জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান-: ছট পুজো মূলত বিহারী সমাজের হলেও ছটপুজোর দিন গুসকরায় কুনুর নদীর ছটপুজোর ঘাটে এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকার সুযোগ পেল স্থানীয় ও আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারা। কার্যত সমস্ত ধর্মের মানুষ এই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করার জন্য ছটপুজোর ঘাটে উপস্থিত হয়।
ছট পুজো হলো সূর্য দেবতার উপাসনা যিনি আলো দিয়ে বিশ্বকে আলোকিত করেন, মানুষকে শক্তি ও জীবন দেন। চার দিন ধরে চলে এই পুজো৷ দীপাবলীর ৬ দিন পর কার্তিক মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে এই পুজো করা হয় বলে এর নাম ছট পুজো।
সূর্যদেবের ছোট বৌ ঊষাকে এই পূজায় ‘‘ছোটি মইয়া” হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে।
ছোটপুজোর ব্রতীরা ভাইফোটার পর থেকেই টানা নিরামিষ খান। পুজোর দু’দিন আগে থেকে লাউয়ের পদ খেতে হয়। পুজোর ঠিক আগের দিন ক্ষীরের ভোগ ‘খারনা’ নিয়ম পালিত হয়।
ছটপুজোর ডালাতে থাকে হলুদ গাছ, আম পল্লব, নারকেল, কলার কাঁদি, বিভিন্ন ফল, ঠেকুয়া ও খাস্তা টিকরি। নদীর ঘাটে একমনে সূর্যদেবের আরাধনা করার পর কোমর জলে দাঁড়িয়ে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে পুজোর ডালা অর্পণ করা হয়। মানতকারীরা বাড়ি থেকে ঘাট পর্যন্ত দণ্ডি কাটেন। প্রণাম করা হয় উদয়গামী এবং অস্তগামী সূর্য ও তাঁর স্ত্রী ঊষা ও প্রত্যুষাকে।
ছটপুজো উপলক্ষ্যে সেজে ওঠে কুনুর নদীর ছটের ঘাট। গুসকরা পুরসভার পক্ষ থেকে অস্থায়ী ঘাট তৈরি করে দেওয়া হয়।মধ্য গগন পার হয়ে সূর্য যত পশ্চিম দিকে ঢলে পড়তে থাকে ব্রতীদের সঙ্গে সঙ্গে তত সেখানে উৎসাহিদের ভিড় বাড়তে থাকে। যাতে কোনো অঘটন না ঘটে তার জন্য পুলিশ প্রশাসন ছিল তৎপর। সমগ্র ছট উৎসব পরিচালনা করে ছটপুজো সেবা সমিতি ও একান্ত আপন ক্লাব।
ছট পুজো উপলক্ষ্যে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার কয়েকজন কাউন্সিলর, বিশিষ্ট সমাজসেবী মলয় চৌধুরী, পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান বিনোদ চৌধুরী সহ বিহারী সমাজের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি, পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখার্জ্জী এবং আরও অনেকেই। ফিতে কেটে ছটের ঘাট উদ্ঘাটন করেন চেয়ারম্যান। তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন অন্যান্যরা।
বিহারী সমাজের পক্ষ থেকে ছট পুজোর ঘাটের সমস্যা সহ কয়েকটি দাবি তোলা হয়। এই প্রসঙ্গে কুশল বাবু বলেন – যেহারে ঘাটে ভিড় বাড়ছে তাতে সমস্যার সমাধান করতে হলে প্রায় হাজার ফুট ঘাট তৈরি করতে হবে। এরজন্য তিনি বিহারী সমাজের প্রতিনিধিদের পুরসভায় আসার আহ্বান জানান। তার প্রস্তাব – সবার মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঘাট গড়ে উঠুক।
অন্যদিকে ছটপুজো কমিটির সম্পাদক অজয় সাউ বললেন – পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে ছট পুজো চলছে। বিহারী সমাজের বাইরেও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ পুজো দেখতে আসছে। ফলে পুজো এখন সর্বজনীন রূপ ধারণ করেছে। আশাকরি আগামী দিনে সবার সহযোগিতায় ছটপুজো আরও তাৎপর্য লাভ করবে।