মনোজ সিংহ, দুর্গাপুর: আজ শুক্রবার (৬/১২/২৪) শুরু হচ্ছে দুর্গাপুর উৎসব, সিজন টু। চারিদিকে সাজো সাজো রব, কিন্তু কোথাও যেন ছন্দ পতন হচ্ছে, আর তা ধরা পড়ছে খালি চোখেই।
রাজ্যের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে সামনে রেখে এবার উৎসবের মূল কর্ণধার দুর্গাপুরের ব্যবসায়ীরা। যেহেতু ব্যবসায়ীরা একজোট, তাই তোড়জোড়ের খামতি নেই, কিন্তু কোথাও যেন গোড়াতেই ভাটা পড়েছে উৎসবে। ঠিক জমে ক্ষীর যেন আর হচ্ছেনা। আগেরবার আসানসোল উৎসবকে ছাপিয়ে যায় দুর্গাপুর উৎসব। এবারে শহরের অনেক গণ্যমাণ্যের ঠিক যেন মন নেই আর উৎসবে। কেনো, কি হলো দুর্গাপুরের, কিসের এই মনের রোগ?
মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার দ্বিতীয় বর্ষ উৎসবের ঘোষনা করে দাবি করেন, “এবার আরো জমজমাট হবে দুর্গাপুর উৎসব।” কিন্ত, তা আর হচ্ছে কই? উৎসবকে ঘিরে রাজ্যের শাসকদলই যে আড়াআড়ি দুভাগে দুটি টুকরো। আগেরবারের কান্ডারী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এবার বেশ নিষ্ক্রিয়, নিস্প্রভ। তাকে আগেরবারের মতো মেলা ময়দানের তাঁবুতে দেখাই যায়নি। তিনি নিশ্চুপ তো বটেই, উৎসবের খুঁটি পুজোর দিন কেউ কিছু আঁচ করার আগেই তিনি মাইক ধরে হুঁশিয়ারি দিলেন, “এই উৎসব করো ব্যাক্তিগত নয়,এই উৎসব সবার।” তার এই ‘ব্যাক্তিগত ‘ খোঁচা ঠিক কি পরিপ্রেক্ষিতে, সেটি নরেন্দ্রনাথ স্পষ্ট করে না বললেও, সেটি হজম হয়নি আয়োজক কমিটির। অনেকেই সেদিন গুটিয়ে গেলেও, পরে শাসক দলের জেলা সভাপতি নিজেই নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছিলেন মাঝের কয়েকটি দিন। আয়োজকেরাও নরেন্দ্রনাথকে উল্লেখযোগ্য রকম এড়িয়ে চলেছেন। হয় কারো নির্দেশে, নয়তো ফের বেফাঁস অপমানের ভয়ে, বলেই তাদের অনেককেই একান্তে জানিয়েছেন।
কিন্ত কেনো এত রেগেই বা আছেন নরেন্দ্রনাথ? শাসক তৃণমুল কংগ্রেসের অভ্যন্তরীন সূত্রে জানাযায় শহরের ব্যবসায়ীদের মহাগুরু কবি দত্তকে শহরের একের পর এক পদ দত্তক দেওয়ার পর থেকেই বেজায় খাপ্পা নরেন্দ্রনাথ। তিনি বেশ বুঝতে পারছেন কলকাতার এক অবিশ্বাসী নাগর মন্ত্রীকে বগলদাবা করে বেওসায়ীদের একটি চক্র যেভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে, তাতে নাটের গুরু নাকি ওই একজনই, যার নিজের বিচরণ ওপরতলার চণ্ডীপাঠে আর তার হয়ে জুতো সেলাই করছেন তারই চারপাশে লেপ্টে থাকা চাকরবাকর চারজন। “
এরাই এখন দুর্গাপুরের মালিক। এদের কথাতেই দুর্গাপুরের সূর্য উঠবে আর কটা দিন পর,” দাবি উৎসব কমিটি ঘনিষ্ঠ এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর। আর এসব সইতে নারাজ নরেন্দ্রনাথ তাই কখনো হুংকার ছাড়েন তো কখনও আড়ালে সরে যান। দল তাকে নিয়ে কি তবে ছেলেখেলা করছে – তার মনে এমন প্রশ্ন উঁকি দেওয়াটা এখন আর অস্বাভাবিক কিছু নয়। সম্ভবতঃ এবারের উৎসবে তাই নরেন্দ্রনাথ ভক্ত উৎসাহী যুবদের ভিড় এখনও নেই। উল্টে, সরে পড়তে শুরু করেছেন কেউ কেউ। পৌরসভার এক প্রাক্তন কাউন্সিলর গোড়া থেকেই উৎসবের সিজন – টু নিয়ে দারুন উৎসাহী ছিলেন। এবারের উৎসবের থিম – ‘গন্তব্য দুর্গাপুর ‘ তারই বেঁধে দেওয়া। কেউ কিছু বোঝার আগেই তার দলবল নিয়ে বুধবার রাত থেকে নিজেকে হঠাৎই তিনি গুটিয়ে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবারও তার মান ভাঙেনি।
মেলা শুরুর আগেই কি উৎসবে তবে শুরু হলো ভাঙনের খেলা? এনিয়ে কবি দত্ত বা নরেন্দ্রনাথ যেমন কিচ্ছু রা টি করেননি, তেমনি উদ্বোধনের আগের সন্ধ্যা থেকেই নিজের মোবাইল ফোনটি ড্রাইভারের পকেটে গুঁজে দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘরে ঘুমাচ্ছেন বিদ্রোহী রমাপ্রসাদ হালদার। তার ড্রাইভারের বয়ান, “দাদার শরীর খারাপ, শুয়ে আছেন, কারও ফোন ধরছেননা।” এই রমাপ্রসাদ এতকাল ছিলেন কবির ঘনিষ্ঠ বৃত্তে। উৎসবের মুখে কেনো ছিটকে গেলেন – এদিন ঠিক বোঝা যায়নি। খুঁটি পূজোর দিন শরীর খারাপ ছিল মেলার মালিক কবি দত্তর, আর উদ্বোধনের আগে শরীর খারাপ রমা হালদারের। তবে, উৎসবটা সুস্থ হবে তো – প্রশ্ন নগরবাসীর।