জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দুর্গাপুরঃ- নিজেদের আন্তরিকতার গুণে যেসব পত্রিকা গোষ্ঠী দুর্গাপুরের সীমা ছাড়িয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সাহিত্য প্রেমী মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছে তার অন্যতম হলো পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের ‘আন্তরিক’ সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী। আন্তরিক হলো এক আবেগের নাম, ভালোবাসার নাম, ভাল লাগার নাম। আন্তরিক মানেই মৈত্রী বন্ধনের নাম, সৎ প্রচেষ্টার নাম। নিজের নামের প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলা নববর্ষের প্রাক্কালে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরে দুর্গাপুরের বুকে ভিন্ন স্বাদের সমাজসেবামূলক সাহিত্য পত্রিকা উপহার দিয়ে চলেছে ‘আন্তরিক’ সাহিত্য পত্রিকা গোষ্ঠী।
অতীতের পথ অনুসরণ করে গত ৯ ই এপ্রিল নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় প্রাক্ নববর্ষ উদযাপন। এপ্রিলের প্রখর তাপকে উপেক্ষা করে রবীন্দ্রনাথের চির পরিচিত ‘এসো হে বৈশাখ…’ সংগীতের সুরে সুর মিলিয়ে শতাধিক শিশু শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক ও সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোভাযাত্রায় পা মেলান। ডাক দেন শুভ চেতনার। সত্যিই সে এক অপূর্ব দৃশ্য। বহু পথচলতি মানুষ সেই দৃশ্য দ্যাখার জন্য ক্ষণিকের জন্য থেমে যান।
শোভাযাত্রার শেষে অতিথিরা উপস্থিত হন দুর্গাপুরের পাম্প হাউস নিকটবর্তী রঙ্গন গেস্ট হাউসে। সেখানে ‘আন্তরিক’ পত্রিকা প্রকাশকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেল। প্রসঙ্গত ‘আন্তরিক’ পত্রিকাটির এটি পঞ্চম বর্ষের প্রথম সংখ্যা। যাইহোক প্রায় শতাধিক কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সবচেয়ে উৎসাহ ছিল শিশু-শিল্পীদের। তাদের উচ্ছ্বলতায় ও কল-কাকলিতে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান মঞ্চ। হলে উপস্থিত সবার নজর তখন ওদের দিকে। সত্যিই এ-এক মনোরম দৃশ্য।
পত্রিকা প্রকাশ, শিশুদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কবিতা পাঠ, সংগীত, শ্রুতিনাটক, নৃত্য এবং ফাঁকে ফাঁকে অতিথিদের বক্তব্য- সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ ঘন্টার এক অসাধারণ অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকেন হলভর্তি দর্শক। শিশু শিল্পী দেবপ্রিয়, দেবব্রত, সরস্বতী, রাখী, পল্লবি, রিয়াদের অনুষ্ঠান দর্শকদের মুগ্ধ করে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অন্তরা সিংহরায়।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্বলিত করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করে দুই ক্ষুদে শিল্পী দেবপ্রিয় ও দেবব্রত। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উপস্হিত অতিথিদের চন্দনের ফোঁটা, ব্যাচ ও স্মারক উপহার দিয়ে বরণ করে নেন পত্রিকার সম্পাদিকা অন্তরা সিংহরায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সঞ্জয় কুমার মুখোপাধ্যায়, বিশেষ অতিথি অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায় সহ পত্রিকার সভাপতি অশোক সিংহরায়, ডঃ বাসুদেব হাজরা, শিবদাস রুদ্র , তরুণ সাহা, সুইটি রায়, গৌতম দাস, চন্দ্রা পাঁজা, অর্চনা সিংহরায়, মধুসূদন রায়, উমা শংকর সেন, সমীরন পাত্র, বিশিষ্ট সাংবাদিক স্বরূপম চক্রবর্তী সহ আরও অনেক সাহিত্যপ্রেমী মানুষ।
অন্তরা দেবী বললেন – আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শিশুদের আমরা সারা বছর ধরে বিনামূল্যে নাচ, গান, কবিতা, অঙ্কন প্রভৃতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। তাদের সুযোগ ও অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য প্রতি বছর এই বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করি। সঙ্গে বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কবি-সাহিত্যিক ও শিল্পীরা অনুষ্ঠান করেন। এই ভাবেই ‘আন্তরিক’ সারাবছর ধরে এলাকায় সুস্থ ও সাংস্কৃতিক চেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাহিত্যের সাধনা করে চলেছে। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তিনি সকলকে নববর্ষের অগ্রিম প্রীতি, শুভেচ্ছা ও হার্দিক অভিনন্দন জানান।