ্ছে আশপাশের চাষজমি, পুকুর, জলশয়।
খড়ি নদী পূর্ব বর্ধমানের মাড়ো গ্রামের উত্তর দিক হতে নির্গত হয়ে বুদবুদ, গলসীর মধ্যে দিয়ে ভাতার থানার কর্জনা-আড়া হয়ে মন্তেশ্বর এলাকায় ঢুকেছে। মন্তেশ্বরের দেনুড় ছুঁয়ে কাটোয়ার শ্রীবাটি সিঙ্গি ঘুরে পূর্বস্থলীর নিমদহ দিয়ে ঢুকে নাদনঘাট হয়ে হাতিপোতা গ্রামের কাছে ভাগীরথীতে মিশেছে। মাড়ো গ্রামের খড়ি নদীর উৎপত্তি স্থলে রয়েছে খড়্গেশ্বরী মায়ের মন্দির। বর্তমানে মদ কারখানার বর্জ্য জলে বিপন্ন খড়ি নদী। ওই দুষিত বর্জ্য জলে এখন আর কেউ স্নান করতে পারে না। পচা দুর্গন্ধে অতিষ্ট নদী তিরবর্তী গ্রামবাসীরা। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা জানান,” গত কয়েকবছর ধরে কারখানার নোংরা জল খড়ি নদী, সেচ ক্যানেল ও চাষজমি, জলাশয়ে মিশে দুষিত করছে। জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। আবার পুকুর জলাশয়ে মেশা কালো দুষিত জল পান করলেই গবাদি পশু অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রায় দু’শ একরের বেশী দুই ফসলি চাষজমি নষ্ট হওয়ার পথে।” বাসিন্দারা জানান,” গ্রামের মাঝে সেচ ক্যানেল। আর ওই ক্যানেল দিয়ে কারখানার দুষিত জল বয়ছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ট। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। বৃষ্টি হলেই ওই দুষিত জল বাড়ীতে ঢুকবে। করোনার মাঝে দুষিত জল নতুন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে এলাকায়।”
একইরকমভাবে পানাগড় শিল্পতালুকে তৈরী হয়েছে একটি পিচ কারখানা। যার কালো ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে গোটা এলাকা। পানাগড় শিল্পতালুকে নতুন শিল্পে মাথায় হাত পড়েছে এলাকাবাসীর। প্রশ্ন, মদ কারখানার বর্জ্য দুষিত জল সেচ ক্যানেলে কেন ফেলা হচ্ছে? এরকম একটি দুষন সৃষ্টিকারী সংস্থাকে কৃষিপ্রধান এলাকায় কারখানার তৈরীর ছাড়পত্র কিভাবে দেওয়া হল? কেনই বা দুষন দফতর নজরদারি করছে না? সম্প্রতি মদ কারখানার দুষনের বিরুদ্ধে গ্রীন ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের হয়। তাতে শুনানির পর তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। মামলাকারী সুব্রত মল্লিক জানান,” মদ কারখানার দুষনে বিপন্ন আশপাশের গ্রামবাসীদের জীবনজিবিকা। বর্জ্য জলে চাষাবাদ নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সেচ ক্যানেল নদী, পুকুর জলাশয়। ইতিমধ্যে মাড়ো গ্রামের বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ওই কারখানার দুষন নিয়ন্ত্রনে গাফিলাতি রয়েছে। তাই গ্রামবাসীদের সুবিচার দিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।” বুধবার পানাগড়ে একটি বিলাসবহুল হোটেলে ছিল পানাগড় শিল্পতালুকের দুষন নিয়ন্ত্রনের ওপর জনশুনানি ছিল দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের। তাতে পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন ও দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদের আধিকারিকরা ছিলেন। আশ্চর্য্য রকমভাবে দুষনের শিকার সেই মাড়ো, কোটা চন্ডীপুর গ্রামের বাসিন্দারা ডাক পায়নি বলে অভিযোগ। গলসী-১ নং ব্লকের মানকর পঞ্চায়েত প্রধান তথা দুষনে নাকাল মাড়ো গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গলা রুইদাস জানান,” মদ কারখানা দুষিত জলে গোটা গ্রাম আতঙ্কে। বহুবার কারখানা কর্তৃপক্ষকে প্ররিশ্রুত করে বর্জ্য জল ফেলার আবেদন করা হয়েছে। বহুবার নোটিশ করেছি। দুষন নিয়ন্ত্রন পর্ষদকে গ্রামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন গুরুত্ব দেয়নি।” এদিন জনশুনানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,” আমার গ্রাম আমার পঞ্চায়েত এলাকা দুষনের শিকার, অথচ আমরা জনশুনানিতে ডাক পেলাম। গোটা বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন এবং হতাশায়।” দুষনের শিকার আউশগ্রামের কোটাচন্ডীপুর পঞ্চায়েতের কোটা গ্রামও। ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ আলাউদ্দীন একরাশ ক্ষোভের সঙ্গে জানান,” পানাগড় শিল্পতালুকের বৃহৎ অংশ আমাদের পঞ্চায়েত এলাকায়। দুষনে ওষ্ঠাগতপ্রান আমাদের এলাকা। অথচ কখনই দুষন দফতরের এধরনের জনশুনানিতে ডাক পাই না। এমনকি দুষন সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ জানানো হলেও, তারও কোন সুরাহা হয় না। তাই আমরা হতাশায়।” এপর্যন্ত পুর্ব বর্ধমান জেলার জনপ্রতিনিধি ও বাসিন্দাদের বক্তব্য ছিল। কি বলছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির শিল্প কর্মাধ্যক্ষ? অজয় মজুমদার, কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির শিল্প কর্মাধ্যক্ষ। তিনি বলেন,” দুষনে জেরবার গ্রামবাসীদের ক্ষোভ আমাদের শুনতে হয়। কি জবাব দেবো আমাদের কে ভাবতে হয়। অথচ যাদের জবাব দেওয়ার দরকার, সেই দুষন দফতরের জনশুনানিতে কখনই ডাকা হয় না। তাই হতাশায়।” যদিও দুর্গাপুর দুষন পর্ষদের আধিকারিক অরূপ দে সাফাই দেন, “খবর কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। মাইকিং করা হয়েছে এলাকায়। অনেক গ্রামবাসী হাজির ছিলেন।”