eaibanglai
Homeএই বাংলায়যুবতী কর্মীর টাকা,গয়না,বাড়ী লোপাট করে দুর্গাপুরে একদিন আটক অ্যাবাকাস্ সেন্টারের মালিক

যুবতী কর্মীর টাকা,গয়না,বাড়ী লোপাট করে দুর্গাপুরে একদিন আটক অ্যাবাকাস্ সেন্টারের মালিক

স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর:- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালিকের বাড়িতে কার্যত ‘গৃহবন্দী’ করে আটকে রাখা অবিবাহিতা এক যুবতী কর্মচারীকে স্থানীয়দের সহায়তায় বুধবার প্রায় মাঝ রাতে উদ্ধার করল পুলিশ। আটক করা হয়েছে সিটি সেন্টারের ‘অ্যাবাকাস অ্যাকাডেমী’ নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির মালিক সুগত ঘোষকেও। বৃহস্পতিবার তাকে কয়েক দফা জেরা করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

উদ্ধার হওয়ার পর মহুয়া ভট্টাচার্য নামের ওই যুবতী পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছে অভিযোগ করেন, গত কয়েক মাসে তার নগদ ২০ লক্ষ টাকা, ব্যাঙ্কের লকারে রাখা ১৫ লক্ষ টাকার সোনার গয়না তো বটেই, সিটি সেন্টারের নন কম্পানি পাড়ায় তার আস্ত পৈতৃক বাড়ীটাও দখল করে নিজের কব্জায় রেখে সেই বাড়ীতে ভাড়াটেও বসিয়ে দিয়েছেন সুগত। ইতিমধ্যেই বাড়িটির সম্পূর্ণ মালিকানা কৌশলে নিজের দেহেরাদুনে পাঠরত মেয়ে সুদীক্ষা ঘোষের নামে নথিভুক্ত করার জন্য আসানসোল দুর্গাপুর উন্নয়ন সংস্থা (এডিডিএ)র কাছে প্রয়োজনীয় আট লক্ষ টাকার ফিস্ও জমা করে দিয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে মহুয়াকে নিজের হেফাজতে রেখে কৌশলে একে একে টাকা, গয়না, বাড়ী দখল করে চলেছেন সুগত-এটা টের পেতেই ওই যুবতী প্রতিবাদ করেন। তারপর তার উপর অত্যাচারের ধরনটাও পাল্টে ফেলা হয়। মহুয়ার কথায়, “ওনার অ্যাকাডেমীর তিনতলার একটি ক্লাসরুমে আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সারাদিন সেখানে ক্লাসের পর রাত্রে আমার শোওয়ার সুযোগ হতো। আমার ফোনে নজরদারি শুরু হয়। প্রতি রাত্রে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে আমি সারাদিন কার কার সাথে কি কথা বলেছি তার কল রেকর্ডিং শুনতেন সুগত স্যার।” তার কথায়,”বারবার আমাকে শাসানো হতো-টাকা,গয়না, বাড়ীর কথা আমি যেন কাউকে না বলি। বললে বিপদ বাড়বে।”

নন্দলাল বিথিতে মহুয়ার পৈতৃক বাড়ি

নন কোম্পানি পাড়ার মহুয়ার বাবা সুশীল ভট্টাচার্য চাকরি করতেন এম.এ.এম.সি কারখানায়। তিনি ১৯৯৮-এ গত হওয়ার পর মা চিত্রালী আর মহুয়ার ছোট্ট সংসার হয় সিটি সেন্টারের নন্দলাল বিথির প্রীতিবিহার উদ্যানের ঠিক বিপরীতে। “‘কিন্তু সেই মাও চলে গেল গত বছর আর পুরোপুরি একা হয়ে গেলাম আমি,” বললেন মহুয়া। এরই মাঝে সুগত’র অ্যাবাকাসে চাকরি নেন তিনি। মহুয়ার মায়ের অসুস্থতার সময় স্বেচ্ছায় এগিয়ে এসে পাশে দাঁড়ান সুগত। চিত্রালী দেবীর মৃত্যুর পর মহুয়া ‘একা অসহায়’ এই অজুহাতে তাকে কবিগুরু রোডের অ্যাকাডেমীর তেতলায় স্থানান্তরিত করে একে একে তার টাকা, গয়না ও বাড়ী হড়প করেন সুগত, বলে মহুয়ার অভিযোগ। সেই অসহায় মহুয়া বুধবার সন্ধ্যায় সাহায্য চেয়ে ফোন করেন তার পুরনো কর্মস্থল বেনাচিতির একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকে। বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে প্রধান শিক্ষিকা শাহিদা খান দ্রুত সরাসরি দুর্গাপুরের মহকুমা শাসক ও সিটি সেন্টার পুলিশ ফাঁড়ির সাহায্য প্রার্থনা করেন। এরপরই পুলিশ গিয়ে মহুয়াকে সুগত’র কবল থেকে উদ্ধার করে। আটক করা হয় সুগতকেও। বুধবার রাত্রি ২টো অবধি ফাঁড়িতে দফায় দফায় জেরা করা হয় সুগতকে। ফাঁড়িতে পৌঁছান শাহিদা, দুর্গাপুর সিটি জোন্স ফোরামের পীযূষ মজুমদার সহ মহুয়ার প্রতিবেশীরাও। সকলেরই দাবি, মহুয়ার পৈতৃক বাড়ির দখল ফের ৪৮ বছরের অবিবাহিতা অসহায় মহুয়ার হাতেই তুলে দিতে হবে। এ বিষয়ে পীযূষ বলেন, “বিষয়টি পুলিশই দেখছে। যা বলার পরে বলবো।” শাহিদার বাড়িতেই আপাতত আশ্রয় মহুয়ার। শাহিদা বলেন, “ওনার ফোন পেয়ে আমি আর স্থির থাকতে পারিনি। পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য প্রার্থনা করি।”

এদিকে, পুলিশ মহুয়ার ৩০ ভরি গয়না কেন সুগত’র স্ত্রী শিল্পীর লকারে গেল তার খোঁজও করছে। মহুয়ার বাড়িতে সুগত নতুন ভাড়া বসিয়েছেন। সেই ভাড়াটে সন্দীপ সামন্ত বলেন,” আমার সাথে ১১ মাসের চুক্তি। বাড়ির মালিক হিসেবে সুগত’ই তো আমার সাথে চুক্তি করেন। এটা যে অন্যের বাড়ি দখলের চেষ্টা চলছে, তা আমার জানা ছিল না।”

পিতৃ-মাতৃহীন, অবিবাহিত-অসহায় মহুয়ার পাশে পুলিশ, প্রতিবেশী ও প্রশাসন দাঁড়িয়েছে, ঠিকই, কিন্তু সংশয় সুগত’র বিভিন্ন মহলে প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে-বলে জানালেন এলাকাবাসী। বিষয়টি নিয়ে এদিন অবশ্য মুখ খোলেনি পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আড়ালে তিনি যে এভাবে এক অসহায় মহিলার সর্বনাশ করেছেন তার যোগ্য শাস্তি ওর পাওয়া দরকার। মহিলার অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

RELATED ARTICLES
- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments