সংবাদদাতা, বর্ধমান:- কার্যত প্রায় ১ মাস ধরে জনসংযোগ অভিযান চালালেও সরাসরি বর্ধমান শহরে গো-ব্যাক শুনতে হয়নি বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষকে। বৃহস্পতিবারই মনোনয়ন পর্ব জমা দেবার কাজ শেষ হতেই সমস্ত রাজনৈতিক দলই রীতিমত কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন প্রচারে। শুক্রবার সকাল থেকেই আক্ষরিক অর্থে প্রচারে নামলেন দিলীপবাবু। আর প্রথম দিন বর্ধমান শহর ও শহর সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামে প্রচার শুরু করতেই তাঁকে শুনতে হল গো-ব্যাক শ্লোগান। এদিন সকালে বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগরে বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের বাড়ির কাছে দিলীপ ঘোষকে গো-ব্যাক স্লোগান দেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। পালটা বিজেপির সমর্থকরাও চোর চোর শ্লোগান দিতে থাকে। তারও পাল্টা তৃণমূলও চোর চোর বলে বিজেপির বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। যদিও বড় কিছু ঘটার আগেই পুলিশী হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিন এব্যাপারে দিলীপবাবু জানিয়েছেন, “আমি বলে দিয়েছি ‘হাতি চলে বাজার তো কুত্তা ভোকে হাজার’। হাতি চললে কুকুররা চিৎকার করবেই, এতে ঘাবড়াবার কোনও কারণ নেই। যবে থেকে রাজনীতিতে এসেছি এসব শ্লোগান শুনছি।
উল্লেখ্য, প্রচারের প্রথম দিনই দিলীপবাবু তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের এলাকা বাছেন। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, “দিলীপ ঘোষ কঠিন জায়গা থেকে সরল কাজ শুরু করে। সেজন্য বার্তা দিতে এসেছি এলাকা কারোর নয়, এখন দিলীপ ঘোষের এলাকা সব জায়গায়। এখানকার মানুষজন বিশেষত মহিলারা মিষ্টি, জল, মালা দিচ্ছেন। আমি লজেন্স দিচ্ছি। ভোট পরবর্তী হিংসায় এখানে একটি জায়গায় আমাদের কর্মীদের দোকানে লুট করা হয়েছিল। জবাবটা আমি ওইখান থেকেই দেবো। পাই পাই জবাব দেবো। আমরাও জানি কারা লুঠ করেছে। সবার কাছ থেকে সুদ-সহ আদায় করব, নাহলে বর্ধমান ছাড়া করব। গুন্ডাদের জায়গা। ভদ্রলোকরা বের হয়না। কিছু ছিঁচকে চোর, সমাজবিরোধী নেতা হয়ে চমকাচ্ছে। আপনি বলে দেবেন, দিলীপ ঘোষ এসেছে, সব কড়ায় গন্ডায় আদায় করবে। ভোটের পর আমাদের কর্মীদের দোকান-বাড়ি ভাঙা হয়েছে, লুঠ করা হয়েছে। তার জবাব দিতে আমি এসেছি। বাড়ি বিক্রি করে আমি আদায় করবথ”
এদিন দিলীপবাবু হাইকোর্টের রায় সম্পর্কে অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের বক্তব্য সম্পর্কে জানিয়েছেন, “মাথা খারাপ হয়ে গেলে লোক ওরকম বলে। তারা খালি চাইছে হাইকোর্টও ওদের পক্ষে রায় দেবে,সুপ্রিম কোর্ট ওদের পক্ষে রায় দেবে, সিবিআই ইডি সব ওরা যা বলবে করবে।” তিনি বলেন, “মমতা ব্যানার্জি যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন রোজ সিবিআই চাইতেন। গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে সিবিআই চাই, কুকুর মরে গেছে সিবিআই চাই। আর এখন সেই সিবিআই দেখে জ্বর এসে যাচ্ছে। দুর্নীতিগ্রস্ত যারা তারা এ ধরনের ভয় পায়। আর যখনই সত্যের পক্ষে লোক দাঁড়াবে তার বিরুদ্ধে এরা তাকে গালাগালি দেবে, সমালোচনা করবে, প্রেসের লোকেরা লিখলে তাকে পেটাবে সব এরকমই হচ্ছে, এটা পতনের দিকে যাচ্ছে। ওন্দার বিধায়ক বলেছেন সামনের সপ্তাহে ৩০ তারিখে আবার ৫৯ হাজার চাকরী চলে যাবে। তৃণমূল অভিযোগ করছে তাহলে কি বিজেপি চালাচ্ছে?” দিলীপবাবু বলেন, “কোর্টকে কে চালাচ্ছে, কোর্টকে চালাতে পারে কিনা আমি জানি না। কিন্তু এটা জলের মতো পরিষ্কার যতটা অবৈধভাবে নিয়োগ হয়েছে সব কটার চাকরি যাবে এবং যারা এর পিছনে আছে সবকটাকে জেলে যেতে হবে,সময়ের অপেক্ষা।”
আদালতের রায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বারংবার আক্রমণাত্মক দেখা গেছে। দিলীপবাবু বলেন, “একদম কেস করা নয়। ঢুকিয়ে দেওয়া উচিত ভিতরে। কারণ এই লোকেরা বাইরে থাকলে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা,অখন্ডতা,গণতন্ত্র, আদালতের অধিকার,নির্বাচন কমিশন,পার্লামেন্ট কাউকে মানে না এরা। কেবল রাজনীতি, সমস্ত নিয়মকানুনকে গুঁড়িয়ে দিয়ে, সমস্ত চোর ডাকাতদের নিয়ে এসে রাজনীতি করে ক্ষমতার দখলের চেষ্টা আর ক্ষমতা ভোগ করার চেষ্টা। সেই জন্য সমস্ত লোককে জেলে ঢোকানো উচিত, বাইরে থাকলে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।” নিয়োগ দুর্নীতি মামলা সম্পর্কে দিলীপবাবু এদিন বলেন, “কে কাকে অভিযোগ করল যায় আসে না। আইন আদালত আছে। যার বক্তব্য আছে সে কোর্টে যাক। যাতে আদালত বিচার করতে পারে, সবাই চোর সবাই চোর বলে সমাজের মধ্যে মানুষের মধ্যে একটা হীনমন্যতা চলে এসেছে। সব চোরেরাই কি রাজত্ব করছে? সবাই কি চোর? আমাদের সমাজের পক্ষে ভালো না,পরবর্তী প্রজন্মের পক্ষেও ভালো না।”