eaibanglai
Homeএই বাংলায়অপহরণের নাটক করে বাড়ী থেকে পলাতক কার্মেল স্কুলের ছাত্রী উদ্ধার দুর্গাপুরে

অপহরণের নাটক করে বাড়ী থেকে পলাতক কার্মেল স্কুলের ছাত্রী উদ্ধার দুর্গাপুরে

নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর: সরস্বতী পুজো দেখতে গিয়ে অপহৃত হয়েছে মেয়ে – এক স্টাফ নার্সের এই অভিযোগ ঘিরে মঙ্গলবার দিনভর তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীতে। দিনের শেষে স্টীল কার্মেল স্কুলের ছাত্রী সেই মেয়েকেই কিনা ৩৬ ঘন্টা পর বহাল তবিয়তে পাওয়া গেল বাড়ি থেকে ৭ কিমি দূরে ফুলঝোড় কার্মেল স্কুলের সামনের এক টি-স্টলের পরিবারের কাছে খোশগল্প করার আড্ডা থেকে।

সোমবার রাত্রে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কান্নাকাটি করা অবস্থায় ১২ বছরের ওই মেয়েটিকে দেখে মায়ার বশে ঘরে ডেকে আশ্রয় দিয়েছিলেন ওই চা দোকানি। ওই পরিবারকে আদতে ‘বাড়ি থেকে পালানো’ ওই মেয়ে আভোরা ভট্টাচার্য্য জানায়, সে নাকি পরিবারের সাথে ব্যাঙ্গালোর থেকে দুর্গাপুর এসে হারিয়ে গেছে! দয়া পরবশ হয়ে ওই দোকানদার আভোরাকে একটি সোয়েটারও কিনে দেন, বলে তাকে উদ্ধারের সময় পুলিশ জানতে পারে।

শহরের স্টিল কার্মেল গার্লসের ছাত্রী আভোরা কিডন্যাপ হয়েছে, এই অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। এই ঘটনায় দিনভর তোলপাড় চলে ইস্পাত নগরীর বিভিন্ন এলাকায়। পুলিশ ঐ ছাত্রীর এক সহপাঠীসহ দুই কিশোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও অপহরণের অভিযোগে কোনোই সারবত্তা খুঁজে পায়নি।

আবার, একটি সূত্র জানায়, নিউটাউনশিপ থানা এলাকার বি – ওয়ান মোড় থেকে ডানদিকে সোমবার রাত্রী ৮:৪৫ নাগাদ মেয়েটির একা হেঁটে যাওয়ার একটি সিসিটিভি ফুটেজও পাওয়া গেছে। এটি হাতে পেতেই তদন্তে গতি বাড়ায় পুলিশ। পুলিসের ডেপুটি কমিশনার অভিষেক গুপ্তা বলেন, “মেয়েটিকে টেনে হিঁচড়ে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে – এমন প্রমাণ বা জন্য ফুটেজ মেলেনি।” তিনি জানান, “সে স্বেচ্ছায় কোথাও চলে যায় – এটাই আমাদের মনে হচ্ছে।”

স্টিল কার্মেলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আভোরা ভট্টাচার্য গতকাল সকালে সরস্বতী পুজো দেখতে তার এডিসন রোডের বাড়ী থেকে বেরিয়ে ইস্পাত নগরীরই হর্ষবর্ধন রোডের বাসিন্দা এক সহপাঠীর বাড়ি যায়। আভোরার মা স্বস্তিকা ভট্টাচার্য্য পেশায় দুর্গাপুর ইস্পাত হাসপাতালের স্টাফ নার্স। তিনি জানান, “সন্ধ্যা অব্দি মেয়ে বাড়ি না ফেরায় খোঁজ নিতে শুরু করি। বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও কোনো হদিস পাইনি। শেষে পুলিশের দ্বারস্থ হই।”

বন্ধুর বাড়ি যাওয়ার পর রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া আভোরার কোনো হদিশ পুলিশও পায়নি মঙ্গলবার সন্ধ্যা অব্দি। তবে, তার মা স্বস্তিকা মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে – এই অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ হর্ষবর্ধন রোড থেকে আভোরার সহপাঠী অদৃজা বসু ও তার প্রতিবেশী দুই সিনিয়র ছাত্রকে থানায় এনে মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পুলিসের এক বরিষ্ঠ আধিকারিক বলেন, “নিখোঁজ মেয়েটির হদিশ পেতেই ওদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনা হয়েছিল।” পুলিশেরই একটি সূত্র জানায়, অদৃজার প্রতিবেশী দুই সিনিয়র ছাত্র নাকি জেরার মুখে স্বীকার করেছে, তারা আভোরাকে তারা নিউটাউনশীপ থানা এলাকার অমরাবতী কলোনির কাছে গতরাতে নামিয়ে এসেছে। দুই ছাত্রের দাবি, আভোরার কথামতই তারা ওকে সেখানে নামিয়ে আসে।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অবশ্য উঠে এসেছে, গতকাল সকালে পড়াশোনা নিয়ে মায়ের কাছে বকুনি খায় আভোরা, তার পরই সহপাঠি আদ্রিজার বাড়ী যায় সে। কিন্ত, অমরাবতী কেনই বা যেতে চেয়েছিল আভোরা? একটি সূত্র জানায়, এবিএল কলোনীতে তার দীদার বাড়ি। সেখানেই সম্ভবতঃ সে যেতে চেয়েছিল। এদিন স্বস্তিকাকে সাথে নিয়ে পুলিশ এবিএল কলোনির ওই বাড়িতে যায়, সেটি তখন তালাবন্ধ ছিল। এদিন রাত্রে ফুলঝোড় কার্মেলের সামনের চা দোকানির হেফাজত থেকে মেয়েটিকে উদ্ধারের পর পুলিশ জানতে পারে, দীদার বাড়িতে তালা ঝুলছে দেখে অসহায় হয়ে পড়ে আভোরা ফুলঝোড় স্কুলের সামনে বসে বসে কাঁদতে থাকে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments