জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দুর্গাপুরঃ- পেশায় চিকিৎসক, নেশা কবিতা লেখা। ডা. কবিতা বর্মণ, দুর্গাপুর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার একজন সুপরিচিত ব্যস্ত এবং মানবিক স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। সমাজসেবী হিসাবেও এলাকায় যথেষ্ট সুনাম আছে। একমাত্র কন্যার পড়াশোনার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এত ব্যস্ততার মাঝে সুযোগ পেলেই কলম ধরেন। একের পর এক কবিতা লিখেও ফেলেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও নিউজ পোর্টালে নিয়মিত উনার লেখা কবিতা প্রকাশিত হয়। অনেকগুলো কবিতা আবার কাব্যপ্রেমী পাঠকের প্রশংসা আদায় করেও নিয়েছে। এবার বিভিন্ন সময়ে লেখা ডা. কবিতা বর্মণের ভিন্ন স্বাদের ৪৮ টি কবিতাকে পাথেয় করে প্রকাশিত হলো কাব্যগ্রন্থ ‘কৃষ্ণচূড়া’।
‘আগমনী’ শব্দ বন্ধনী জড়িয়ে আছে দুর্গাপুজোর সঙ্গে। দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের সময় বেজে ওঠে শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি। প্রকৃতি সেজে ওঠে আপন সাজে। চারদিকে খুশির আমেজ। বোঝা যায় দেবী আসছেন। একইভাবে ‘ভোরের প্রথম আলো’, ‘পাখীর কল্লোল’, ‘শ্রান্ত ঘুঘুর ডাক’, ‘অস্তমিত সূর্যের রাগ’, ‘নিঝুম গহিন রাত’, ‘শহরের শূন্য রাজপথ’ ইত্যাদি ঘোষণা করেছিল ‘তুমি আসবে’। কিন্তু এই ‘তুমি’ টা কে সেটা কবি স্পষ্ট করেননি। মনের মধ্যে একরাশ দ্বন্দ্ব এবং ভাবনা নিয়ে পাঠক এগিয়ে চলেন ‘আয়না’-র দিকে।
এখানে এসে পাঠকের মনে নতুন করে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। ‘আয়না’ তার সামনে রোজ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে যেমন রঙিন সাজে দেখে তেমনি অগোছালো অবস্থাতেও দেখে। আসলে একজন প্রেমিক তার প্রেমিকার মধ্যে একইসঙ্গে ফিকে রঙ ও রামধনুর শোভা দেখতে পান। তাহলে কি এই ‘তুমি’ কবির প্রেমিক! আবার দ্বন্দ্ব!
‘সমস্ত পৃথিবীকে’ নিজেদের জন্য ‘ভালোবাসার শহর’ বানানোর স্বপ্ন দেখা প্রেমিকার মনের মধ্যে দেখা দেয় সংশয় ‘থাকবি কি তুই?’ তন্ন তন্ন করে পৃথিবীর সমস্ত কোণে ‘নীলচে আকাশে’, ‘পাহাড়ি উপত্যকার খাঁজে’, ‘উত্তাল তিস্তার বাঁকে’, ‘মেঘপুঞ্জের আড়ালে’, ‘চম্পা চামেলির বনে’ খুঁজে বেরিয়েও ‘তোমাকে খুঁজে পাইনা কোথাও আজ’। তবুও খোঁজা শেষ হয়না! হয়তো সে ‘অপেক্ষায় কোনো ঐতিহাসিক গল্পের’। নিঃসন্দেহে প্রতিটা কবিতা কাব্যরসিক পাঠকের মনে একটার পর একটা নতুন ভাবনার জন্ম দেবে। তবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভুল বানান কাব্যরস উপভোগে কিছুটা বিঘ্ন ঘটাবে। এক্ষেত্রে একটু সতর্ক হতেই হবে। তবুও সবমিলিয়ে বলা যায় একটা উপভোগ্য কাব্যগ্রন্থ হতে চলেছে ‘কৃষ্ণচূড়া’। চিকিৎসক হিসাবে তিনি এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। এখন দেখার কবি হিসাবে তিনি কতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেন, ‘কৃষ্ণচূড়া’-র হাত ধরে কাব্য জগতে তার উপস্থিতি কৃষ্ণচূড়া ফুলের মত কতটা রঙিন হয়ে ওঠে। তার গুণগ্রাহীরা অবশ্য যথেষ্ট আশাবাদী।





