সঙ্গীতা চৌধুরীঃ- দুর্গা পুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটার পর এবার জগদ্ধাত্রী পুজো। বলা হয় যিনি জগৎকে ধারণ করেন তিনি এই জগতধাত্রী। আসলে ধর্মের অর্থ তাই যা ব্যক্তিকে ধারণ করে। যে কোনও ধর্মই মানুষকে মহান হতে শেখায় সাধারণ থেকে অসাধারণ হতে শেখায়। সেই সর্ব নিয়ন্তার কাছাকাছি যেতে শেখায়। কিন্তু কীভাবে আমরা সাধারণ থেকে অসাধারণ হতে পারি? তা আমাদের জানা নেই যদিও আমাদের আশেপাশে থাকা প্রত্যেকটি ধর্মই আমাদের সেই দিক নির্দেশ করেছে। আজ আমি বলব সনাতন ধর্ম কীভাবে একজন মানুষকে অসাধারণ হওয়ার পথ দেখিয়েছে? একবার একজন ভক্ত প্রশ্ন করেছিলেন, জীবনে অসাধারণ কীভাবে হতে হয়? প্রতিভাশালী হয়ে ওঠার পথ কী? তার উত্তরে স্বামী সোমেশ্বরানন্দ মহারাজ খুব সুন্দরভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন।
ঠাকুর, মা ও স্বামীজীর ভাবধারায় অনুপ্রাণিত এই মহারাজ তার জীবদ্দশায় সব সময় স্বামীজীর বাণী ও বেদান্তকে সহজ ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ” অ-সাধারণ তো তুমি আছই। ঈশ্বর প্রত্যেককেই অরিজিনাল করে সৃষ্টি করেছেন। এই দেখো না, তোমার বুড়ো আঙুলের ছাপটাও আর সবার থেকে আলাদা, এমন ছাপ আর নেই সারা পৃথিবীতে। প্রতিটি মানুষই অসাধারণ। ঈশ্বর কোনো ডুপ্লিকেট তৈরি করেন না। অথচ বড় হওয়ার নামে আমি এক ডুপ্লিকেট হতে চাই। তেন্ডুলকর হতে চাই, সলমান হওয়ার চেষ্টা করি, আম্বানী-মোদী-কুমার শানু হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কিংবা ছোট মামার মতো আই এ এস অফিসার, বন্ধুর বাবার মতো সিনিয়ার ম্যানেজার, বড় মাসির মতো ডাক্তার। ঈশ্বর আমাকে মৌলিক করে গড়েছেন, কিন্তু আমি জেরক্স কপি হয়ে উঠতে চাই। উপনিষদ তাই বলছে “আত্মানম বিদ্ধি”, নিজেকে জানো। নিজের স্বাভাবিক শক্তিকে চেনো, প্রতিভাকে খুঁজে বের করো, নিজস্ব বৈশিষ্ট্যকে অনুভব করো। কীভাবে নিজের স্বাভাবিক শক্তি, ট্যালেন্ট ও বৈশিষ্ট্য খুঁজে বের করতে হয় জানো ও নিজের শক্তিকে জেনে তার আনন্দ উপভোগ করো। এভাবে এটা আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে, এর চর্চা করা সম্ভব হবে, শক্তিশালী হয়ে উঠবে তুমি নিজস্ব অরিজিনালিটিতে। প্রতিযোগিতার দরকার নেই, নিজে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অন্যদের পিছনে ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই, অন্যকে হারিয়ে নিজে লাভ করার চেষ্টা অনাবশ্যক।’
সবশেষে মহারাজ তিনটি পদ্ধতির কথা বলেন যে তিনটি পদ্ধতি দ্বারা আমরা অসাধারণত্বকে অনুভব করতে পারি। সেগুলি হল- নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বাভাবিক শক্তিকে খোঁজা ও এর মাধ্যমে আনন্দ করা, এরপর সমাজের মানুষের কল্যাণে এই শক্তিকে ছড়িয়ে দেওয়া।




















