নিজস্ব প্রতিনিধি, দুর্গাপুর:- জেলার নয়টি বিধানসভা এলাকায় ২১ জন পর্যবেক্ষক বসিয়ে, দলের ভেতর দলাদলি কমিয়ে এবার পরের বিধানসভা ভোট বৈতরণী পার হতে নতুন কৌশলে কোমর বাঁধছে তৃণমুল কংগ্রেস।
তবে, সেই চেষ্টা আদৌ কতটা ফলপ্রসূ হবে, নতুন প্রয়াসের পরেও তা নিয়ে আশংকা কিন্ত রয়েই গেছে ঘাসফুল শিবিরের সংবেদনশীল একাংশের। তারা বলছেন – “ওপরতলায় বসে যারা এমন চাল দিলেন, তাতে দল আদতে কাদের কিস্তিমাত আশা করছে – বিরোধী দলের, নাকি দলেরই বেবাগা লোকেদের জব্দ করতে নতুন দাওয়াই এটি, অথবা নিরন্তর চলমান অভ্যন্তরীন কোন্দলে শীতের কম্বল চাপা দিতে তৃণমুল কংগ্রেসের এটা আরেকটা অগোছালো মরীয়া প্রয়াস মাত্র- তা ঠিক ঠাহর হচ্ছেনা এখনই!”
যে ২১ জন দলীয় পর্যবেক্ষকের তালিকা মঙ্গলবার জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ দুর্গাপুরের জেলা কার্যালয়ে প্রকাশ করেছেন, তাতে জেলা থেকে জেতা দুই মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, মলয় ঘটক তো রয়েছেনই, রাখা হয়েছে জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর নিজেকেও। রয়েছেন অন্য তিন বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় (রাণীগঞ্জ), বিধান উপাধ্যায় (বারাবনি) ও হরেরাম সিং (জামুরিয়া) কে। প্রদীপ মজুমদারের সাথে দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রে রাখা হয়েছে তার ইদানিং কালের তিন ছায়াসঙ্গী সুভাষ মন্ডল, প্রভাত চট্টোপাধ্যায়, কবি দত্তর মধ্যে শুধুমাত্র প্রভাতকেই। কবি নিজের মুখে বারে বারে ‘দলের কেউই নই ‘ বলে প্রচার করায় সম্ভবতঃ এই একটি ক্ষেত্রেই তাকে ব্রাত্য রাখা হয়েছে দলের লজ্জা ঢাকতে।
২০২৫ এর ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনীর জন্যই এইসব পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন করা হয়েছে। যার মুখ্য উদ্দেশ্য ২০২৬র বিধানসভা নির্বাচন।
দুর্গাপুর (পশ্চিম) কেন্দ্রে শহরের পুরপ্রধান অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের সাথে গুঁজে দেওয়া হয়েছে ভোটে তার স্বামী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়কে পরাস্তকারী প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ পরিয়ালকে। আর রাখা হয়েছে সিপিএম থেকে আসা পঙ্কজ রায় সরকারকে। এই পংকজকে নিয়েই জেলা তৃণামূল কংগ্রেসে দলের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ এখন কার্যতঃ কোণঠাসা। তাকে দলে আনার অন্যতম নেপথ্য কারিগর কবি দত্ত এখন এই পঙ্কজ ইস্যুতেই নরেন্দ্রনাথের তীব্র বিরোধী বলে দলের অভ্যন্তরে দারুন চর্চা। সেই কারণেই এবারের দুর্গাপুর উৎসবের মূল গায়েন কবি বলেই এখনো জলে নেমেও চুল ভেজাননি নরেন্দ্রনাথ। সেই পঙ্কজকে ফের পর্যবেক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দুর্গাপুরের এই কবিরাজকে রাজনীতির পাশা খেলায় এক কিস্তি দিলেন নরেন্দ্রনাথ, বলে রাজনৈতীক বিশ্লেষকদের অভিমত।
অবশ্য, কবি ছাড়াও নরেন্দ্রনাথের আচমকা ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা পঙ্কজের হঠাতই ‘আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে ওঠা দেমাক নরেন্দ্রনাথ ঘনিষ্ঠ অনেক দলীয় নেতা, শ্রমিক, যুব নেতা, কর্মীরই না-পসন্দ। সম্ভবতঃ তাই ক্ষুব্ধ নেতা, নেত্রীরা দুমাস হলো আর জেলা কার্যালয়েও যেতে চাইছেননা। সেই পংকজকেই পদে বসানোয় তারা এখনো মুখ খোলেননি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ বলেছেন, “দলের এমন হাল যে এক ব্যাবসায়ী আর এক সিপিএমের প্রাক্তন হরিদাস এবার পর্যবেক্ষক হয়ে আমাদের রিপোর্টকার্ড লিখবে?” এই তালিকায় নরেন্দ্রনাথের পুরোপুরি সায় থাকায় প্রমাণ হয় – লড়াই করে ঘাসফুলে আশ্রয় নেওয়া পঙ্কজকে তিনি ভরসা করে আরেকটি রাজনৈতীক সংগ্রামের সুযোগ দিলেনl নিজেকে প্রমাণ করার দায়িত্ব এবার পংকজের, যা এখন থেকে তার শিরে সংক্রান্তি আর শিয়রে ক্রান্তিকাল।
এই দুর্গাপুর (পশ্চিম) বিধানসভায় গত ২০১৬, ২০২১ দুটি ভোটেই রাজ্যের শাসক তৃণমুল কংগ্রেস গো-হারা হারে। হেরেছিল ২০১৯র লোকসভা ভোটেও। যে দুটি ক্ষেত্রেই পঙ্কজের অবদান ছিল লক্ষ্যণীয়।