মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- শিল্প নগরী দুর্গাপুর এখন দূষণ নগরীতে রূপান্তরিত হয়েছে। দুর্গাপুরের আশেপাশে থাকা একাধিক কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোয়াই শিল্পাঞ্চলের পরিমণ্ডল বিষাক্ত করে তুলেছে, বাতাস নিঃশ্বাসের অযোগ্য করে তুলেছে। রাজ্য সরকার ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ একাধিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরও কমছে না দূষণের মাত্রা। এরই মধ্যে উন্নয়নের জোয়ারে কাটা পড়ল শহরের আরো কয়েকশো গাছ। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সম্প্রতি গান্ধী মোড় থেকে ডিভিসি মোড় অবধি ডবল লেনের রাস্তা তৈরি করার জন্য সরকারি উদ্যোগেই কেটে ফেলা হয়েছে শতাধিক বয়সের পুরনো কয়েকশো গাছ। যদিও দু-একটিকে পুনঃস্থাপন করার লক্ষ্যে পরীক্ষামূলকভাবে অন্য জায়গায় রোপন করা হয়েছে। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক এতগুলি গাছ কেটে ফেলার ফলে দূষণের মাত্রা আরও বাড়বে বই কমবে না বলেই মনে করছেন ইস্পাত নগরী তথা শিল্পাঞ্চলের মানুষজন। তাই শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন সমাজসেবী সংগঠন, বিজ্ঞান মঞ্চ ও একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা, কর্মকর্তারা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন সবুজ বাঁচানোর লক্ষ্যে।
তারই অঙ্গ হিসেবে দুর্গাপুরে প্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগে হোটেল ম্যানেজমেন্ট কলেজ তৈরি করে, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলকে শিক্ষা অঞ্চলে পরিণত করার মূল কান্ডারী দুর্গাপুর ডিএসএমএস (দুর্গাপুর সোসাইটি অফ ম্যানেজমেন্ট সাইন্স) কলেজের উদ্যোগে আগামী ২৫ শে জানুয়ারি “রান ফর এনভায়রনমেন্ট” শীর্ষক এক দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের বিধাননগর স্থিত ডিএসএমএস কলেজের নিজস্ব পেক্ষাগৃহে এই উপলক্ষ্যে এক সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যেখানে এক ঝাঁক শিল্পপতি সহ কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রী ও কলেজের অধ্যক্ষ শিউলি মুখার্জির উপস্থিতিতে দ্রুত দুর্গাপুরের পরিবেশকে সবুজে ভরে তোলার অঙ্গীকার নেওয়া হয়। এদিন এই সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডিএসএমএস কলেজের অন্যতম কর্ণধার শিউলি মুখার্জি জানান, কলেজ কর্তৃপক্ষ সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরকে সবুজের সমারহে ভরে তুলতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে। রোপন করা হয়েছে শতাধিক গাছও। তবে শুধু গাছ লাগিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি তাঁরা। রীতিমতো মাতৃস্নেহে লালন পালন করে গাছের ক্ষুদ্র ওই চারাগুলিকে আজ বৃহৎ বৃক্ষে রূপান্তরিত করতে পেরে তাঁরা গর্বিত। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিধাননগর ও তার আশেপাশের এলাকার সবুজয়ানের জন্য তাঁরা নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই এক পদক্ষেপ হিসেবে প্রতিবছরই পরিবেশের জন্য বিশেষ দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এবছরও ডিএসএমএস কলেজের উদ্যোগে “রান ফর এনভায়রনমেন্ট” নামক ১০ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। যার স্লোগান “পলিউশন ফ্রি সলিউশন ট্রি”। শিল্পাঞ্চল তথা জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সবুজ প্রেমী মানুষেরা এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আগামী দিনে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরকে সবুজে ভরিয়ে তোলার অঙ্গীকারবদ্ধ হবেন। এই ১০ কিলোমিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় পুরুষ মহিলা উভয়ই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। যার পুরস্কার রাশি ২ লক্ষ টাকা।
এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন একাধিক সংস্থার কর্ণধাররা। তাঁদের মধ্যে দুর্গাপুর স্থিত গ্রাফাইট ইন্ডিয়া কোম্পানির এক পদস্থ আধিকারিক এদিন জানান বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁরা সবুজায়নের লক্ষ্যে তথা সবুজ ও সুন্দর দুর্গাপুর তৈরির লক্ষ্যে নিরন্তর প্রয়াস করে চলেছেন। ইতিমধ্যেই তারা শিল্পাঞ্চলে কয়েকশো গাছ রোপন করেছেন এবং সেগুলি যথাযথভাবে পরিচর্যার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্থানীয় কিছু সমাজসেবী সংগঠন ও ক্লাব সংগঠনগুলিকে। আগামী দিনে তাঁদের সংস্থার পক্ষ থেকে শিল্পাঞ্চলের বায়ু দূষণের মাত্রা কমাতে কয়েক হাজার নতুন গাছের চারা লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলেও এদিন জানান তিনি।
অন্যদিকে ডিএসএমএস কলেজের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত প্রাক্তনীরা এদিন অঙ্গীকারবদ্ধ হন, আগামী দিনে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলকে সবুজ শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁরা নিরন্তর প্রয়াস চালিয়ে যাবেন। তাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’ তাই মানুষের প্রাণের মতোই দামি গাছেরও প্রাণ। কারণ গাছই মানুষের জীবন ধারণের একমাত্র উপায়।
এদিন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ডিএসএমএস কলেজের অন্যতম কর্ণধার শিউলি মুখার্জি জানান, রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের যেসব উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির জন্য একাধিক গাছ কাটা পড়ছে সে বিষয়ে অবিলম্বে সরকারি উদ্যোগে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নগর উন্নয়ন দরকার, কিন্তু সবুজ নিধন যজ্ঞে যেন শামিল না হয় সরকারি দপ্তরগুলি। এদিন তিনি সেই আবেদন রাখেন।
এদিন দুর্গাপুর সাব ডিভিশনাল স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা ডিএসএমএস কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, “বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে দুর্গাপুরে বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু ডিএসএমএস কর্তৃপক্ষ মাতৃস্নেহে সকল প্রতিযোগীকে নিজেদের আপন করে নিয়ে যথাযথ সম্মান ও পরিচর্যা করেন।”
সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও সবজু দুর্গাপুর গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে “পলিউশন ফ্রি সলিউশন ট্রি” স্লোগান তুলে এদিনের অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি হয়।