eaibanglai
Homeএই বাংলায়সাইকেলে চড়ে পুলিশই নিরাপত্তা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে

সাইকেলে চড়ে পুলিশই নিরাপত্তা দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- গোটা দেশ তথা রাজ্য জুড়ে শুরু হয়ে গেল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব। আর এই শারদীয়াকে কেন্দ্র করে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে বিপুল উদ্দীপনায় মানুষ পথে নেমেছে আনন্দ উপভোগ করতে। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে উপচে পড়া ভিড় ও পবিত্র বৈদিক মন্ত্রে উচ্চারিত আকাশ বাতাস যেন মা দুর্গার আগমনে মুখরিত। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা নামিদামি শিল্পী, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা তথা উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা ও আধিকারিকদের দিয়ে তাদের নিজ নিজ প্যান্ডেলের দ্বার উদঘাটন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। গতকাল মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যার পূর্ণ লগ্নে মানুষের ঢল নামে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রতিমা দর্শনের উদ্দেশ্যে। একাধিক জায়গায় অবৈজ্ঞানিক ভাবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ফলে যানজটর সৃষ্টি হয়। তবে কোথাও তেমন ভাবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়নি দর্শনার্থীদের।

গোটা রাজ্যজুড়ে মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে যে আন্দোলন চলছে সেই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের উদ্যোগে এবছর এক নতুন পদ্ধতিতে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন থানা এলাকা গুলিতে। গতকাল মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় এক অভিনব দৃশ্য দেখে মুগ্ধ শিল্পাঞ্চলের সকল বাসিন্দারা। এদিন সন্ধ্যায় দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ সহ একাধিক মহিলা পুলিশ কর্মীরা সাইকেলে চড়ে বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলের আশেপাশের এলাকা তথা রাস্তায় টহল দিতে শুরু করে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল কোথাও কোন ভাবে পুলিশি নিরাপত্তার ফাঁকফোঁকর যেন না থেকে যায়। সহজেই যাতে যে কোন জায়গায় পুলিশ সাইকেলে পৌঁছে যেতে পারে সেই ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। সাধারণত পুলিশের বড় গাড়িগুলি ভিড়ের মধ্যে যাওয়া আসার অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই এ ধরনের অভিনব পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখে মুগ্ধ ৮ থেকে ৮০ সকল বয়সের শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। পুলিশের এই অভিনব প্রচেষ্টাকে পোশাকি নাম দেওয়া হয় “গ্রীন উইনারস টিম” । যেমন নাম তেমন কাজ। যানবাহনের বিষাক্ত গ্যাস থেকে পরিবেশ বান্ধব সাইকেলে চড়ে পুলিশের এহেন পুলিশি নিরাপত্তা নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের।

বাঁকুড়ার তালডাংরা থেকে একদল দর্শনার্থী দুর্গাপুরে প্রতিমা দর্শন করতে এসে “গ্রীন উইনারস টিম” পুলিশ টিম দেখে অত্যন্ত খুশি হন এবং জানান, “রাজ্য পুলিশ যে নিজেদেরকে সময়ের সাথে বদলাতে শুরু করেছে দেখে খুব ভালো লাগলো। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর এমনিতেই খুবই শান্ত ও শৃঙ্খলা পরায়ণ শহর। আর সেই জন্যেই প্রতিবছর এখানে তারা আসেন প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রতিমা দর্শন করতে। কিন্তু এবছর তারা আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এই নতুন উদ্যোগ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।” তারা আরো দাবি করেন, “অবিলম্বে এহেন পুলিশি ব্যবস্থা যেন গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। নিরাপদে যেন থাকে আমাদের বাড়ির মা-বোনেরা।”

আসানসোল শিল্পাঞ্চলের চাঁদা মোড় এলাকা থেকে রহমত আলী ও তার পরিবার দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে প্রতিমা দর্শন করতে এসেছেন। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের “গ্রীন উইনারস পুলিশ টিমের” টহল দেখে তারা অত্যন্ত খুশির সাথে জানান, “এতদিন পর পুলিশকে নিজেদের বলে মনে হচ্ছে। নিজেদের কাছের লোক বলে মনে হচ্ছে। কারণ এর আগে কোনদিন পুলিশকে আমরা সাধারণ মানুষের মতন সাইকেল চড়ে নিরাপত্তা দিতে বা টহল দিতে দেখিনি। দেখেছি বড় বড় গাড়িতে পুলিশ লিখে লাল বাতি জেলে টহল দিতে। তাই পুলিশের গাড়ি দেখলেই বুকটা কেমন যেন কেঁপে উঠতো অজানা কারণে। কিন্তু দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের এইসব পুলিশ কর্মীদের টহল দিতে দেখে মনে হচ্ছে যেন আমাদের পরিবারেরই কেউ একজন আমাদের নিরাপত্তার জন্য পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।” রহমত আলী আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “সারা বছর যেন পুলিশ কর্মীরা এভাবে মানুষের পাশে সাধারণ সাইকেল নিয়ে নিরাপত্তা দিতে থাকে। এতে আমরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগবো না। আমরা স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদ মনে করব।”


দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলের উদ্যোক্তারাও এক বাক্যে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এহেন অভিনব উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন ও তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। বিধাননগর পুলিশ ফাঁড়ির এই “গ্রীন উইনারস টিমের” নেতৃত্বে যে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক ছিলেন তাকে এই উদ্যোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তার সোজা সাপটার জবাব, “আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ আপনাদের সুরক্ষার জন্য সদাই তৎপর এটাই আমাদের বার্তা। আপনারা পুজোতে খুব আনন্দ করুন, সুরক্ষিত থাকুন, সুস্থ থাকুন ও মন খুলে স্বাচ্ছন্দ ও নিরাপদে শিল্পাঞ্চলে প্রতিমা দর্শন করুন এই কামনা করি।”
নিঃসন্দেহে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কর্মীরা এ এহেন নতুন নিরাপত্তার চিন্তা ভাবনাকে “চ্যানেল এই বাংলায়” কুর্নিশ জানাই ও আগামী দিনে যাতে তারা এভাবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় সদাই তৎপর থাকে সেই শুভকামনা ও আশা রইল।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments