নিজস্ব প্রতিনিধিঃ পানাগড় ও বড়জোড়াঃ মানুষ খুন, ফসল লুট, বেপরোয়া ঘর বাড়ি ভাঙচুর- দলনার দামালেরা এভাবেই তরস্ত করে ছেড়েছে দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি জেলার জনজীবন।হাতিকূলের মায়া দয়া না থাকতে পারে, তা বলে কি মানবিকতার বিসর্জন দেবে মানুষ- এই প্রশ্ন জেলাগুলিতে ঘুরপাক খাছে গত আড়াই দশক। হাতি নিয়ে গত চব্বিশ ঘণ্টাই দুই জেলাই পর পর দুটি ঘটনা নতুন করে উস্কে দিল চিরকালীন সেই প্রশ্নকেই হাতি না মানুষ ! দৃশ্য -১ ঃ দেড় বছর আগে পানাগড় সেনা ছাওনির গোলা বারুদ ঘেরা জঙ্গলে হটাত হারিয়ে গেল পূর্ণ বয়স্ক পাঁচ-পাঁচটি “খুনের আসামী” একটি দাঁতাল, ১৫ মার্চ
২০১৮। বিস্তর ঘুরেও খোঁজ মেলেনি তাঁর। ৯ এপ্রিল, ২০১৮ ১০০ জনের হুলাপার্টি নিয়ে সেনা ছাউনির অন্দরে চব্বিশ ঘণ্টা ” অপারেশন” চালানো হল। পাঁচ দলে বিভক্ত একটি দলের হুলা বাহিনী আচমকাই মুখোমুখি হয়ে পরে ওই দাঁতালের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্রুধ দাঁতাল “চার্জ ব্যাক” করলো নিমেষেই। গুরুতর জখম হলেন এক বন কর্মী। দ্রুত তাকে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানাতরিত করা হল আর যবনিকা পড়ল হাতি খেদা’নোয়। কার্যতঃ হারিয়েই গেলো দাঁতাল হাতি। ২৮ এপ্রিল, কাকভোর। একটি হাতির আর্তনাদে খান খান হয়ে গেলো সেনা ছাওনির গভীর নিস্তব্দতা। ত্রস্ত পায়ে, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় সেনা কর্মীরা দলে দলে বেড়িয়ে পড়লেন হাতির খোঁজে। বিস্ময় সাথে জওয়ানেরা দেখলেন ব্রিটিশ আমলে খনন করা ইটের গাঁথনী ঘেরা পরিত্যক্ত একটি কুয়োয় পড়ে রয়েছে শীর্ণ, মরিয়া সেই দাঁতাল। দ্রুত খবর গেলো বর্ধমান বন বিভাগে। লোকলস্কর নিয়ে সেনা ছাউনিতে ঢুকল বন বিভাগের উদ্ধারকারি দল। পর পর দুটি ঘুমপাড়ানি গুলি বিদ্ধ করা হল রুগ্ন দাঁতালের শরীরে।তারপর টানা চার ঘণ্টার কসরতে ক্রেন দিয়ে চাগিয়ে ওপরে তোলা হোল সেই দাঁতালকে। “হাতীটির শারীরিক অবস্থা আদেও ভালো ছিলোনা।তারওপর ২৫ ফুট গভীর কুয়োটিতে পড়ে নতুন করে জখম হই হাতিটি। তাই,তাকে তুলে ঝাড়গ্রামের শুষ্রুষা কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করি আমরা,” বললেন বর্ধমানের বিভাগীয় বনাধিকারিক দেবাশিস শর্মা।কিন্তু, ২০০ কিলোমিটার পাড়ি দেওউয়ার মাঝে, বাঁকুড়া শহর ঢোকার মুখেই মারা যাই উদ্ধার হউয়া সেই দাঁতাল। ঠিক কি কারনে মরল ওই দাঁতাল? কুয়োই পড়ে জখম হয়ে, নাকি দুর্বল শরীরে ঘুমপাড়ানি গুলীর বোঝা সইতে না পেরে। “মৃৎ হাতীটির ময়না তদন্তের পরই তা জানা যাবে,” জানালেন দেবাশিস বাবু। দৃশ্য -২ ঃ বাঁকুড়ার বড়জোড়া রেঞ্জের গদারদিহি বিটের অন্তর্গত গদারদিহি হাই স্কুলের প্রায় মধ্যরাতে জঙ্গলে থাকা রেসিডেন্সিয়াল দুইটি হাতির তাণ্ডবে চালাই। গদারদিহি হাইস্কুলের গেট ভেঙে, প্রাচীর ভেঙে, স্কুলের ভিতরে প্রবেশ করে, মিড ডে মিলের চাল আলু খেয়ে তাণ্ডব চালায় দুইটি রেসিডেন্সিয়াল হাতি অন্যদিকে গ্রামের আরেক প্রান্তে থাকা একটি মুড়ি মিলের ভিতরে ঢুকে তছনছ করে দেয় দুইটি জঙ্গলে থাকা রেসিডেন্সিয়াল হাতি। বারংবার রেঞ্জ অফিস এবং বিট অফিসকে বলেও কোন লাভ হয়নি জানালেন এলাকার মানুষ। তাদের দাবি তারা রেঞ্জ অফিস এবং বিট অফিসে তেল এবং হোলা চাইতে গেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে তাদেরকে দেয়া হয় না। সেই কারণে এলাকার মানুষ তেল হুলা না থাকার কারণে রাতে প্রায় হাতির আক্রমণ হলেও তারা বেরোতে সাহস করেন না বারবার এলাকার ফার্স্ট আধিকারিকদের বললেও কোন লাভ হয়নি। একদিকে অনাবৃষ্টির কারণে এলাকায় চায সেরকম হয়নি অন্যদিকে হাতির তাণ্ডব এলাকার মানুষের নাভিশ্বাস ফেলে দিয়েছে তাই রাত হলে মানুষজনের বাড়ি থেকে বেরোনোর দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলাকার মানুষ ধারণা মাঠে, জঙ্গলে পর্যাপ্ত খাবার না থাকার কারণে হাতির ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। অবিলম্বে এর ব্যবস্থা নিতে হবে অন্যদিকে এই রেসিডেন্সিয়াল হাতির প্রায় গ্রামে আনাগোনায় স্কুল যেতে ভয় পায় স্কুল পড়ুয়ারা। কিভাবে এই রেসিডেন্সিয়াল হাতির তাণ্ডব থেকে বাঁচবে এলাকার মানুষ সেটাই এখন দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বনকর্মীর পদ্ম বাস্কে জানান যে এলাকায় প্রায় ১১ টি হাতে রয়েছে রেসিডেন্সিয়াল তার ভিতরে পাঁচটি হাতী কখনো বেলাতোড় জঙ্গলে কখনো বড়জোড়া জঙ্গল এইভাবে তাদের আনাগোনা। তাদের দাবি আমরা এদিক থেকে যখন তাদের তাড়িয়ে দিয়ে অন্য জঙ্গলে আবার পুনরায় সেই জঙ্গল থেকে তাড়া খেয়ে ফিরে আসে এদিকে এই ভাবেই এই হাতির দলটি ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্ষতি করছে এলাকার বিভিন্ন জায়গাতে ।