নীহারিকা মুখার্জ্জী,কলকাতাঃ- প্রচারের আলোর বাইরে থাকা দক্ষিণেশ্বরের গাঙ্গুলী বাড়িকে নিঃসন্দেহে সাহিত্যচর্চার সাধনক্ষেত্র বলা যায়। বাড়ির কর্তা অর্থাৎ প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় গত পঞ্চাশ বছর ধরে সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন। একটা সময় দূরদর্শন বা রেডিওতে তিনি নিয়মিত সাহিত্যচর্চার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। প্রথম সারির সংবাদপত্রে প্রায়শই তার নাম ছাপার অক্ষরে জ্বলজ্বল করত। তার লেখা অসংখ্য নাটক বা কবিতার বই পাঠক সমাজে সমাদৃত।
প্রদীপ বাবুর যোগ্য সহধর্মিনী দর্পণা দেবী। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যচর্চা করে চলেছেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তার লেখা কবিতা নিয়মিত স্থান পায়। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত সাহিত্য আসরে তিনি যে কতবার সম্মাননা পেয়েছেন গুণে শেষ করা যাবেনা।
তাদেরই সন্তান সূচনা গঙ্গোপাধ্যায় সেই বছর চার-পাঁচ বয়স থেকে একের পর এক কবিতা লিখে চলেছে। দেখতে দেখতে সেও বছর কুড়ি সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করে ফেলেছে। হয়তো বাবা-মার প্রভাব তার উপর পড়েছে।
প্রচারের আলোর বাইরে থাকতে চাওয়া প্রদীপ বাবুর মতই এক অনাড়ম্বর পরিবেশে গত ৫ ই ফেব্রুয়ারি কলকাতার আন্তর্জাতিক বইমেলায় গাঙ্গুলী পরিবারের তিন সদস্যের একাধিক কাব্যগ্রন্থ দিনের আলোর মুখ দেখে। কাব্যগ্রন্থ তো নয় প্রতিটি কবিতা যেন বাস্তবের প্রতিচ্ছবি। কবিতার মধ্যে পাঠক খুঁজে পাবে নিজেকে। প্রতিটি বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন সূচনা নিজে। প্রসঙ্গত সূচনা প্রতি বছর বিভিন্ন সাহিত্যসভায় প্রকাশিত অন্যান্য বইয়েরও প্রচ্ছদ আঁকে।
আঠাশটি কবিতা সমৃদ্ধ প্রদীপ বাবুর ‘ঈশ্বর দর্শন’-এ কবিতা রূপ ঈশ্বর দর্শন করা যাবে। প্রতিটি কবিতা কাব্য রসিকদের মনের ইচ্ছে পূরণ করবে। পড়লেই মনে হবে – এতদিন কোথায় ছিলেন!
চব্বিশটি কবিতা সমৃদ্ধ দর্পণা দেবীর ‘নবরত্ন কাব্যগাঁথা’ -তে বিক্রমাদিত্যের রাজসভার মত ন’টা নয় চব্বিশটি রত্ন শোভা পাচ্ছে। মন ভরিয়ে তোলার মত এক অসাধারণ কাব্যগাঁথা।
অন্যদিকে একত্রিশটি কবিতা সমৃদ্ধ সূচনার ‘জীবনের রঙ’-এ মানবসমাজের বিকৃত মানুষের জীবনের রঙিন চিত্র ফুটে উঠেছে। রঙ-তুলির বদলে এখানে কলম তুলির বদলে তরবারির ভূমিকা পালন করেছে। তুলে ধরেছে সেইসব মানুষের মুখোশ। পড়লেই চমকে যেতে হবে।
দর্পণা দেবী বললেন – আমাদের আর্থিক পরিস্থিতি ভাল নয়। কোনোরকমে সংসার চলে। তার মাঝেও সাহিত্যচর্চা করে চলেছি। বইমেলায় স্টল দেওয়ার মত ক্ষমতা আমাদের নাই। মেয়ে সূচনা মেলায় ঘুরে ঘুরে সেই বই বিক্রি করে। শুধু মেলায় নয় আরও কিছু জায়গায় সে বই বিক্রি করে। এটুকু বলতে পারি প্রতিটি কবিতা পাঠককে মুগ্ধ করবেই।