মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েক মাস আগেই নবান্ন সভাগৃহে থেকে রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সকল বেদখল জমি পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে পঞ্চায়েত ও অন্যান্য দপ্তর গুলিকে আদেশ জারি করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত, উন্নয়ন পর্ষদ ও ভূমি ও ভূমি রাজস্ব বিভাগের আধিকারিকরা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছিলেন সরকারি জায়গা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই দখলদারদের হঠিয়ে কয়েকশো একর জায়গা রাজ্য সরকারের দপ্তর গুলি পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। তবে, সব থেকে উল্লেখযোগ্য যে জমি রাজ্য সরকারের হাতে গেছে তা হল আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের তরফ থেকে দেওয়া ৩০০ একরেরও বেশি শিল্প স্থাপনযোগ্য জমি, যা নিয়ে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কাজের ভুয়সি প্রশংসা করেছিলেন। আবার অন্যদিকে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য একাধিক ফুটপাত পরিষ্কার ও জবরদখল কারীদের হঠানোকে কেন্দ্র করে জলঘোলাও হয়েছে অনেক। তবে, উন্নয়ন পর্ষদের কড়া মনোভাবের ফলে তেমনভাবে কোথাও শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়নি। যদিও, অন্যদিকে বহু খেটে খাওয়া মানুষ হারিয়েছে তাদের দৈনন্দিন রুজি রুটির সংস্থান।

সম্প্রতি উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে জারি করা এক নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে পারা যাচ্ছে, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের এক রেলওয়ে সাইডিং পরিচালন সংস্থার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে উন্নয়ন পর্ষদের জমি দখল করে রাখা সহ সরকারি সংস্থার জমি ভাড়া খাটানোর মত একাধিক গুরুতর অভিযোগ ইতিমধ্যেই দপ্তরে জমা পড়েছে। একটি বিশ্বস্ত সূত্র মারফত জানা গেছে, রাজ্যের একটি নামি বাণিজ্যিক গোষ্ঠীর কর্ণধার – যার উত্থান কয়লা কারবারের মধ্যদিয়ে, তিনিই নাকি অবৈধভাবে ওই রেলওয়ে সাইডিং এর আশেপাশে থাকা আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের কয়েক একর জমি বিগত দুই দশক ধরে অবৈধ ভাবে ব্যবহার করে আসছেন। বিনা ভাড়ায় গায়ের জোরে বিনা অনুমতিতে রাজ্য সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে কয়েকশো কোটি টাকার দামি জমি একটি টাকাও খরচা না করে বছরের পর বছর ব্যবহার করে যাচ্ছেন ওই বাণিজ্যিক সংস্থার কর্ণধার, বলে এলাকায় অভিযোগ। স্থানীয় এলাকার সূত্রে জানা গেছে দখলদার ব্যক্তিটি প্রভাবশালী। তিনি একাধিক খনি সংস্থার কর্ণধার হওয়ার ফলে রাজ্য সরকারের কোন দপ্তরের নাকি এখনো অব্দি ক্ষমতা হয়নি তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করবে! কিন্তু, আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের পরিচালন সমিতির কাছে এ খবর পৌঁছাতেই এখন নড়েচড়ে বসেছে সংস্থা। সংস্থার একটি সূত্র মারফত জানা গেছে – ওই রেলওয়ে সাইডিং এর বৈধ অনুমতিপ্রাপ্ত সংস্থার কাছ থেকে নাকি বকলমে ইজারা নিয়ে অন্য একটি সংস্থা ওই এলাকায় লোডিং আনলোডিং এর কাজ করছে। শুধু তাই নয় পার্কিংয়ের জন্য রেল লাইনের ধারে এখানকার সগড়ভাঙায় বেশ কয়েক হাজার বর্গফুট এলাকা রানীগঞ্জের একটি ট্রেডিং কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছিল আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে।

কিন্তু, অভিযোগ সেই জায়গাও নাকি ওই সংস্থা অবৈধ ভাবে কয়েক বছর ধরে দখল করে রেখেছে। দখল করা ওই জমি থেকে কয়েক বছরে ইতিমধ্যেই তারা ১০০ কোটি টাকার ব্যবসাও করে ফেলেছে কার্যতঃ বিনা বাধায়। এবিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান কবি দত্ত বলেন, “একটি অভিযোগ আসার পর বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজ নিতে শুরু করেছি। সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের কাছে প্রথমে আমাদের জমি দখল এবং তাতে ঢালাও ব্যবসার জন্য কৈফিয়ত চাওয়া হবে।”





