সংবাদদাতা,দুর্গাপুরঃ- অবশেষে দুর্গাপুর গণধর্ষণ কাণ্ডে নির্যাতিতার পুরুষ সহপাঠীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যেয় তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরফলে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬।
প্রসঙ্গত ঘটনার পর থেকেই ওই সহপাঠীকে ঘিরে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। নির্যাতিতার বাবাও ওই ছাত্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাশাপাশি তাকে গ্রেফতার না করলেও গত তিন দিন ধরে দফায় দফায় তাকে জেরা করে পুলিশ। অবশেষে তার কথায় অসঙ্গতি মেলায় এদিন তাকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার তাকে দুর্গাপুর আদালতে পেশ করা হবে।
ধৃত যুবক মালদার বাসিন্দা। ঘটনার পর যুবকই অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। প্রথমদিকে সে তদন্তে সহযোগিতা করছিল বলেও জানা যায়। কিন্তু সহপাঠী যুবক ও ধৃত পাঁচ অভিযুক্তকে সামনাসামনি বসিয়ে জেরা করা হলে বয়ানে অসঙ্গতি দেখা যায়।
প্রসঙ্গত গত শুক্রবার রাতে ওই পুরুষ সহপাঠীর সঙ্গে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে বেরিয়ে গণধর্ষণের শিকার হন শোভাপুরের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ওই সহপাঠীর ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে থাকে। যুবক কেন রাতে জনমানবহীন জঙ্গল ঘেরা রাস্তায় বান্ধবীকে নিয়ে গিয়েছিলেন? তার সামনেই দুষ্কৃতীরা নির্যাতিতাকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে গেলেও কেন বান্ধবীকে দুষ্কৃতীদের হাতে ছেড়ে তিনি পালিয়ে যান? এমনকি পালিয়ে গিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ কিংবা নিরাপত্তারক্ষী কাউকেই কেন কিছু জানাননি? পরে ওই যুবকই বান্ধবীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এছাড়াও জানা গেছে মঙ্গলবার সকালে ঘটনার যে পুনর্নিমাণ হয় তাতেও সহপাঠী যুবকের সঙ্গে এক অভিযুক্তের বয়ানে ফারাক রয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রেফতার না হলেও তাকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছিল পুলিশ।
অন্যদিকে নির্যাতিতার সহপাঠী গ্রেফতার কিছু আগেই সাংবাদিক বৈঠক করেন আসানসোল দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী। তখনই তিনি জানান, “নির্যাতিতার সহপাঠীর আচরণ খুবই সন্দেহজনক। তাকে আমরা নজরে রেখেছি। তাকে ডেকে বারবার জেরা করা হচ্ছে। এই ঘটনায় তার কি ভূমিকা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” তার কিছু পরেই সহপাঠী যুবকের গ্রেফতারের খবর আসে।
এছাড়াও ওই বৈঠকে পুলিশ কমিশনার জানান, নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, একজনই ধর্ষণ করেছে। বাকি চারজনের ঠিক কি ভূমিকা ছিলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ফরেনসিক ও মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট ও কিছু টেকনোলজিক্যাল এভিডেন্স পাওয়া বাকি আছে। সেগুলি পাওয়া গেলে জানা যাবে কে ধর্ষণ করেছে। অভিযুক্ত পাঁচ জনের পাশাপাশি নির্যাতিতার সহপাঠীর পোশাকও বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে নির্যাতিতার মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। যে কারণে, ধৃতদের বিরুদ্ধে বিএনএসের আরো কয়েকটি ধারা যুক্ত করা হয়েছে। তবে নির্যাতিতার বাবার সিবিআই তদন্ত চাওয়া নিয়ে পুলিশ কমিশনার কোন মন্তব্য করতে চাননি।