eaibanglai
Homeএই বাংলায়৩৮ হাজার মানুষের পদধূলিতে সমাপন দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫

৩৮ হাজার মানুষের পদধূলিতে সমাপন দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫

মনোজ সিংহ, দুর্গাপুরঃ- আশঙ্কাই সত্যি হলো! প্রায় ৩৮ হাজারেরও বেশি মানুষ, শ্রোতা বা দর্শক হাজির হয়েছিলেন দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ -এর শেষ দিনে। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের ইতিহাসে এর আগে কোন সঙ্গীতানুষ্ঠানে এত মানুষ একত্রিত হয়ে আনন্দে, উচ্ছ্বাসে ও শৃংখলার সাথে বসে অনুষ্ঠান দেখেননি। নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করল দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ তৃতীয় বর্ষের শেষ দিন। উৎসব আয়োজক সংস্থার উদ্যোক্তারা আগে থেকেই অনুমান করেছিলেন বিখ্যাত বলিউড প্লেব্যাক সিঙ্গার জাবেদ আলীর অনুষ্ঠান দেখতে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ একত্রিত হবেন। কিন্তু দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে এই প্রথমবার প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ এক জায়গায় শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান দেখলেন।

দুর্গাপুর উৎসবের গত ১৩ তারিখের অনুষ্ঠানের পরেই গভীর রাত্রে দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক কমিটির মূল কর্মকর্তারা একটি বৈঠকে মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন জাবেদ আলীর অনুষ্ঠানের জন্য খোলা আকাশের নিচে আরো ৫ হাজার নতুন করে চেয়ার পাতা হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। সেই রাত্রে থেকেই উৎসব কমিটির আয়োজকরা প্রশাসনের উচ্চ আধিকারিকদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেন, যাতে জাবেদ আলীর ১৫ ই ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানটিকে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখরভাবে সম্পন্ন হয়। প্রথমদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজক কমিটির কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয় উৎসব প্রাঙ্গনে তৈরি বিশাল আন্তর্জাতিক মানের হ্যাঙ্গারটি খুলে ফেলার। বিশাল জমায়েতের ফলে যাতে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয় । কিন্তু সূত্র মারফত জানা যায়, দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক কমিটির মূল কর্মকর্তারা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেন মূল মঞ্চ ও তৎসহ ভিভিআইপি ও ভিআইপি এলাকার ওপর থেকে কোনমতেই হ্যাঙ্গার সরানো হবে না। এরপরেই জেলা প্রশাসন ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন ১৫ ই ডিসেম্বরের সমগ্র অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয় তারা নিজেদের হাতে পরিচালনা করবেন। আয়োজক কমিটির উদ্যোক্তারা প্রশাসনের ওই উদ্যোগে সম্মতি প্রদান করার পরেই আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি, এসিপি, ওসি, সাব ইন্সপেক্টর, কনস্টেবল সহ কমব্যাট ফোর্সের বিশাল আয়োজন করা হয়। যাতে আগত শ্রোতা দর্শকদের কোন অসুবিধা না হয়।

দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর অন্তিম দিনের মুখ্য আকর্ষণ ছিল বলিউডের বিখ্যাত প্লে ব্যাক সিঙ্গার জাবেদ আলীর অনুষ্ঠান। এদিন শুধু পশ্চিম বর্ধমান জেলাই নয় আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে মানুষ বলিউড সিঙ্গারের অনুষ্ঠান দেখতে এসেছিলেন। ভিড়ে মহিলাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট ও উৎসব আয়োজক কমিটির যৌথ সিদ্ধান্ত নেয় যে মহিলাদের জন্য একটি আলাদা বসার জায়গা নির্দিষ্ট করা হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে ১৫ হাজারেরও বেশি মহিলা শ্রোতা বা দর্শক উপস্থিত হিয়েছিলেন এবং সকলে মিলে নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায় পুরো অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন। প্রশাসনিক তথ্য় অনুযায়ী এদিন রাত আটটা অবধি দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর প্রাঙ্গণে হাজির হয় প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ। যদিও উৎসব কমিটির আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি এদিন প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু আকাশ থেকে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো প্রশাসনিক কর্তারা এদিন মৌখিকভাবে জানিয়েছেন,৩৮ হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ এদিন শান্তিপূর্ণ ও আনন্দমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠান মঞ্চের আশেপাশে উপস্থিত হয়েছিলেন। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা ও পরিকল্পনাহীন পরিবেশের নিদর্শন এদিন পাওয়া যায়নি। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের পুলিশ কর্মীদের কড়া মনোভাব ও দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক সংস্থার স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সুপরিকল্পিত ‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ ফলেই তা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে অনুষ্ঠান শেষে যেভাবে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষ হাসিমুখে ও শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি ফেরে, তা দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের উচ্চ আধিকারিক সহ দুর্গাপুর উৎসব আয়োজক কমিটির উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি কলকাতায় বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ফুটবল প্লেয়ার মেসির অনুষ্ঠানের গন্ডগোল থেকে শিক্ষা নিয়ে, এদিন অনুষ্ঠানের প্রথম থেকেই সতর্কতা ও নিখুঁত পরিকল্পনা রুপায়নের ওপর জোর দিয়েছিলেন আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তারা ও আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা।

এদিন সংগীতশিল্পী জাবেদ আলীর অনুষ্ঠানটি ছিল দেড় ঘন্টার জন্য। কিন্তু অনুষ্ঠান চলাকালীন শিল্পী যখন বুঝতে পারেন সমগ্র দুর্গাপুরের বাসিন্দারা অত্যন্ত রুচিশীল, ভদ্র ও সংগীত শিল্পীকে যথাযথ সম্মান দিতে জানেন, তখন তিনি নিজেই নিজের নিয়ম ভেঙ্গে আরো প্রায় অতিরিক্ত কুড়ি মিনিট সঙ্গীতা অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন। নাচে-গানে, সঙ্গীতে এদিন দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর অন্তিম লগ্নে শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুর আবার প্রমাণ করলো দুর্গাপুরের বাসিন্দারা শুধু শিক্ষিতই নয়, রুচিশীল, সংগীতপ্রেমী ও শৃঙ্খলাপরায়ণ।

গত বছর দুর্গাপুর উৎসব ২০২৪ এর প্রাঙ্গণে শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বিখ্যাত বাংলা ব্যান্ড ‘ফসিলস্’ -এর অনুষ্ঠান। সেদিনও বাঁধভাঙ্গা ভিড় হয়েছিল দুর্গাপুর উৎসব প্রাঙ্গণে। কিন্তু সেদিন শুধু যুব সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশই ছিল মূল শ্রোতা। সূত্র মারফত জানা গিয়েছিল সেদিন নাকি ওই অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের জনসমাবেশ হয়েছিল। কিন্তু দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ এর শেষ দিনে প্রায় ৩৮ হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ও শৃঙ্খলাপরায়ন জামায়াতে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে আবার একটি নতুন ইতিহাস তৈরি হল।

দুর্গাপুরের মানুষের রুচিশীলতা, সংস্কৃতি, সংগীত প্রেম, ও শৃঙ্খলাপরায়ন মানসিকতাকে কুর্নিশ জানাতে ভোলেননি দুর্গাপুর উৎসব কমিটির কর্মকর্তারা। তাদের স্বতঃস্ফূর্ত ও উজ্জ্বল উপস্থিতি এবং রুচিশীলতা ও শৃঙ্খলাপরায়নতার জন্যই যে দুর্গাপুর উৎসব ২০২৫ সাফলতা অর্জন করল তা জানিয়ে অনুষ্ঠানের শেষে মূল মঞ্চ থেকে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। পাশাপাশি আগামী দিনে আরো বড় আকারে দুর্গাপুর উৎসব অনুষ্ঠিত হবে বলে এদিন সগর্বে ঘোষণা করেন আয়োজক সংস্থার কর্মকর্তারা। শিল্পাঞ্চল দুর্গাপুরের বাসিন্দারা আবার গোটা রাজ্য তথা দেশের কাছে প্রমাণ করলেন দুর্গাপুর শুধুমাত্র শিল্প নগরী, শিক্ষা নগরী বা স্বাস্থ্য নগরী নয়, দুর্গাপুর সংস্কৃতির, শহর প্রেমের শহর, ভালোবাসার শহর ও সর্বোপরি রুচিশীল মানুষের প্রিয় শহর।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments