জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, গুসকরা, পূর্ব বর্ধমান:- ‘সংস্কৃত’ ভাষাকে প্রায় সমস্ত ভারতীয় ভাষার ‘জননী’ বলা হলেও বিদ্যালয় স্তরে দীর্ঘদিন ধরেই ভাষাটি অবহেলিত থেকে গেছে। অবজ্ঞাভরে মূলত ‘স্কোরিং সাবজেক্ট’ হিসাবে ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি পাঠ করে। ফলে ভাষাটির প্রকৃত রসাস্বাদন থেকে তারা বঞ্চিত থেকে যায়।
সংস্কৃত ভাষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলার লক্ষ্যে পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. সুদীপ চ্যাটার্জ্জীর উৎসাহে এবং সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সমীরণ রায়, ড. মণিমালা মণ্ডল সহ অন্যান্য অধ্যাপক ও বিভাগীয় ছাত্রছাত্রীদের সক্রিয় সহযোগিতায় ৩১ শে জুলাই ‘সেমিনার হলে’ প্রথমবারের জন্য জাতীয় সংস্কৃত সপ্তাহ উদযাপন বিষয়ক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভার মূল বক্তা ছিলেন গুসকরা মহাবিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রাক্তন প্রধান তথা প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ।
স্বাগত ভাষণে বিভাগীয় প্রধান সমীরণ রায় বলেন, সংস্কৃত ভাষার প্রতি আমাদের মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য আমরা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আশাকরি এই সেমিনার থেকে তারা যথেষ্ট উপকৃত হবে। পাশাপাশি তিনি এই দিনটির গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে সেমিনারে উপস্থিত থাকার জন্য তিনি নারায়ণ বাবুর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে নারায়ণ বাবু তার বক্তব্যে নিজের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। ঋগ্বেদের যুগ থেকে শুরু করে উপনিষদের ত্যাগের মন্ত্র, বৈদিক সাহিত্য ও লৌকিক সাহিত্যে প্রাচীন ঋষিদের অমূল্য অবদান,
অশ্বঘোষ, কালিদাস সহ একাধিক কবির অমর সৃষ্টি প্রভৃতি সম্পর্কে আলোকপাত করেন। মুহূর্তের জন্যেও প্রবীণ ব্যক্তিটিকে ক্লান্ত মনে হয়নি। তার মননশীল আলোচনা এক সময় অনুষ্ঠানটিকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। সংস্কৃত বিভাগের উন্নতির জন্য তিনি বিভাগীয় অধ্যাপকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এর আগে সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অধ্যক্ষ ডঃ সুদীপ চ্যাটার্জ্জী। তার দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ, সমীরণ রায়, মণিমালা মণ্ডল সহ অন্যান্যরা। সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রী তনয়া গোস্বামীর নৃত্য প্রদর্শন উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানে সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রী অঙ্কিতা, কোয়েল, অনন্যা, দিয়া, অর্ণব, রাজ প্রমুখরা উপস্থিত ছিল। এক প্রশ্নের উত্তরে দিয়া বলে – আজকের এই অনুষ্ঠান থেকে আমরা সিলেবাসের বাইরে সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এই ধরনের অনুষ্ঠান প্রতি বছর হলে খুব ভাল হয়। তার সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে অন্যান্যরা।
যাদের সহযোগিতার জন্য এই ধরনের একটি অনুষ্ঠানের সফল আয়োজন সম্ভব হয় তারা হলেন সংস্কত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সমীরণ রায়, ড. মণিমালা মণ্ডল, ইন্দ্রানী লাহা, রুমা রায়, অপর্ণা ঘোষ, রামকৃষ্ণ মৈত্র, সঞ্জয় জ্যোতি সহ সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ও মহাবিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপকরা। সবার উপরে ছিলেন অধ্যক্ষ ড. সুদীপ চ্যাটার্জ্জী। প্রযুক্তিগত সহযোগিতার দিকে হাত বাড়িয়ে দেন ব্রোজেন্দ্রনাথ অধিকারী। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধ্যাপিকা ড. মণিমালা মণ্ডল।
সংস্কৃত সাহিত্য পাঠ করলে একজন শিক্ষার্থী কীভাবে লাভবান হতে পারে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে সেই তথ্য তুলে ধরেন অধ্যক্ষ ড. চ্যাটার্জ্জী। তিনি ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ সহকারে সংস্কৃত ভাষা পাঠ করার পরামর্শ দেন। প্রসঙ্গত ড. চ্যাটার্জ্জী ছিলেন অনুষ্ঠানের সভাপতি।
জানা যাচ্ছে আগামী ৬ ই আগস্ট পর্যন্ত সংস্কৃত বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য স্তোস্ত্র পাঠ, কুইজ, সংস্কৃত প্রবন্ধ রচনা প্রতিযোগিতা, সংস্কৃত গানের উপর একক নৃত্য প্রতিযোগিতা, পোস্টার প্রতিযোগিতা সহ নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে । শেষ দিন সফল ছাত্রছাত্রীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে সংস্কৃত বিভাগের সৌজন্যে এক ভিন্ন স্বাদের অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যাবে।